মিজানুর রহমান: তখন সন্ধ্যা হয়নি। সিলেট সার্কিট হাউজের বাইরে বেশ গাড়ির জটলা। পুলিশের দু’টি গাড়িও পার্ক করা। জেলা নির্বাচন কর্মকর্তাসহ নির্বাচন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা পায়চারি করছেন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেল, সিটি নির্বাচনের পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণে সিলেট সফরে এসেছেন নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) জাবেদ আলী। কাছাকাছি সময়ে এসেছেন সাবেক মন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম। দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলাপে জানা যায়, দোতলার ২০৪ নম্বর কক্ষে নির্বাচন কমিশনার আর তেতলার ৩০১ নম্বর কক্ষে উঠেছেন আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য মোহাম্মদ নাসিম।
দুই ভিআইপির আগমনকে ঘিরেই যান ও মানুষের এ ভিড়। সিঁড়িতে ওঠার মুহূর্তে দেখা গেল স্থানীয় সংসদ সদস্য মাহমুদ উস সামাদ চৌধুরী কয়েস বেরিয়ে যাচ্ছেন। তার সঙ্গে আরও ক’জন। লিফটে তৃতীয় তলায় পৌঁছতেই দেখা মিলে সিলেটস্থ হবিগঞ্জ সমিতি ও হবিগঞ্জ আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দের সঙ্গে। ৩০১ নম্বর ‘দোয়েল’ নামের ভিআইপি কক্ষ লাগোয়া ছোট্ট কক্ষে বসা ছিলেন হবিগঞ্জের সংসদ সদস্য এডভোকেট আবু জাহির। তাকে ঘিরে ছিলেন এলাকার সিলেটে বসবাসকারী কর্মীরা। হবিগঞ্জের নেতাকর্মীরা মোহাম্মদ নাসিমের সঙ্গে সঙ্গে হাত মিলিয়ে একে একে বিদায় নেন। সাংবাদিক পরিচয়ে দেখা করতে চাইলে সাড়া দেন নাসিম। কক্ষে প্রবেশের পর নির্বাচনী মাঠের অবস্থা জানতে চাইলেন।
জবাব দেয়ার আগেই সেখানে উপস্থিত কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগ নেতা সুজিত রায় নন্দী জানালেন, পূজা ঐক্য পরিষদের নেতাদের আমন্ত্রণ করা হয়েছে। তারা আসবেন কয়েক মিনিটের মধ্যে। হরতালের খবরও দিলেন। মেয়র পদপ্রার্থী বদর উদ্দিন আহমদ কামরানের পক্ষে প্রচারণায় অংশ নিতে ব্যক্তিগত গাড়িতে চড়ে সিলেটে এসেছেন তিনি। এভাবেই ফেরার পরিকল্পনা ছিল, কিন্তু হরতাল সব উলটপালট করে দিয়েছে। গাড়ি ছেড়ে দিয়ে বিমানে ফেরার চিন্তাও ততক্ষণে মাথায় এসে গেছে। সিলেট থেকে ফেরার জন্য কি কি ফ্লাইট আছে তা খোঁজ নিতে বললেন। প্রতিবেদকের সঙ্গে আলোচনায় চার সিটি করপোরেশন নিয়েই কথা হয়। নাসিম তার বিভিন্ন সফরের অভিজ্ঞতা জানালেন। ক্ষমতার শেষ সময়ে কর্মীরা কিভাবে গোঁ ধরে, তাদের মাঠে নামাতে বেগ পেতে হয় ইত্যাদি অনেক প্রসঙ্গই আসে আলোচনায়। সিলেটের খোঁজখবর কি পেয়েছেন জানতে চাইলে নাসিম বলেন, এখানেও একই অবস্থা। নেতারা নেমেছেন। কর্মীরা এখনও নামেনি।
জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শফিকুর রহমান চৌধুরীর সঙ্গে কথা হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, এখানেও সব নামবে। ক্ষমতার শেষ সময় হওয়ায় অনেকেই কি পেলো না পেলো সেই হিসাব করে। শহরে এ হিসাব বেশি হয়। গ্রামে এগুলো নেই। নাসিম দাবি করেন, ওই ভয়ে অফার দেয়ার পরও সিরাজগঞ্জ শহর থেকে তিনি নির্বাচন করার সাহস দেখাননি। বলেন, আমার কাজীপুরই ভাল। ওই এলাকার মানুষ মনে করে নাসিম না থাকলে তারাও থাকবে না। তারা আমাকে ভোট দেয়, এবার আমার ছেলেকেও পাস করিয়েছে। নির্বাচনের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে কথা হচ্ছিল। এমন সময় সেখানে আসেন পূজা পরিষদের নেতা অসিত চ্যাটার্জি। কক্ষের সদর দরজায় তাদের স্বাগত জানান সুজিত রায় নন্দী। সঙ্গে আরেক জন। চেয়ার না থাকায় বিছানায় বসার অনুরোধ করলেন নাসিম। পরিচয় পর্ব শেষ হওয়ার পর মাইনরিটি ভোটার নিয়ে আলোচনা শুরু হয়। ৬১ হাজার ভোট আছে জানিয়ে পূজা পরিষদ নেতা বলেন, দুশ্চিন্তা করবেন না, শতভাগ ভোটই আসবে। অর্থমন্ত্রীর কর্মসূচি বাতিল, তবে আসছেন ১৪ই জুন।
নির্বাচনের আগের দিন। ওই দিনে সদর উপজেলার জালালাবাদ ইউনিয়নের বিদ্যুৎ সংযোগের উদ্বোধন হওয়ার কথা অর্থমন্ত্রীর। অনেক আগের দেয়া প্রোগ্রামের আয়োজনও চলছিল। নির্বাচনের কারণে কর্মীদের চাপে গতকাল তা স্থগিত করা হয়েছে। তবে, অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের ঘনিষ্ঠজন বলে পরিচিত সদর উপজেলা চেয়ারম্যান আশফাক আহমদ জানিয়েছেন, কর্মসূচি বাতিল হলেও ওই দিনে অর্থমন্ত্রী সিলেট সফর করবেন।
সৌজন্য: মানবজমিন
Leave a Reply