আফগানিস্তানের তালেবান বিদ্রোহীরা আট বছরের শিশুকেও আত্মঘাতী বোমা হামলাকারী হিসেবে গড়ে তুলছে। এজন্য তারা বেছে নিচ্ছে পিতামাতাহীন অসহায় শিশুদেরকে। এই অসহায় শিশুরাই পরবর্তীতে হয়ে উঠছে ভায়াবহ আত্মঘাতী হামলাকারী হিসেবে। আফগানিস্তানের ইসলামিক মৌলবাদীরা অবশ্য শিশুদেরকে এ ধরনের ভয়াবহ কাজে নিয়োজিত করার অভিযোগ অস্বীকার করেন।
কিন্তু তারপরও তারা বেশ সক্রিয়ভাবেই পিতামাতাহীন, সহায় সম্বলহীন ছেলে শিশুদেরকে সংগ্রহ করে তাদেরকে অস্ত্র এবং গোলাবারুদ দিয়ে প্রশিক্ষণের মাধ্যমে গড়ে তোলে আত্মঘাতী হামলাকারী হিসেবে। বৃটেনের চ্যানেল ফোরের এক তদন্তে বেরিয়ে এসেছে, এ কাজে উদ্বুদ্ধ করতে তালেবানরা মিষ্টি এবং চকোলেট ব্যবহার করে। পিতামাতাহীন আফগান কিশোর নেয়াজ বলেছে আট বছর বয়সে তার আফগান বিদ্রোহীদের সহযোগী হিসেবে বেড়ে ওঠার কাহিনী।
নেয়াজ বলেছে, মাত্র আট বছর বয়সেই কয়েকটি মুদ্রার বিনিময়ে আফগান যোদ্ধারা তাকে নিজেদের কাজে লাগানোর প্রতিশ্রুতি আদায় করে নিয়েছিল। জোট বাহিনী যখন তাদের গ্রামে হামলা চালায় তখন সে বাবার সঙ্গে ভেড়া চরাচ্ছিল। নেয়াজ বলেছে, হেলিকপ্টার যখন আমাদের দিকে তেড়ে এসে বোমা ছুড়ছিল তখন তালেবানরা আমাদের বাড়িতেই লুকিয়ে ছিল। বোমার আঘাতে তার বাবা ও মা তখনই মারা যান। সেই হামলার পরপরই নেয়াজকে তালেবানরা তুলে নেয় এবং বিভিন্ন গোলাবারুদ সম্পর্কে প্রশিক্ষণ দিতে শুরু করে। প্রথমে তালেবানরা তাকে অনেক চকোলেট এনে দিতো।
এরপর একদিন তারা তাকে একটি বোমা বিস্ফোরক ভর্তি সুইসাইড ভেস্ট বিশেষ উপহার হিসেবে এনে দেয়। সেটা দিয়ে আফগানরা তাকে ৫০ আফগানি উপহার দেয়। এরপর তারা তাকে একটি চেকপয়েন্ট নিজের শরীরে বাঁধা সুইসাইড ভেস্ট জড়িয়ে দিতে বলে। নেয়াজ তখন বলেছিল নিজের শরীরে বিস্ফোরণ ঘটানোর পর আমি অর্থ দিয়ে কি করবো। কিন্তু এরপরও তালেবানরা তাকে উদ্বুদ্ধ করে বলেছিল, এভাবে মৃত্যুবরণ করলে সে বেহেস্তে চলে যাবে। এ পর্যায়ে নেয়াজ সেখান থেকে পালিয়ে নয় মাইল দূরে পুলিশ স্টেশনে গিয়ে আত্মসমর্পণ করে। এখন ১০ বছর বয়সী নেয়াজ লস্কর গাতে একটি এতিমখানায় রয়েছে।
তবে তালেবানদের হাতে পড়া সব শিশুই নেয়াজের মতো সৌভাগ্যবান নয়। হেলমান্দ এবং গজনীর কারাগারে মোট ২২৪টি শিশু রয়েছে। এদের সবাইকে আত্মঘাতী হামলার চেষ্টা বা পরিকল্পনার অভিযোগে আটক করা হয়েছে।
Leave a Reply