উৎপল রায়: প্রিয়জনদের চিঠি চালাচালির যুগ শেষ হয়েছে আগেই। মুঠোফোনে এসএমএস, এমএমএস, ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়েই চিঠির কাজ চলে। ঈদ শুভেচ্ছা জানাতেও এখন আর ভিড় হয় না কার্ড প্রোডাক্ট হাউজগুলোর শোরুম কিংবা ফুটপাথের কার্ডের দোকানে। যুগ পাল্টেছে।
প্রযুক্তির কল্যাণে প্রিয় মানুষটিকে বিভিন্ন উৎসবে শুভেচ্ছা জানাতে এখন দৌড়ঝাঁপ করতে হয় না। হাতের কাছে একটি মোবাইল ফোন কিংবা একটি কম্পিউটার অথবা একটি ল্যাপটপ। ব্যস এতেই যথেষ্ট। মুহূর্তেই পাঠানো যাবে শুভেচ্ছাবাণী। সঙ্গে ছবি ও কথামালা। রাজধানীর বিভিন্ন কার্ড প্রোডাক্ট হাউজ এবং ফুটপাথে বসা কার্ডের দোকানগুলো ঘুরে ও সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এখন কার্ডের শোরুম ও দোকানে ঈদের শুভেচ্ছা জানাতে কার্ড কেনার জন্য হন্যে হয়ে কেউ আসে না।
কিছুদিন আগেও ঈদসহ বিভিন্ন উৎসবে প্রিয় মানুষটিকে শুভেচ্ছা জানাতে কার্ডই ছিল সবচেয়ে বড় ভরসা। দোকান ঘুরে ঘুরে সবচেয়ে সুন্দর, মনোরম ও সবচেয়ে দামি কার্ড বেছে নিত সবাই। কিন্তু সেদিন এখন হারিয়ে গেছে। বিয়ে, জন্মদিন, হালখাতা ছাড়া কেউ এখন আর কার্ড কিনতে আসে না। হাতের কাছে মোবাইল আর ল্যাপটপে কম খরচে কম সময়ে যেখানে শুভেচ্ছা জানানো ও কথা বলা সহজ, সেখানে একটি কার্ড কেনার জন্য কেনই বা তারা কার্ডের দোকানে আসবে জানালেন নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক পুরানা পল্টনের নামকরা একটি কার্ড প্রোডাক্ট হাউজের একজন ব্যবস্থাপক।
তবে এ প্রযুক্তির জোয়ারে গা না ভাসিয়ে স্মৃতিতে অমলিন রাখার মতো কেউ কেউ যে নেই তা নয়। তেমনই একজন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী জিনাত আরা নাজনীন। ঐতিহ্যবাহী আজাদ প্রোডাক্টের পুরানা পল্টন শাখায় এসেছেন ঈদ কার্ড কিনতে। ভালবাসার মানুষটিকে এবারের ঈদুল ফিতরের শুভেচ্ছা জানাবেন বরাবরের মতো ঈদ কার্ডের মাধ্যমে। বলেন, মোবাইলে কিংবা ল্যাপটপের সামনে বসলে অনেক কম খরচ ও স্বল্প সময়ে শুভেচ্ছা জানাতে পারতাম। কিন্তু সেটা আমার কাছে স্বস্তিদায়ক মনে হয়নি। সব সময়ই প্রিয়জনদের ঈদের শুভেচ্ছা জানাই কার্ড উপহার দেয়ার মাধ্যমে। এবারও তাই করব। আমার প্রিয় মানুষগুলো আমাকেও কার্ডের মাধ্যমেই শুভেচ্ছা জানাবে, জানালেন নাজনীন। আজাদ প্রোডাক্টের পুরানা পল্টন শাখার ব্যবস্থাপক কাজী রেজাউল হক রেজা অবশ্য দ্বিমত পোষণ করে বলেন, এটা ঠিক, যুগ পাল্টেছে।
তথ্যপ্রযুক্তির কল্যাণে প্রিয়জনকে শুভেচ্ছা জানানো অনেক সহজ হয়েছে। এখনকার সময়ে বিভিন্ন ফেস্টিভ্যালে শুভেচ্ছা জানানো এমনকি নিমন্ত্রণ দিতেও মোবাইল ও কম্পিউটার বড় ভরসা। কিন্তু তার পরও কার্ডের আবেদন পুরোপুরি শেষ হয়নি। এবারের ইদেও সেটা বজায় আছে। তিনি বলেন, সব সময় আমরা ঈদের কার্ডে বৈচিত্র্য আনার চেষ্টা করি। এবারও তার ব্যতিক্রম নয়। বিক্রিও ইনশাআল্লাহ ভাল। সর্বনিম্ন ২ টাকা থেকে সর্বোচ্ছ ২৫০ টাকা দামের বিভিন্ন ঈদ কার্ড পাওয়া যাচ্ছে আজাদ প্রোডাক্টে।
এর মধ্যে নতুন আসা মিউজিক কার্ডের চাহিদা সবচেয়ে বেশি। কার্ডের ওপরের মলাট খুললেই বেজে উঠে গান। ‘ও মন রমজানের ঐ রোজার শেষে এল খুশির ঈদ’। ভালবাসার মানুষটিকে উপহার দেয়ার জন্য রয়েছে ‘আই লাভ ইউ, আই লাভ ইউ’ নামের মিউজিক কার্ড। বিক্রি হচ্ছে ১৫০ টাকায়, জানালেন সেলসম্যান করিম। আজাদ প্রোডাক্টের শোরুম ঘুরে দেখা গেছে বিভিন্ন রঙের ডিজাইন ও কথামালায় সাজানো ঈদ কার্ডের ছড়াছড়ি। আইডিয়াল প্রোডাক্টে ঈদ কার্ড কিনতে আসা গণপূর্ত বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. জামালউদ্দিন হোসেন বলেন, প্রযুক্তি মানুষকে স্মার্ট ও গতিশীল করেছে এটা সত্য। কিন্তু কিছু বিশেষ দিনের আলাদা গুরুত্ব আছে। প্রিয়জনকে ঈদ কার্ডের মাধ্যমে ভালবাসা জানান দেয়ার প্রচলনটা এখনও রয়ে গেছে।
Leave a Reply