সাজেদুল হক: একটি মুলতবি প্রস্তাব। বিষয় নির্বাচনকালীন সরকার ব্যবস্থা নিয়ে আলোচনা। প্রস্তাবক বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন। যে প্রস্তাবটি ৩রা জুন সংসদ অধিবেশন শুরুর আগে আগেই প্রত্যাহার করে নেন এই সংসদ সদস্য। এরপর থেকে তোলপাড় চারদিকে। ঘরে-বাইরে আলোচনার ঝড়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, প্রস্তাব প্রত্যাহার করে বিরোধী দল আলোচনার পথ বন্ধ করে দিচ্ছে।
অন্যদিকে, বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার রফিকুল ইসলাম মিয়ার দাবি, সরকারের পাতা ফাঁদে পা দেয়নি বিএনপি। এ ব্যাপারে মানবজমিন-এর সঙ্গে আলাপকালে নিজের অবস্থান ব্যাখ্যা করেছেন ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন। তিনি বলেন, আমি অনেক বিষয়েই মুলতবি প্রস্তাব দিয়েছি। যখন আমরা সংসদে ছিলাম না তখনও মুলতবি প্রস্তাব দিয়েছিলাম। এবারের মুলতবি প্রস্তাবের মধ্যে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিষয়টিও অন্তর্ভুক্ত ছিল। আমরা তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতেই আন্দোলন-সংগ্রাম করছি। এজন্য তত্ত্বাবধায়ক সরকার নিয়ে ৬২ বিধিতে আলোচনার প্রস্তাব দিয়েছিলাম।
ব্যারিস্টার খোকন বলেন, যারা বলছেন, ৬২ বিধিতে ভোট হয় তারা ঠিক বলছেন না। স্পিকার যদি প্রস্তাব আলোচনার জন্য না দেন, সেক্ষেত্রে আলোচনা হবে কিনা তা নিয়ে ভোটাভুটি হয়। কিন্তু প্রস্তাব গ্রহণ করা হবে কিনা এ নিয়ে ভোটাভুটির কোন সুযোগ নেই। তত্ত্বাবধায়ক সরকার নিয়ে আনা প্রস্তাব গ্রহণ করা হবে কিনা তা নিয়েও ভোটাভুটির কোন সুযোগ ছিল না। ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন বলেন, বর্তমান সংসদে এ পর্যন্ত বিরোধী দলের সংসদ সদস্যরা ৮৬১টি মুলতবি প্রস্তাব দিয়েছেন। এর একটিও গ্রহণ করা হয়নি। এবার সংসদের অধিবেশন যেদিন শুরু হয় সেদিন সকালে সরকারি দলের এক সভায় আমার আনা প্রস্তাব গ্রহণের সিদ্ধান্ত হয়। পরে আমাদের সংসদীয় দলের সভায় আলোচনা করে কৌশলগত কারণে আমি আমার প্রস্তাব প্রত্যাহার করে নিই। মুলতবি প্রস্তাব দেয়ার আগে দলীয় ফোরামে বা সংসদীয় দলের সভায় কোন আলোচনা হয়নি বলে জানান ব্যারিস্টার খোকন। খোকনের আলোচিত মুলতবি প্রস্তাব নিয়ে দলের ভেতরেই নানা প্রশ্ন। কেউ কেউ সন্দেহের চোখেই দেখছেন। একই ইস্যুতে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার রফিকুল ইসলাম মিয়ার মত অবশ্য আলাদা। গতকালই মানবজমিন-এর সঙ্গে আলাপকালে সাবেক এই মন্ত্রী বলেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকার নিয়ে মুলতবি প্রস্তাব জমা দেয়া নিয়ে বিএনপিতে কোন আলোচনা হয়েছে কিনা আমার জানা নেই। তবে প্রস্তাবটি জমা দেয়ার পর বিরোধী দলের সংসদীয় দলের সভায় এ নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়। যে সভায় বিরোধীদলীয় নেত্রী বেগম খালেদা জিয়া সভাপতিত্ব করেন। পরে প্রস্তাবটি প্রত্যাহার করা হয়।
ব্যারিস্টার রফিকুল ইসলাম মিয়া বলেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে অনেক দিন থেকেই আমরা আন্দোলন-সংগ্রাম করে আসছি। দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ এ দাবির পক্ষে রয়েছেন। বর্তমান সংসদে বিরোধী দলের আসন সংখ্যা একেবারেই কম। সংসদে মুলতবি প্রস্তাবটি নিয়ে যদি আলোচনা হতো তবে সরকারি দল তাদের বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠতার জোরে ভোটাভুটিতে তা নাকচ করে দিতো। তখন সরকার এটা প্রচারণার সুযোগ পেতো যে, যেহেতু সংসদের বেশির ভাগ সদস্য তত্ত্বাবধায়ক পদ্ধতির বিরুদ্ধে ভোট দিয়েছে তাই সরকারের কিছুই করার নেই। বিএনপি সরকারের এ পাতা ফাঁদে পা দেয়নি। তত্ত্বাবধায়ক সরকার নিয়ে সরকারি দলের নেতাদের বিভিন্ন বক্তব্যেরও সমালোচনা করেন বিএনপির প্রবীণ এ রাজনীতিবিদ। তিনি বলেন, সরকারি দলের নেতারা শঠতার আশ্রয় নিচ্ছেন। তত্ত্বাবধায়ক সরকার নিয়ে আলোচনায় তাদের কোন আন্তরিকতা নেই।
Leave a Reply