মঙ্গলবার, ১৩ মে ২০২৫, ১১:০৫

বজ্রপাত থেকে রক্ষা পেতে করণীয়

বজ্রপাত থেকে রক্ষা পেতে করণীয়

অন্যকিছু ডেস্ক: সম্প্রতি বজ্রপাতে প্রাণ হারিয়েছেন বহু মানুষ। গতকাল বৃহস্পতিবার (১২ মে) একদিনে মারা গেছেন ৪২ জন। বজ্রপাতের সময় কী করা উচিত, আর কী উচিত নয়- সে বিষয়ে পরামর্শ দিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। আবহাওয়া অধিদপ্তরের আবহাওয়াবিদ রাশেদুজ্জামান জানান, মার্চ থেকে মে এবং অক্টোবর থেকে নভেম্বরের মধ্যে সবচেয়ে বেশি বজ্রঝড় হয়ে থাকে।

বজ্রপাতের সময় পাকা বাড়ির নিচে আশ্রয় নিতে এবং উঁচু গাছপালা বা বিদ্যুতের লাইন থেকে দূরে থাকার পরামর্শ দিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। বিজ্ঞানীরা মনে করেন, পৃথিবীর মধ্যাকর্ষণ শক্তি অক্ষুন্ন রাখার জন্য বজ্রপাত প্রাকৃতিক চার্জ হিসেবে কাজ করে।

বিজ্ঞানীদের বক্তব্য: হিমালয়ের পাদদেশ থেকে বঙ্গোপসাগর পর্যন্ত জলবায়ু পরিবর্তনের কেন্দ্র হিসেবে বিবেচিত বলেই বাংলাদেশকে বজ্রপাতপ্রবণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। চৈত্র-বৈশাখে কালবেশাখীর সময়ে বজ্রপাতের ঘটনা সবচেয়ে বেশি ঘটে। এখন পর্যন্ত বজ্রপাত প্রতিরোধ বা এটাকে থামানোর কোন কৌশল বিজ্ঞান আবিষ্কার করতে পারেনি।

তবে কিছু সাবধানতা অবলম্বন করে বজ্রপাত থেকে নিজেকে কিছুটা রক্ষা করা যায়। আবহাওয়া বিশেষজ্ঞ সুজিত কুমার দেবশর্মা বলেছেন, আকাশে মেঘ দেখলে ঘরে চলে যাওয়া, বিশেষ করে আকাশে যখন ফুলকপির মতো মেঘ জমে এবং এর নিচের দিকে কালো মেঘ থাকে তখন বজ্রপাতের আশঙ্কা বেশি থাকে। এ সময় বাইরে না থেকে ঘরে থাকা উচিত। বজ্রপাত সাধারণত বড় ধরনের স্থাপনাগুলোতেই বয়।

বজ্রপাতের আগ মুহূর্তের লক্ষণ

বজ্রপাত হওয়ার আগ মুহূর্তে কয়েকটি লক্ষণে কোথায় তা পড়বে তা বোঝা যেতে পারে। যেমন বিদ্যুতের প্রভাবে আপনার চুল খাড়া হয়ে যাবে, ত্বক শিরশির করবে বা বিদ্যুৎ অনুভূত হবে। এ সময় আশপাশের ধাতব পদার্থ কাঁপতে পারে। অনেকেই এ পরিস্থিতিতে ‘ক্রি ক্রি’ শব্দ পাওয়ার কথা জানান। আপনি যদি এমন পরিস্থিতি অনুভব করতে পারেন তাহলে বজ্রপাত হবে এমন প্রস্তুতি নিন। তবে সত্যি বলতে বজ্রপাতের এসব লক্ষণ অধিকাংশ সময়ই খেয়াল করা সম্ভব না। তাই সবসময় এর জন্য নিজেকে প্রস্তুতি রাখাই উত্তম। বিশেষ করে বৈরী আবহাওয়ায় সর্বদা সতর্ক থাকতে হবে।

খোলা বা উঁচু স্থান থেকে দূরে থাকা

ঘন ঘন বজ্রপাত হতে থাকলে কোন অবস্থাতেই খোলা বা উঁচু স্থানে থাকা যাবে না। পাকা দালানের নিচে আশ্রয় নেওয়াই সুরক্ষার কাজ হবে।

উঁচু গাছপালা ও বিদ্যুৎ লাইন থেকে দূরে থাকা

কোথাও বজ্রপাত হলে উঁচু গাছপালা বা বিদ্যুতের খুঁটিতে বজ্রপাতের হওয়ার আশঙ্কা বেশি থাকে। তাই এসব স্থানে আশ্রয় নেয়া যাবে না।

জানালা থেকে দূরে থাকা

বজ্রপাতের সময় ঘরের জানালার কাছাকাছি থাকা যাবে না। জানালা বন্ধ রেখে ঘরের ভেতর থাকতে হবে।

ধাতব বস্তু স্পর্শ না করা

বজ্রপাত ও ঝড়ের সময় বাড়ির ধাতব কল, সিঁড়ির রেলিং, পাইপ ইত্যাদি স্পর্শ করা যাবে না। এমনকি ল্যান্ড লাইন টেলিফোনও স্পর্শ করা যাবে না।

