নিউজ ডেস্ক: আজ ভয়াল ২১ আগস্ট। ইতিহাসের আরও একটি কলঙ্কময় দিন। ২০০৪ সালের এই দিনে বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে তৎকালীন বিরোধীদলীয় নেত্রী ও বর্তমানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে গ্রেনেড হামলা চালিয়ে হত্যার চেষ্টা চালানো হয়।
তবে ওই ঘটনায় বেঁচে যান শেখ হাসিনা। ন্যক্কারজনক ওই ঘটনায় প্রাণ হারান মরহুম রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমানের স্ত্রী ও মহিলা আওয়ামী লীগ নেত্রী আইভী রহমানসহ ২৪ জন। আহত হন ওই দিনের সমাবেশে আসা আরও শতাধিক নারী-পুরুষ। ওই সময় সরকারে ছিল বিএনপির নেতৃত্বাধীন চারদলীয় জোট। অভিযোগ রয়েছে, সরকারের শীর্ষ পর্যায়ের ইন্ধনে জঙ্গি সংগঠন হরকাতুল জিহাদ আল ইসলামী বাংলাদেশ (হুজি) ওই নারকীয় হত্যাযজ্ঞ চালায়। ওই ঘটনার পর জজ মিয়া নাটক সাজিয়ে ঘটনাটিকে ভিন্ন দিকে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করা হয়।
দশ বছরেও শেষ হয়নি মামলার বিচার। আর কবে নাগাদ শেষ হবে এই আলোচিত হত্যা মামলার বিচার, তা সুনির্দিষ্ট করে কেউ বলতে পারছে না। মামলার মোট সাক্ষী ৪৯৪ জন। অথচ গতকাল বুধবার পর্যন্ত মাত্র ৯৮ জনের সাক্ষ্য গ্রহণ শেষ হয়েছে। ৯৯তম সাক্ষী পুলিশ ইন্সপেক্টর মিজানুর রহমানের জেরা চলছে। মামলায় মোট আসামির সংখ্যা ৫২ জন। এদের মধ্যে ১৯ জন পলাতক, জামিনে রয়েছেন ৮ জন, কারাগারে রয়েছেন ২৫ জন। পুরানো ঢাকার নাজিমুদ্দিন রোডে কেন্দ্রীয় কারাগার সংলগ্ন এজলাসে ঢাকার ১ নম্বর দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার মামলার বিচার কাজ চলছে।
২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার ঘটনায় মতিঝিল থানায় পুলিশ বাদী হয়ে পৃথক দুইটি মামলা দায়ের করে। কিন্তু বিগত বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার ঘটনা ভিন্নখাতে প্রবাহিত করার চেষ্টা করে। হামলার দায় চাপানোর চেষ্টা করা হয় আওয়ামী লীগের উপর। সাজানো হয় জজ মিয়া নাটক। গ্রেফতার করা হয় আওয়ামী লীগ নেতা ও সাবেক ওয়ার্ড কমিশনার মোখলেছুর রহমান, ভবঘুরে যুবক জজ মিয়াসহ ২০ জনকে। এমনকি নষ্ট করা হয় গ্রেনেড হামলা মামলার আলামত। জজ মিয়া নাটক জানাজানি হবার পর বন্ধ হয়ে যায় মামলার কার্যক্রম। তবে ২০০৭ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে নতুন করে শুরু হয় মামলার কার্যক্রম।
মামলার তদন্তের দায়িত্ব পান সিআইডির সিনিয়র এএসপি ফজলুল কবির। তিনি ২০০৮ সালের ১১ জুন বিএনপি নেতা সাবেক উপমন্ত্রী আবদুস সালাম পিন্টু, তার ভাই মাওলানা তাজউদ্দিন, হরকাতুল জিহাদের (হুজি) নেতা মুফতি হান্নানসহ ২২ জনকে আসামি করে আদালতে চার্জশিট দাখিল করেন। এরপর ২০০৮ সালের ২৯ অক্টোবর থেকে ২০০৯ সালের ৯ জুন পর্যন্ত ট্রাইব্যুনাল ৬১ জনের সাক্ষ্য গ্রহণ করেন। তবে ওই চার্জশিটে গ্রেনেড হামলার ঘটনায় গ্রেনেড সংগ্রহ ও সরবরাহকারী, পরিকল্পনাকারী আসামিদের সনাক্ত ও অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি।
