বুধবার, ২১ মে ২০২৫, ০৭:১৭

শপথ নিলেন মিয়ানমারে প্রথম বেসামরিক প্রেসিডেন্ট

শপথ নিলেন মিয়ানমারে প্রথম বেসামরিক প্রেসিডেন্ট

শীর্ষবিন্দু আন্তর্জাতিক নিউজ: অর্ধশতক পর মিয়ানমারের প্রথম বেসামরিক প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নিয়েছেন থিন কিয়াও, যিনি কার্যত গণতন্ত্রপন্থি নেতা অং সান সু চির ছায়া হয়ে দেশ শাসন করবেন। ন্যাশনাল লিগ ফর ডেমোক্রেসির (এনএলডি) নেতা থিন কিয়াও মিয়ানমারের শীর্ষ পদে থিন সিয়েনের স্থলাভিষিক্ত হলেন।

থিন সিয়েনের অধীনে গত পাঁচ বছরেই ব্যাপক সংস্কারের মধ্য দিয়ে মিয়ানমারের গণতন্ত্রে প্রত্যাবর্তনের পথ প্রশস্ত হয়। প্রেসিডেন্টের পাশাপাশি ভাইস প্রেসিডেন্ট হেনরি ভ্যান থিও ও মিন্ট সুয়েও এদিন শপথ নিয়েছেন। তারা দুজনই প্রেসিডেন্ট পদে ভোটাভুটিতে থিন কিয়াওয়ের কাছে হেরেছিলেন।

শপথ নিয়েছেন মন্ত্রিসভার সদস্যরা। তাদের অধিকাংশই সু চির দল এনএলডির সদস্য। এ তালিকায় সু চির নামও রয়েছে। পররাষ্ট্র, প্রেসিডেন্টের দপ্তর, শিক্ষা, জ্বালানি ও বিদ্যুৎ মন্ত্রণালয় সামলাবেন তিনি। তবে প্রতিরক্ষা, স্বরাষ্ট্র ও সীমান্ত বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে থাকছেন সেনাবাহিনী মনোনীতরা।

বিবিসির এক প্রতিবেদনে বলা হয়, সামরিক জান্তা আমলে তৈরি সাংবিধানিক বাধার কারণে স্বামী, সন্তান বিদেশি নাগরিক হওয়ায় প্রেসিডেন্ট পদের প্রার্থী হতে পারেননি নোবেল বিজয়ী সু চি। এ কারণে তার স্কুল জীবনের বন্ধু এবং দীর্ঘদিনের রাজনৈতিক সহযোগী থিন কিয়াওকেই প্রেসিডেন্ট পদে মনোয়ন দেয় এনএলডি। গত ১৫ মার্চ পার্লামেন্টে ভোটাভুটিতে তিনি নির্বাচিত হন।

গেল বছর ৮ নভেম্বরের জাতীয় নির্বাচনে সু চির দল ন্যাশনাল লিগ ফর ডেমোক্রেসি (এনএলডি) নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা পায়, যার মাধ্যমে দীর্ঘ সেনা শাসনের ইতিহাস পেরিয়ে এক যুগসন্ধিক্ষণে পৌঁছায় মিয়ানমার।

নির্বাচনে জয়লাভ করার পরই সু চি ঘোষণা করেছিলেন, তিনি প্রেসিডেন্টের উপরে থেকে দেশ পরিচালনা করবেন। ১৯৪৬ সালে জন্ম নেওয়া থিন কিয়াওয়ের বাবা খ্যাতিমান কবি ও লেখক মিন থু উন নিজেও এনএলডি’র সক্রিয় কর্মী ছিলেন। ১৯৯০ সালে এনএলডির হয়ে ইয়াঙ্গুনের কামারিউত টাউনশিপের এমপি নির্বাচিত হন।