বিদ্যুৎ চালিত যন্ত্রের ব্যবহার থেকে বিরত থাকা

বজ্রপাতের সময় বৈদ্যুতিক সংযোগযুক্ত সব যন্ত্রপাতি স্পর্শ করা থেকে বিরত থাকতে হবে। টিভি, ফ্রিজ ইত্যাদি বন্ধ করা থাকলেও ধরা যাবে না। চালু থাকলে বন্ধ করে দিতে হবে, নাহলে নষ্ট হয়ে যাবার সমূহ সম্ভাবনা। বজ্রপাতের আভাস পেলে প্লাগ খুলে এগুলো বিদ্যুৎ সংযোগ থেকে সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন করতে হবে।

গাড়ির ভেতর থাকলে

বজ্রপাতের সময় গাড়ির ভেতরে থাকলে কোনো কংক্রিটের ছাউনির নিচে আশ্রয় নেয়া যে পারে। গাড়ির ভেতরের ধাতব বস্তু স্পর্শ করা থেকে বিরত থাকতে হবে।

গগণচুম্বী স্থান থেকে নিজেকে সরাতে হবে

এমন কোনো স্থানে যাওয়া যাবে না যে স্থানে নিজেই ভৌগলিক সীমার সবকিছুর উপরে। এ সময় ধানক্ষেত বা বড় মাঠে থাকলে তাড়াতাড়ি নিচু হয়ে যেতে হবে। বাড়ির ছাদ কিংবা উঁচু কোনো স্থানে থাকলে দ্রুত সেখান থেকে নেমে যেতে হবে।

পানি থেকে দূরে থাকা

বজ্রপাতের সময় নদী, জলাশয় বা জলাবদ্ধ স্থান থেকে সরে যেতে হবে। পানি বিদ্যুৎ পরিবাহী তাই সর্বোচ্চ সতর্ক থাকতে হবে।

পরস্পর দূরে থাকতে হবে

বজ্রপাতে সময় কয়েকজন জড়ো হওয়া অবস্থায় থাকা যাবে না। ৫০ থেকে ১০০ ফুট দূরে সরে যেতে হবে। কোনো বাড়িতে যদি পর্যাপ্ত নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থা না থাকে তাহলে সবাই এক কক্ষে না থেকে আলাদা আলাদা কক্ষে যাওয়া যেতে পারে।

নিচু হয়ে বসা

যদি বজ্রপাত হওয়ার উপক্রম হয় তাহলে কানে আঙুল দিয়ে নিচু হয়ে বসে চোখ বন্ধ রাখতে হবে। কিন্তু এ সময় মাটিয়ে শুয়ে পড়া যাবে না। মাটিতে শুয়ে পড়লে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হওয়ার আশঙ্কা বাড়বে।

রবারের বুট পরিধান

বজ্রপাতের সময় চামড়ার ভেজা জুতা বা খালি পায়ে থাকা খুবই বিপজ্জনক। এ সময় বিদ্যুৎ অপরিবাহী রাবারের জুতা সবচেয়ে নিরাপদ।

বাড়ি সুরক্ষিত করতে হবে

বজ্রপাত থেকে বাড়িকে নিরাপদ রাখতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে হবে। এজন্য বজ্র নিরোধক দ- বাড়িতে স্থাপন করতে হবে। তবে এক্ষেত্রে দক্ষ ইঞ্জিনিয়ারের পরামর্শ নিতে হবে। ভুলভাবে স্থাপিত রড বজ্রপাতের সম্ভাবনা বাড়িয়ে দিতে পারে। বাড়ির চারদিকে নারকেল জাতীয় গাছ লাগালে বজ্রপাত হলে ওইসব উঁচু গাছের ওপরই হবে।

বজ্রপাতে আহত হলে

বজ্রপাতে আহত কাউকে বৈদ্যুতিক শকে আহতদের মতোই চিকিৎসা করতে হবে। সরাসরি মানুষের গায়ে পড়লে মৃত্যু অবধারিত। বজ্রপাতে আহত ব্যক্তিকে স্পর্শ করাও বিপজ্জনক। শুকনো কাঠ দিয়ে ধাক্কা দিতে হবে। দ্রুত চিকিৎসককে ডাকতে হবে। হাসপাতালে নিতে হবে। একই সঙ্গে আহত ব্যক্তির শ্বাস-প্রশ্বাস ও হৃৎস্পন্দন ফিরিয়ে আনার জন্য চেষ্টা চালিয়ে যেতে হবে। তবে এ বিষয়ে প্রাথমিক প্রশিক্ষণ জরুরি।




Comments are closed.



পুরানো সংবাদ সংগ্রহ

সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি রবি
 
১০১১
১২১৩১৪১৫১৬১৭১৮
১৯২০২১২২২৩২৪২৫
২৬২৭২৮২৯৩০৩১  
All rights reserved © shirshobindu.com 2012-2025