বুধবার, ২৩ এপ্রিল ২০২৫, ০৬:৩৬

জাতীয় বাঁশ উদ্যান ৭০০ লাগিয়ে বাঁচল ২০টি

জাতীয় বাঁশ উদ্যান ৭০০ লাগিয়ে বাঁচল ২০টি

ইয়াহইয়া মারুফ: প্রবেশ পথের প্রধান ফটকে সাইনবোর্ড জাতীয় বাঁশ উদ্যান (প্রস্তাবিত)। লেখা ৭০০টি চারা ২৩টি প্রজাতির বাঁশ। ভেতরে ঢুকলে মনে হয় সাইনবোর্ডটি যেন মিথ্যা। বাঁশ তো দূরের কথা যেন বাঁশের গন্ধও পাওয়া যাচ্ছেনা। ঘুরতে ঘুরতে মিলল ভাগ্যদোষে মরেও যেন মরছেনা এমন প্রায় ২০টি বাঁশের চারা।

আর চার দিকে চোখ মেলে তাকালেই মনে যেন ভূতের বাড়ি। গাছ-পালা আছে ঠিকই নেই যতœ। সৌন্দয্য মন্ডিত নানান স্থাপনাসহ সব কিছুই ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে। এ হচ্ছে জাতীয় বাঁশ উদ্যান। ২০১৩ সালে সিলেটে দেশের প্রথম বন বিভাগ কর্তৃক গড়ে তোলা প্রস্তাবিত জাতীয় বাঁশ উদ্যান।

গতকাল বৃহস্পতিবার দৈনিক সবুজ সিলেট থেকে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, জাতীয় করণ করার আগেই বন বিভাগের রক্ষণাবেক্ষনের অভাবে প্রায় ধ্বংস হয়েগেছে এ বাঁশ উদ্যানটি।

বন বিভাগ সুত্রে জানা যায়, ২০১৩ সালের ৬ জুন বাংলাদেশের প্রধান বন সংরক্ষক মো. ইউনুছ আলীর শুভ উদ্বোধনের মাধ্যমে দুর্লভ ও বিপন্ন দেশী-বিদেশী ২০ টি জাতের ৭০০ বাঁশ নিয়ে সিলেটে দেশের প্রথম জাতীয় বাঁশ উদ্যানের যাত্রা শুরু। ‘জীব-বৈচিত্র সংরক্ষণ ও ইকো-ট্যুরিজম উন্নয়ন’ প্রকল্পের আওতায় সিলেটের বিমানবন্দর এলাকায় ফরেস্ট্রী সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি ইনস্টিটিউটের (এফএসটিআই) চত্বরে টিলা ভূমিতে গড়ে তোলা হয় এ উদ্যানটি।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, বৃষ্টিপ্রবণ অঞ্চল হওয়ায় পরিবেশগত কারণে বাংলাদেশের মধ্যে সিলেটে একসময় বাঁশের উৎপাদন বেশি হতো। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে অতিপ্রয়োজনীয় এ বাঁশ উৎপাদন হ্রাস পেয়েছে আশঙ্কাজনক হারে। পরিবেশগত কারণে সিলেট বাঁশ চাষের জন্য খুবই উপযোগী। সিলেটে যত প্রজাতির বাঁশ রয়েছে, তা দেশের অন্য কোথাও নেই। তাই সিলেটে গড়ে তোলা হয় বাঁশ উদ্যান। ভবিষতে জাতীয় বাঁশ উদ্যান করার আশায় বাঁশের উৎপাদন বাড়ানো, বিলুপ্ত প্রায় বাঁশের প্রজাতি সংরক্ষণ ও সিলেটে আসা পর্যটকদের আকর্ষণ করতেই গড়ে তোলা হয় জাতীয় বাঁশ উদ্যান (প্রস্তাবিত)। এছাড়া এ উদ্যানটি একসময় উদ্ভিদ ও জীববিজ্ঞানের শিক্ষার্থীদের গবেষণাকাজে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে বলে মনে করে বন বিভাগ।

