
আন্তর্জাতিক ডেস্ক: পাকিস্তানে সেনাপ্রধান জেনারেল রাহিল শরীফ খেলছেন প্রকাশ্যে, নেপথ্যে। তার দিকে আঙুল তুলেছেন প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফের ঘনিষ্ঠরা। তারা অভিযোগ করছেন, সরকারবিরোধী বিক্ষোভে মদত দিচ্ছেন জেনারেল রাহিল শরিফ। বিরোধীদের দিয়ে এই আন্দোলন করাচ্ছেন তিনি।
এর সঙ্গে নওয়াজ শরিফ বা তার ভাই শাহবাজ শরিফের কোন সম্পৃক্ততা নেই। কেউ কেউ মনে করছেন, বিরোধীদের রাজপথে নামিয়ে তার সুবিধা নিতে চায় সেনাবাহিনী। দৃশ্যপটে এখন চলে এসেছেনও তারা। এরই মধ্যে তারা সরকার ও বিরোধীদের মধ্যে সমঝোতার মধ্যস্থতায় নেমেছে।
এদিকে, ইসলামাবাদ থেকে উর্দু এবং ইংরেজি ভাষায় সম্প্রচারিত রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যম পাকিস্তানের টেলিভিশন (পিটিভি) কার্যালয়ে হামলা চালিয়েছে সরকার বিরোধী বিদ্রোহীরা। ফলে তাৎক্ষণিকভাবে টিভিটির সম্প্রচার বন্ধ রাখা হয়েছে। আসোমবার দেশটির অন্যান্য সংবাদ মাধ্যমগুলোর সরাসরি প্রচারিত ফুটেজে দেখানো হয়, এক দল বিদ্রোহী ভবনের প্রবেশ দ্বার ভেঙে ভেতরে গিয়ে আসবাবপত্র এবং যন্ত্রপাতি ভেঙে ফেলে।
আজ সেনাবাহিনীর কোর কমান্ডারদের এক বৈঠক তলব করেছেন জেনারেল রাহিল শরিফ। সেনাবাহিনীর অভ্যন্তরীণ কোন বিষয়ে নয়, দেশে সৃষ্ট রাজনৈতিক সঙ্কট কিভাবে সমাধান করা যায় বৈঠকের এজেন্ডা সেটাই। এর মাধ্যমে সেনাপ্রধান প্রকাশ্যে রাজনীতিতে হস্তক্ষেপ করেছেন। নির্বাচিত একটি সরকার থাকতে কেন সেনাবাহিনীকে এমন ভূমিকায় নামতে হলো তা নিয়ে এরই মধ্যে প্রশ্নের সৃষ্টি হয়েছে। এসব কারণে, সমালোচকরা বলছেন, রাজনৈতিক সঙ্কট যখন পাকিস্তানকে গ্রাস করছে তখন নওয়াজ শরিফের ভবিষ্যৎ নিয়ে সন্দিহান হয়ে উঠছেন বিশ্লেষকরা।
বাড়ছে সেনা শাসনের ঝুঁকি। ওদিকে বিক্ষোভের মুখে শুক্রবার ব্যক্তিগত স্টাফদের নিয়ে ইসলামাবাদের সরকারি বাসভবন ছেড়ে প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফ আশ্রয় নিয়েছিলেন করাচির বাড়িতে। গতকাল এ খবর চাউর হওয়ার পর পরই তিনি ফিরে এসেছেন ইসলামাবাদে। তার বিরুদ্ধে আরও মামলার হুমকি দিয়েছেন ইমরান খান। বলেছেন, তিনি ও তার মন্ত্রী চৌধুরী নিসার যাতে দেশ থেকে পালিয়ে যেতে না পারেন সে জন্য তাদের বিরুদ্ধে মামলা দেয়া হবে। নওয়াজ শরিফ দৃশ্যত অনেকটাই দুর্বল হয়ে পড়েছেন। কারণ, এরই মধ্যে তিনি রাজনৈতিক এ সমস্যা সমাধানের জন্য সেনাপ্রধানের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।
এর পরে সেনাবাহিনী তৎপর হয়ে উঠেছে। এর ফলে সেখানে নীরব অভ্যুত্থান ঘটে গেছে বলে মন্তব্য করছেন অনেকে। ১৯৪৭ সালে বৃটেনের কাছ থেকে স্বাধীনতা লাভের পর পাকিস্তানে গত সাত দশকে ঘটে গেছে বেশ কতগুলো সামরিক অভ্যুত্থান। ১৯৫৮ সালে এর শুরু। ১৯৪৯ সালে বেশ কতগুলো অভ্যুত্থান চেষ্টা ব্যর্থ হয়। এ দেশটি সেনা শাসনের অধীনে ছিল ১৯৫৮-১৯৭১, ১৯৭৭-১৯৮৮, ১৯৯৯-২০০৮ সাল পর্যন্ত।
পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী নেওয়াজ শরীফের পদত্যাগ দাবিতে গত ১৫ আগস্ট থেকে ইমরান খান এবং তাহির উল কাদরীর কয়েক হাজার সমর্থকরা আন্দোলন করে আসছে। রাজধানী ইসলামাবাদের রেড-জোনে পুলিশ ও বিক্ষোভকারীদের মধ্যে সংঘর্ষ অব্যাহত ছিল। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে সরকার ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পদক্ষেপের কড়া সমালোচনা করেছে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল। এ খবর দিয়েছে পাকিস্তান টুডে।