এ অবস্থায় রাষ্ট্রপক্ষের আবেদনের প্রেক্ষিতে ২০০৯ সালের ৩ আগস্ট ট্রাইব্যুনাল অধিকতর তদন্তের নির্দেশ দেন। মামলার তদন্তভার দেয়া হয় সিআইডির বিশেষ পুলিশ সুপার আব্দুল কাহার আকন্দকে। তিনি ২০১১ সালের ৩ জুলাই বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানসহ ৩০ জনের বিরুদ্ধে সম্পুরক চার্জশিট দাখিল করেন। আর ২০১২ সালের ১৮ মার্চ সম্পূরক চার্জশিটের ৩০ জন আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করে শুরু হয় বিচার কাজ।
৮ জনের জবানবন্দি: ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলায় আট জন আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। তারা হলেন- মুফতি হান্নান, শরীফ শাহেদুল আলম বিপুল, মাওলানা আবু সাঈদ ওরফে ডা. জাফর, মহিবুল্লাহ ওরফে মফিজুর রহমান ওরফে অভি, আবুল কালাম আজাদ ওরফে বুলবুল, জাহাঙ্গীর আলম, আরিফ হাসান সুমন ও রফিকুল ইসলাম সবুজ।
পলাতক রয়েছেন ১৯ জন: তারেক রহমান, হারিছ চৌধুরী, বিএনপির সাবেক সংসদ সদস্য কাজী শাহ মোয়াজ্জেম হোসেন কায়কোবাদ, হানিফ এন্টারপ্রাইজের মালিক মো. হানিফ, হাফেজ ইয়াহিয়া, মুফতি শফিকুর রহমান, মুফতি আবদুল হাই, রাতুল বাবু, ডিএমপির সাবেক ডিসি (পূর্ব) ওবায়দুর রহমান, ডিএমপির সাবেক ডিসি (দক্ষিণ) খান সাঈদ হাসান, লে. কর্নেল (অব.) সাইফুল ইসলাম জোয়ার্দার, মেজর (অব.) এ টি এম আমিন, মাওলানা তাজউদ্দিন (গ্রেনেড সরবরাহকারী দক্ষিণ আফ্রিকায়) ঝিনাইদহের ইকবাল, বরিশালের মাওলানা আবু বকর, মাগুরার খলিলুর রহমান, ঢাকার দোহারের জাহাঙ্গীর আলম ওরফে বদর ও গোপালগঞ্জের মাওলানা লিটন ওরফে জোবায়ের ওরফে দেলোয়ার। আর ভারতের তিহার কারাগারে আটক রয়েছেন হুজির সদস্য আনিসুল মোরসালিন ও মহিবুল মোত্তাকিন।
জামিনে রয়েছেন ৮ জন: পুলিশের সাবেক তিন মহাপরিদর্শক আশরাফুল হুদা, শহুদুল হক, খোদা বকস চৌধুরী, সিআইডির সাবেক তিন কর্মকর্তা রুহুল আমিন, মুন্সী আতিকুর রহমান, আবদুর রশিদ, খালেদা জিয়ার ভাগ্নে লে. কমান্ডার (অব.) সাইফুল ইসলাম ডিউক এবং ৫৩ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক বিএনপি নেতা কাউন্সিলর আরিফুর রহমান।
কারাগারে রয়েছেন ২৫ জন ঃ সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুত্ফুজ্জামান বাবর, সামরিক গোয়েন্দা অধিদফতরের সাবেক মহাপরিচালক রেজ্জাকুল হায়দার, জাতীয় নিরাপত্তা গোয়েন্দা সংস্থার সাবেক মহাপরিচালক আব্দুর রহিম, জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মুজাহিদ, মাওলানা ফরিদ, মুফতি আব্দুল হান্নান ওরফে সাব্বির, হুজির সাবেক আমির মাওলানা আবদুস সালাম, কাশ্মীরি জঙ্গি আব্দুল মাজেদ বাট, জঙ্গি আব্দুল মালেক ওরফে গোলাম মোস্তফা, মুফতি আবদুল হান্নান মুন্সী ওরফে আবুল কালাম ওরফে আবদুল মান্নান, মহিবুল্লাহ মফিজুর রহমান ওরফে অভি, শরিফ শাহেদুল আলম বিপুল, মাওলানা আবু সাঈদ ওরফে ডা. জাফর, আবুল কালাম আজাদ ওরফে বুলবুল, মো. জাহাঙ্গীর আলম, হাফেজ মাওলানা আবু তাহের, শাহাদাত উল্লাহ ওরফে জুয়েল, হোসাইন আহম্মেদ তামিম, মো. আবদুস সালাম পিন্টু, মঈন উদ্দিন শেখ ওরফে মুফতি মঈন ওরফে খাজা ওরফে আবু জান্দাল ওরফে মাসুম বিল্লাহ, রফিকুল ইসলাম ওরফে সবুজ ওরফে খালিদ সাইফুল্লাহ ওরফে শামিম ওরফে রাশেদ ও উজ্জল ওরফে রতন ও আরিফ হাসান ওরফে সুমন ওরফে আবদুর রাজ্জাক।