আল্লাহ তায়ালা মানুষ সৃষ্টি করে তাকে বিশেষ কিছু রাত উপহার দিয়েছেন। যে রাতগুলোতে মানুষ আল্লাহর এবাদত ও বন্দেগির মাধ্যমে নিজের অন্যায় অপরাধ ও গুনাহগুলো মাফ করিয়ে নেবে।
বান্দা ও আল্লাহর মাঝে প্রেম বিনিময় হবে। প্রিয় বান্দা মহান আল্লাহর প্রতি নিবেদিত হবে। মহান আল্লাহ প্রিয় বান্দাকে কাছে টেনে নেবেন। এসব মহিমান্বিত রাত্রিগুলোর মধ্যে সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ রাত্রি হচ্ছে লাইলাতুল কদর বা শবে কদর। লাইলাতুল ও ‘শব’ অর্থ রাত্রি। ‘কদর’ এর একাধিক অর্থ রয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে ভাগ্য, মর্যাদা ও পরিমাণ। তাই বলা যায়, যে রাত্রিতে মানুষের ভাগ্য নির্ধারিত হয় সে রাত্রিই হলো শবে কদর। এই মহিমান্বিত রাত্রি সম্পর্কে পবিত্র কোরআনে একটি পূর্ণাঙ্গ সূরা নাজিল হয়েছে। মহান আল্লাহ এরশাদ করছেন, “নিশ্চয় আমি এই কোরআনকে নাজিল করেছি কদরের রাত্রিতে। আপনি কি জানেন কদরের রাত্রি কি? কদরের রাত্রি হাজার মাস অপেক্ষা উত্তম। এই রাত্রিতে ফেরেশতারা ও জিব্রাঈল (আ.) তাদের পালনকর্তার আদেশে সর্বপ্রকার মঙ্গল সহকারে নাজিল হন। তা ফজর পর্যন্ত অব্যাহত থাকে”। সূরা: কদর, পারা: ৩০।
হাদিসের কিতাবগুলোতে শবে কদরের গুরুত্ব ও ফজিলত সম্পর্কে অনেক বর্ণনা এসেছে। বিখ্যাত সাহাবি হজরত আনাস ইবনে মালেক (রা.) বলেন, একবার রমজান মাস আসলো, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমাদের বললেন, এই মাস তোমাদের কাছে উপস্থিত হয়েছে। এতে এমন একটি রাত্রি রয়েছে যা হাজার মাস অপেক্ষা উত্তম। যে এর কল্যাণ থেকে বঞ্চিত হয়েছে সে সর্বপ্রকার কল্যাণ থেকে বঞ্চিত হয়েছে। আর এটা থেকে বঞ্চিত হয় না চিরবঞ্চিত ব্যক্তি ব্যতিত কেউই। ইবনে মাজাহ।
এই হাদিস দ্বারা বোঝা যায়, শবে কদর থেকে বঞ্চিত থাকা কোনোভাবেই উচিত নয়। শবে কদরের তারিখ নির্দিষ্ট করে বলা মুশকিল। তবে হাদিসে পাকে রমজানের শেষ দশদিনের বেজোড় রাত্রিগুলোতে শবে কদর তালাশ করতে বলা হয়েছে। নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, তোমরা শবে কদর তালাশ করবে রমজানের শেষ দশদিনের বেজোড় রাত্রিগুলোতে। বুখারী শরীফ।
অপর হাদিসে এসেছে, হজরত ইবনে আব্বাস (রা.) বলেন, রাসুলে পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, তোমরা শবে কদর তালাশ করবে রমজানের শেষ দশকে। মাসের নয়দিন বাকি থাকতে, সাতদিন বাকি থাকতে, পাঁচদিন বাকি থাকতে। বুখারী শরীফ।
আমাদের উচিত, পবিত্র রমজানের শেষ দশকের বেজোড় রাত্রিগুলোতে শবে কদর তালাশ করা। মহান আল্লাহ আমাদের সেই তৌফিক দান করুন। আমীন।
লেখক: খতিব, বাইতুর রহমত জামে মসজিদ, গাজীপুরা, টঙ্গী।
Leave a Reply