সূত্র আরো জানায়, অযতœ-অবহেলায় দুই বছরেই অস্তিত্ব সংকটে পড়েছে উদ্যানটি। সরেজমিনে দেখা যায়, সিলেট বিমানবন্দর সড়কের পাশে পর্যটন মোটেলের বিপরীতে ৩০ একর জায়গায় বন বিভাগের ফরেস্ট্রী সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি ইনস্টিটিউট। সুবিশাল এ ইনস্টিটিউটের পরিত্যক্ত দুটি টিলা ও সমতল ভূমির ১.৪১৭ হেক্টর জমি নিয়ে গড়ে তোলা হয়েছে বাঁশ উদ্যান। প্রবেশ পথের প্রধান ফটকে জাতীয় বাঁশ উদ্যানের নাম সংবলিত সাইনবোর্ডে বাঁশের জাত, নাম ও উদ্যানের তথ্যাদি উপস্থাপন করা হয়েছে। সাইনবোর্ডের মধ্যে ২৩ প্রজাতি বাঁশের নামও রয়েছে। কিন্তু নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক বন কর্মকর্তা জানান, সাইনবোর্ডে ২৩ প্রজাতির কথা লেখাটা মিথ্যা, মূলত এখানে ৭০হাজার ৪শ ৭৬ টাকা ব্যয়ে ২০টি প্রজাতির চারা লাগানো হয়েছিল। সাইনবোর্ড দেখে প্রতিদিন পর্যটকরা সেখানে যাচ্ছেন। কিন্তু ভেতরে প্রবেশের পর হতাশ হয়ে ফিরে আসতে হচ্ছে তাদের। উদ্যানের প্রায় সব বাঁশের চারাই মরে গেছে। ৭০০ চারার মধ্যে এখন ২০টিও টিকে নেই। কলসি, পেঁচা, রুপাহি, টেঙ্গা, জাই, মূলী, থাই বরুয়া, কাঁটা বরুয়া, পলি মরকা, কঞ্চি, বুদুম, কালী, সোনালি, ডলু, মাকাল, মৃতিঙ্গা, তেঁতুয়া, ওড়া, বেতুয়া, পরুয়া, বরুয়া, বোতম, রঙ্গন, পারুয়া মোট ২৩ প্রজাতির মধ্যে একটি প্রজাতির বাঁশও এখন নেই উদ্যানে।

উদ্যানটি দেখতে আসা এমসি কলেজের শিক্ষার্থী জিসান ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, যেভাবে ঢাক-ঢোল পিটিয়ে দেশবাসীকে জানিয়ে উদ্যানটি তৈরি করা হয়েছিল, সেভাবে রক্ষণাবেক্ষণে আন্তরিক না হওয়ায় উদ্যানটির অস্তিত্ব এখন ধ্বংস প্রায়। ওই এলাকার বাসিন্দা গাড়িচালক সিরাজ মিয়া জানান, এ বাঁশ উদ্যানটি দেশের জন্য বড় একটি উদাহরণ হতে পারত। বাঁশের প্রজাতি সংরক্ষণ, নতুন প্রজাতি উদ্ভাবনেও এটি ভূমিকা রাখতে পারত। অথচ বন বিভাগের অবহেলার কারণে উদ্যানের এখন ধ্বংস হয়ে গেছেই বলা যায়। তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, সপ্তাহে তো দূরের কথা বন বিভাগের কর্মকর্তাদের মাসে একদিনও দেখা যায়না।

কর্মকর্তাদের অযতœ-অবহেলার কথা শিকার করে সিলেট বিভাগীয় বন কর্মকর্তা দেলোয়ার হোসেন সবুজ সিলেটকে বলেন, বৈশাখ ও জ্যৈষ্ঠ মাসে বাঁশ ভালো হয়। নির্দিষ্ট সময়ে চারা রোপণ না করলে সেটি টিকিয়ে রাখা কষ্টকর হয়ে পড়ে। তা ছাড়া সব ধরনের বাঁশ সব জায়গায় হয় না, লাগানোর সময় মাটি পরীক্ষা-নিরীক্ষা করারও প্রয়োজন ছিল । যেমনটি হয়েছে এ উদ্যানের ক্ষেত্রেও। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, যখন উদ্যানটি করা হয়, তখন আমি সিলেট বন বিভাগের দায়িত্বে ছিলাম না। ফলে বাঁশ উদ্যানের ব্যাপারে সবকিছু আমি জানিও না। যেহেতু আমরা সফলতা অর্জন করতে পারি নাই, তাই এটি এখানে আর হবেনা। আমরা অন্য কোন স্থানে বাঁশ উদ্যানটি করা যায় কি না-দেখব।




Comments are closed.



পুরানো সংবাদ সংগ্রহ

সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি রবি
 
১০১১১২১৩
১৪১৫১৬১৭১৮১৯২০
২১২২২৩২৪২৫২৬২৭
২৮২৯৩০  
All rights reserved © shirshobindu.com 2012-2025