ইয়াঙ্গুন ইনস্টিটিউট অব ইকোনমিকস থেকে ১৯৬৮ সালে এমবিএ ডিগ্রি নেন থিন কিয়াও। পরে যুক্তরাজ্যের ইউনিভার্সিটি অব লন্ডন থেকে কম্পিউটার সায়েন্সে উচ্চতর ডিগ্রি নেন তিনি। ১৯৭৫ সালে মিয়ানমারের সিভিল সার্ভিসে যোগ দেন থিন কিয়াও। ১৯৮০ সাল থেকে বৈদেশিক অর্থনীতি বিভাগে কর্মরত ছিলেন তিনি। ১৯৯০ সালের নির্বাচনে জয়ী এনএলডি’র হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর না করায় দুই বছর চাকরি থেকে ইস্তফা দিয়ে রাজনীতির ময়দানে আসেন থিন কিয়াও।

তার স্ত্রী সু সু লুইন এনএলডির কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য। তিনিও বর্তমানের পার্লামেন্ট সদস্য। যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরেজিতে স্নাতকোত্তর করেন সু সু লুইন। ১৩ বছর ইয়াঙ্গুন বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়িয়েছেন তিনি। এই দম্পতির কোনো সন্তান নেই। থিন কিয়াওয়ের শ্বশুর উ লুইন এনএলডি’র প্রতিষ্ঠাতাদের একজন এবং বিভিন্ন সময় দলের শীর্ষ পর্যায়ে দায়িত্ব পালন করেছেন।

শ্বশুরের সঙ্গে এনএলডি অফিসে নিয়মিত যাতায়াত ছিল থিন কিয়াওয়ের। ১৯৯৫ সাল থেকে দলের কূটনীতি ও আন্তর্জাতিক বিষয়ক উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন তিনি। কিয়াওকে দুই দশক ধরে কাছ থেকে দেখেছেন এনএলডির সাবেক শীর্ষ পর্যায়ের নেতা উ জ মিন। নতুন প্রেসিডেন্ট খুবই সহজ সরল প্রকৃতির মানুষ বলে মন্তব্য তার। আমি তাকে কখনোই রাগতে দেখিনি, মিয়ানমার টাইমসকে বলেন তিনি।

২০০৪ সালে এনএলডি ছেড়ে আসা উ জ মিন বলেন, থিন কিয়াও তার বাবার মতোই একনিষ্ঠ পাঠক ও সুলেখক। দালাবান ছদ্মনামে কিয়াওয়ের একাধিক গল্প ও নিবন্ধ আছে তার। মিয়ানমার টাইমসের তথ্য অনুযায়ী, থিন কিয়াও ও অং সান সু চি ইয়াঙ্গুনের মেথডিস্ট ইংলিশ হাই স্কুলে পড়েছেন। স্কুলে সু চি কিয়াওয়ের এক বছর সিনিয়র ছিলেন।

১৯৯২ সালে সরকারি চাকরি ছেড়ে রাজনীতিতে আসা কিয়াওকে সু চি’র অন্যতম ঘনিষ্ঠ হিসেবেই বিবেচনা করা হয়। সু চির মায়ের নামে করা খিন চি দাতব্য সংস্থার পরিচালকের দায়িত্ব পালন করছিলেন কিয়াও। গৃহবন্দি থাকাকালে সু চির সঙ্গে বহির্বিশ্বের যোগাযোগের অন্যতম মাধ্যম ছিলেন কিয়াও। ২০০০ সালে সু চির সঙ্গে সেন্ট্রাল বার্মিজ শহর মান্দাল সফর করেন তিনি। ওই সময় সু চিকে আংশিক মুক্তি দিয়েছিল জান্তা সরকার। মাঝে মাঝে সুচির গাড়িচালক হিসেবেও তাকে দেখা গিয়েছিল বলে বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে।

থিন কিয়াও জেলও খেটেছেন। রেল স্টেশনে এক সামরিক কর্মকর্তার সঙ্গে ধস্তাধস্তির অভিযোগে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। ওই অভিযোগে চার মাস ইয়াঙ্গুনের কুখ্যাত ইনসেন কারাগারে কাটাতে হয়েছিল তাকে।




Comments are closed.



পুরানো সংবাদ সংগ্রহ

সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি রবি
 
১০১১
১২১৩১৪১৫১৬১৭১৮
১৯২০২১২২২৩২৪২৫
২৬২৭২৮২৯৩০৩১  
All rights reserved © shirshobindu.com 2012-2025