শুক্রবার, ১৬ মে ২০২৫, ০৫:০৬

ফিলিপাইনের উচিত বাংলাদেশের টাকা এখনই ফেরত দেয়া

ফিলিপাইনের উচিত বাংলাদেশের টাকা এখনই ফেরত দেয়া

আন্তর্জাতিক নিউজ ডেস্ক: বিশ্বব্যাপী প্রচারণা পাওয়া ৮১ মিলিয়ন ডলার পাচারের ঘটনাটি ফিলিপাইনের জন্য আন্তর্জাতিকভাবে ছিল যথেষ্ট বিব্রতকর। অন্তত এখন সরকার যতটুকু করতে পারে তা হলো, আইনি প্রক্রিয়া মোতাবেক যত দ্রুত সম্ভব বাংলাদেশকে ওই অর্থ ফেরত দেয়া। ফিলিপাইনের অন্যতম শীর্ষ পত্রিকা ফিলিপাইন ডেইলি এনকোয়ারের সম্পাদকীয়তে এমন মন্তব্য করা হয়েছে।

রিটার্ন দ্য মানি নাও শিরোনামের সম্পাদকীয়টি প্রকাশিত হয় ২৫শে এপ্রিল। এতে বলা হয়, বাংলাদেশ ইতিমধ্যে উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেছে যে, তাদের কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে চুরি হওয়া অর্থ ফেরত পেতে দেরি হতে পারে। এ অর্থ ফিলিপাইনের আরসিবিসি ব্যাংক ও মুদ্রা বিনিময় প্রতিষ্ঠান ফিলরেম হয়ে ঢুকেছে দেশটির ক্যাসিনো খাতে।

রাষ্ট্রদূত জন গোমেজ ইনকোয়ারকে তার আশার কথা জানিয়ে বলেন, এপ্রিল বা মে মাসের মধ্যে বা পরবর্তী প্রেসিডেন্ট ক্ষমতায় আসার আগেই এ অর্থ ফেরত পাঠানো সম্ভব হতে পারে। তিনি বিশেষভাবে উদ্বিগ্ন ছিলেন অর্থ ফেরতের দীর্ঘসূত্রতা নিয়ে, যা হয়তো এড়ানো সম্ভব ছিল। এ ধরনের বাজেয়াপ্তকরণের মামলায় আইনি দীর্ঘসূত্রতা অনেক বেশি।

বিদ্যমান আইন অনুযায়ী, অর্থপাচার বিরোধী পরিষদকে (এএমএলসি) একটি দেওয়ানি বাজেয়াপ্তকরণের মামলা দায়ের করতে হবে। এরপর আদালতের নির্দেশ পেতে হবে। তারপরই বাংলাদেশের কাছে হস্তান্তর করা যাবে উদ্ধারকৃত অর্থ। অপরদিকে বাংলাদেশ সরকারকে এ মামলায় আনুষ্ঠানিকভাবে অর্থের মালিকানা দাবি করতে হবে। এরপরই আদালত এ অর্থ বাংলাদেশকে ফেরত দেয়ার নির্দেশ দেবে।

অন্যথায়, এ অর্থ ফিলিপাইনের সমপদ হিসেবে ঘোষিত হবে। রাষ্ট্রদূত গোমেজ বলেন, বাংলাদেশ সরকারের পক্ষে ফিলিপাইনে বাংলাদেশ দূতাবাস নথিপত্র দাখিল করছে। এতে করে উদ্ধারকৃত ও হস্তান্তরকৃত অর্থ এবং যেসব অর্থ এখনও ফিলিপাইনে রয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে, সেসব অর্থের মালিকানা আনুষ্ঠানিকভাবে দাবি করবে বাংলাদেশ।

১৮ই এপ্রিল, ক্যাসিনো জাঙ্কেট অপারেটর কাম সিং ওং, তার মালিকানাধীন ইস্টার্ন হাওয়াই লেইজার কো., সেঞ্চুরিটেক্স ট্রেডিং, আরসিবিসি ব্যাংক ও ফিলিপাইন ন্যাশনাল ব্যাংকের বিরুদ্ধে দেওয়ানি বাজেয়াপ্তকরণ মামলার জন্য পিটিশন দাখিল করেছে এএমএলসি। এখন পর্যন্ত, আদালত শুধুমাত্র উদ্ধারকৃত অর্থ সংরক্ষিত করার নির্দেশ দিয়েছে কর্তৃপক্ষকে।

ম্যানিলা রিজিয়নাল ট্রায়াল কোর্টের বিচারক রেনাল্ডো এ. আলহামব্রা এ মামলায় ২রা মে সংক্ষিপ্ত শুনানির আদেশ দিয়েছেন। আমরা বুঝতে পারছি না, কেন আদালত আরও আগে তারিখ দিতে পারছে না। কারণ, এএমএলসি পরিষ্কারভাবে জানিয়েছে যে, হ্যাকিং বা ক্রাকিং সহ অবৈধ কর্মকাণ্ড জড়িত আছে এ অর্থের সঙ্গে। এ ছাড়া এ মামলার মালিকানা নিয়ে কোনো বিরোধ নেই।

