শীর্ষবিন্দু আন্তর্জাতিক নিউজ ডেস্ক: যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়া অঙ্গরাজ্যের সান হোসে শহরে বাংলাদেশি দম্পতি খুন হওয়ার ঘটনায় গোলাম রাব্বি ও শামীমা রাব্বির বড় ছেলেকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। একই ঘটনার দোষী সন্দেহে তাঁদের দ্বিতীয় ছেলেকেও গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
গোলাম রাব্বি ও শামীমা রাব্বি দম্পতির ১৭ বছর বয়সী ছোট ছেলেকে গতকাল বৃহস্পতিবার গ্রেপ্তার করে পুলিশ। খুনের দুইদিন পর রাব্বি দম্পতির ছোট ছেলের সন্ধান পায় পুলিশ। তার দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে বড় ছেলে হাসিব রাব্বিকে (২১) বুধবার সন্ধ্যায় ট্র্যাসি এলাকা থেকে গ্রেফতার করে পুলিশ।
স্থানীয় গণমাধ্যমে এই দাবি করা হয়েছে। গত রোববার ওই দম্পতির গুলিবিদ্ধ লাশ তাদের বাড়ির মেঝেতে আবিষ্কার করেন তাদের বন্ধুরা। পেশায় প্রকৌশলী গোলাম রাব্বি এবং হিসাবরক্ষক শামিমা সান হোসের এভারগ্রিন ইসলামিক সেন্টারের সদস্য ছিলেন বলে জানা গেছে।
ছোট ছেলের বয়স ১৮ বছরের নিচে হওয়ায় পুলিশ তার নাম ও ছবি প্রকাশ করেনি। তাকে কিশোর কারাগারে পাঠানো হয়েছে। গত রোববার রাব্বি দম্পতির গুলিবিদ্ধ লাশ তাঁদের বাড়িতে পাওয়া যায়। এ সময় তাঁদের দুই সন্তানের কেউ বাড়িতে ছিলেন না।
খুনের পরদিন গত সোমবার এই দম্পতির ছোট ছেলে স্কুলে যায়। তাকে সন্দেহের তালিকায় রাখা হয়নি বলে প্রথমে জানিয়েছিল পুলিশ। পরে তাকেও গ্রেপ্তার করা হলো। রাব্বি দম্পতি খুনের উদ্দেশ্য বা কারণ সম্পর্কে সান হোসে পুলিশের পক্ষ থেকে এখনো কোনো বক্তব্য আসেনি।
অপরদিকে রাব্বি দম্পতির লাশ খুব দ্রুত সময়ের মধ্যেই দাফনের জন্য হস্তান্তর করা হবে বলে এভারগ্রিন ইসলামিক সেন্টারের কর্মকর্তারা আশা করছেন।
পুলিশ বলছে, এই হত্যাকাণ্ডে আর কোনো সন্দেহভাজন নেই।
পারিবারিক ও প্রতিবেশী সূত্র নাম উল্লেখ না করে গণমাধ্যমকে বলেছে, বড় ছেলে হাসিবের সমকামী জীবনাচরণে বাবা-মায়ের অনুমোদন ছিল না। এ কারণে রাব্বি দম্পতিকে প্রাণ হারাতে হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
পরিচিতজনেরা জানিয়েছেন, স্থানীয় মসজিদে নিয়মিত যাতায়াত ছিল গোলাম রাব্বির।
মসজিদ কমিটির সদস্য ও পারিবারিক বন্ধু রহিম হাসান বলেন, গোলাম রাব্বি খুব মিশুক প্রকৃতির ছিলেন। তবে তাঁর ছেলেদের অন্তর্মুখী মনে হতো। রাব্বি দম্পতি কখনো তাঁদের ছেলের সমকামিতা নিয়ে আলাপ-আলোচনা করেননি বলেও জানান রহিম।
রাব্বি দম্পতির মরদেহ তাঁদের স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। স্থানীয় সময় শুক্রবার জানাজা শেষে লিভারমোর শহরের ফাইভ পিলার সেমিট্রিতে তাঁদের দাফন করা হবে বলে জানা গেছে।
রাব্বি দম্পতি খুন হওয়ার ঘটনাটি নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী বাংলাদেশিদের মধ্যে ব্যাপক আলোচনা হচ্ছে।
প্রবীণ সাংবাদিক মাহবুবুর রহমান বলেন, পশ্চিমা সংস্কৃতি বা জীবনাচরণ নিয়ে পরিবারে কোনো সমস্যা সৃষ্টি হলে তা গোপন না রেখে আলোচনা করা উচিত। ধর্মীয় বিশ্বাস ও সমাজ-সংস্কৃতির সঙ্গে সাংঘর্ষিক বিষয়গুলো সতর্কতার সঙ্গে মোকাবিলা করতে হবে।
পেশায় প্রকৌশলী গোলাম রাব্বি এবং হিসাবরক্ষক শামীমা সান হোসে শহরে দীর্ঘদিন যাবৎ বসবাস করে আসছিলেন।
গোলাম রাব্বি ১৯৭৬ সালে যুক্তরাষ্ট্রে আসেন। বাংলাদেশে তাঁর পৈতৃক বাড়ি বগুড়ায় বলে জানা গেছে। সমাজসেবামূলক কর্মকাণ্ডের জন্য পরিচিত এমদাদ অ্যান্ড সিতারা খান ফাউন্ডেশন এর চেয়ারপারসন সিতারা খানের ছোট ভাই গোলাম রাব্বি। বগুড়ার সন্তান গোলাম রাব্বি ১৯৭৬ সালে যুক্তরাষ্ট্রে আসেন। নয় বোন এবং দুই ভাইয়ের মধ্যে গোলাম রাব্বি ছিলেন পঞ্চম। তার তিন বোন মারা গেছেন। চার বোন যুক্তরাষ্ট্রেই বসবাস করেন। জীবিত একমাত্র ভাই রয়েছেন বাংলাদেশে।
এবিসি নিউজের প্রতিবেদনে দাবি করা হয়, কয়েকদিন ধরে গোলাম রাব্বির কোনো খোঁজ না পেয়ে গত রোববার বিকালে তার কয়েক বন্ধু সান হোসের বাড়িতে যান। সেখানে গিয়ে তারা বাড়ির দরজা খোলা দেখতে পান। এরপর তাদের ঘরে ঢুকেই দেখতে পান তারা খুনের শিকার হয়েছেন। দুজনের রক্তাক্ত মৃতদেহ কাঠের মেঝেতে পড়ে থাকতে দেখেন। সেখানে একটি চিরকূটও পাওয়া যায় যাতে লেখা ছিল- দু:খিত, আমার প্রথম খুনটি ছিল বিরক্তিকর।
এছাড়া তদন্ত কর্মকর্তারা ওই বাড়ির দেওয়ালে লেখা আরেকটি বার্তা দেখতে পান। বার্তাটি এমন- তোমার মত আমি মিথ্যাবাদী হতে পারব না। আমি ওদের (মা-বাবা) অজ্ঞাতে অথবা সম্মতি ব্যতিত কাউকে ভালবাসতে পারব না। রাব্বি দম্পতির লাশ যখন পাওয়া যায়, তখন তাদের দুই ছেলে বাড়িতে ছিলেন না।