এখন পর্যন্ত আদালত যেসব অর্থ বাজেয়াপ্ত করেছেন, তার মধ্যে রয়েছে ওং-এর অ্যাকাউন্টের ৪৪ লাখ ৬০ হাজার পেসো, ইস্টার্ন হাওয়াই লেইজারের অ্যাকাউন্টের ৫৭ লাখ ৪০ হাজার পেসো, সেঞ্চুরিটেক্স ট্রেডিং-এর আরসিবিসি ব্যাংকের অ্যাকাউন্টে ১৯৯৮৩ পেসো। এ ছাড়া ব্যবসায়ী কিম ওং জিম্মায় রাখার জন্য এএমএলসির কাছে জমা দিয়েছেন ৪৬ লাখ ৩০ হাজার ডলার ও ৩ কোটি ৮২ লাখ পেসো।

গত সোমবার, ইস্টার্ন হাওয়াই লেইজার এএমএলসির কাছে জমা দিয়েছে আরও ২০ কোটি পেসো। ওং আরও ২৫ কোটি পেসো ফেরত দিতে পারেন। সোলায়ার রিসোর্ট ও ক্যাসিনো ম্যানিলা বাজেয়াপ্ত করেছে ১০ কোটি ৭০ লাখ পেসো ও ১৩ লাখ ৫০ হাজার পেসো। সোলায়ার জানিয়েছে, তারা আদালতের নির্দেশ পেলেই এ অর্থ ফেরত দেবে। সে হিসেবে ৮১ মিলিয়ন ডলারের মধ্যে মাত্র ১৭ মিলিয়ন ডলারের কোনো খোঁজ এখনও পাওয়া যায়নি।

একটি সিনেট শুনানিতে, কিম ওং সন্দেহ প্রকাশ করে জানিয়েছিলেন যে, এ অর্থ আছে ফিলরেমের কাছে। মুদ্রা বিনিময় প্রতিষ্ঠান ফিলরেম অবশ্য এ অভিযোগ অস্বীকার করেছে। সমপাদকীয়তে বলা হয়, এ কেলেঙ্কারি আরও ভয়াবহ আরেকটি কারণে। টাকা চুরি হয়েছে একটি দরিদ্র্য দেশ থেকে, যে দেশের জনগণের উন্নতির জন্য প্রতিটি ডলার প্রয়োজন। রাষ্ট্রদূত গোমেজ বলেন, এ অর্থ হয়তো বাংলাদেশের অবকাঠামো উন্নয়নের জন্য, গ্রামের নারীদের উন্নয়নে বা শিশুদের শিক্ষায় কাজে লাগবে।

এ অর্থ উপার্জন করেছে বাংলাদেশের কর্মজীবী মানুষ। এ সময় তিনি বাংলাদেশের রপ্তানিমুখী গার্মেন্ট শিল্পে কর্মরত ৫০ লাখ শ্রমিকের কথা উল্লেখ করেন। উল্লেখ করেন বিদেশে শ্রমিক হিসেবে কর্মরত ৮০ লাখ বাংলাদেশির কথা। তারা দেশে টাকা পাঠান। এ ছাড়া চাল, আলু ও মাছ রপ্তানি থেকে অর্জিত বৈদেশিক মুদ্রার কথাও উল্লেখ করেন রাষ্ট্রদূত গোমেজ।

এ ঘটনায় জড়িত বিভিন্ন পক্ষ, যেমন বিভিন্ন ক্যাসিনো ও ফিলরেমের কাছে, তাদের কাছে থাকা টাকা ফেরত দিতে কেবল আহ্বানই জানাতে পারেন বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত গোমেজ। অপরদিকে এ বাজেয়াপ্তকরণ মামলা দীর্ঘায়িত করার কোনো কারণই নেই ফিলিপাইনের জন্য। আদালত এ মামলাটি সংক্ষেপিত করে হস্তান্তরের আদেশ দিতে পারেন। কেননা, অর্থের মালিকানা দাবি করার মতো কেউ নেই।

সমপাদকীয়তে উপসংহার টানা হয় এই বলে যে, ফিলিপাইন কীভাবে এ সাইবার চুরির ঘটনা মোকাবিলা করে তার দিকে নজর রাখছে বিশ্ব সমপ্রদায়। নিজেদের বিচারপ্রক্রিয়ার দীর্ঘসূত্রতার দেখানোর সময় এখন নয়।




Comments are closed.



পুরানো সংবাদ সংগ্রহ

সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি রবি
 
১০১১
১২১৩১৪১৫১৬১৭১৮
১৯২০২১২২২৩২৪২৫
২৬২৭২৮২৯৩০৩১  
All rights reserved © shirshobindu.com 2012-2025