বৃহস্পতিবার, ২৭ মার্চ ২০২৫, ০৩:৪০

আগামী নির্বাচনে বৃটেনের মোড় ঘুরিয়ে দিতে পারে এশীয়রা

আগামী নির্বাচনে বৃটেনের মোড় ঘুরিয়ে দিতে পারে এশীয়রা

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

সুমন আহমদ: ব্রিটেনে অবৈধ ইমিগ্র্যান্টদের সাধারণ ক্ষমা ঘোষণার মাধ্যমে বৈধতা প্রদানের দাবি জানিয়ে লন্ডন মেয়র বরিস জনসন ব্যাপক সমালোচনার মুখোমুখি হোন। সরকার দলীয় কনসারভেটিভ পার্টির ক্ষমতাধর এই নেতা খোদ নিজের দলে ব্যাপক প্রশ্নের সম্মুখিন হোন। অপ্রিয় হলে সত্য এশীয় ও কৃষ্ণাঙ্গ ভোটাররা বৃটেনে ২০১৫ সালে অনুষ্ঠেয় সাধারণ নির্বাচনে মুখ্য ভূমিকা রাখবেন। তাদের ভোটেই মোড় ঘুরে যেতে পারে স্বপ্রের দেশ বিট্রেনের।

সম্প্রতি এক জরিপে এ তথ্য উঠে এসেছে যে, নির্বাচনে অংশ নেয়া প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের ভাগ্যের চাকা ঘুরবে এশীয়দের ইচ্ছায়। এশীয় ও কৃষ্ণাঙ্গদের ইচ্ছার প্রতিফলনে নির্বাচনে সংযোজিত হবে নতুন মাত্রা। ব্রিটেনে এখনো যে ঘাটতি রয়েছে এর অনেকটা কাটিয়ে দিতে পারে এশীয়রা। ট্রিপল ‘এ‘ নামক যে ঘাটতি থেকে মন্দা কাটাতে পরিশ্রমের বিকল্প খুজছে ব্রিটিশরা যা মোটেও সম্ভব নয়। তবে আকস্মিক ভাবে এর পরিবর্তন লক্ষ্য করা যাবে খুব শিঘ্রই বিশেষজ্ঞদের ধারণা। হয়তো তারা আগামী নির্বাচনকেই বোঝাতে চাচ্ছেন।

জরিপে ওঠে এসেছে যে, ২০১০ সালের তুলনায় অনেক বেশি এশীয় ও কৃষ্ণাঙ্গ ভোটার আগামী নির্বাচনে ভোট দেবেন। যে ভোটকেন্দ্রগুলোতে এ সম্প্রদায়ের জনসংখ্যা বেশি, সে স্থানগুলোতে ভোটের ভাগ্য তারাই নির্ধারণ করবেন বলে মনে করা হচ্ছে। কৃষ্ণাঙ্গ ভোটারদের প্রভাব এতো বেশি আগে কখনও ছিল না। তাই এটা তাদের জন্য বেশ বড় সুসংবাদ। ২০০১ সালে যেখানে সংখ্যালঘু এ সম্প্রদায়গুলোর জনসংখ্যা ছিল বৃটেনের মোট জনসংখ্যার ৭ শতাংশ। অথচ ২০১১ সালে সে সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছিল ১১ শতাংশে, যা এখন আরও বেশি। এ খবর দিয়েছে অনলাইন টাইমস অব ইন্ডিয়া।

ওবিভি’র জরিপ অনুযায়ী, মিডল্যান্ডস থেকে দক্ষিণ উপকূল হয়ে পূর্ব অ্যাংলিয়া ও উত্তর-পূর্বাঞচলের ভোটকেন্দ্রগুলোতে সংখ্যালঘু ভোটারদের আধিপত্য থাকবে চোখে পড়ার মতো। যে ধারাটি চলছে, আগামী বছরগুলোতেও সেটি অব্যাহত থাকবে ও বৃটিশ রাজনীতির যে গতিপ্রবাহ, তার দিক হয়তো পরিবর্তন করবে পরিবর্তিত এ ধারা বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। অপারেশন ব্ল্যাক ভোট (ওবিভি) নামে একটি ক্রস-পার্টি সংগঠন এ জরিপটি পরিচালনা করে। বৃটেনের বিভিন্ন সম্প্রদায়ে সুষ্ঠুভাবে ভোট দেয়ার প্রচারণা চালায় সংগঠনটি।

অবৈধ ইমিগ্র্যান্টকে ব্রিটেন থেকে বিতাড়নে কঠোর অবস্থান গ্রহণ করেছে ব্রিটিশ সরকার। লন্ডন মেয়র বরিস জনসন বলছেন, বর্ডার এজেন্সির স্টাফ এবং পুলিশরা অবৈধ ইমিগ্র্যান্টদের খুঁজে বের করে নিজ দেশে ফেরত পাঠাতে ব্যর্থ হচ্ছে। অথচ তাদেরকে বৈধতা দেওয়া হলে তারা নিয়মিত ট্যাক্স প্রদান করবে এর ফলে ব্রিটেনের অর্থনীতিতেও সুফল পাওয়া যাবে। তিনি আরো বলেন, অবৈধ ইমিগ্র্যান্টদের বৈধতা দেওয়া হলে এথনিক কমিউনিটিতে কনজারভেটিভ পার্টির জনপ্রিয়তাও বাড়বে। অবশ্য তার এই দাবিটি সরাসরি প্রত্যাখান করেন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরন।

এই বিষয়ে নিজের স্পষ্ট অবস্থান জানিয়ে ক্যামেরন বলেন, অবৈধ ইমিগ্র্যান্টদের সাধারণ ক্ষমা দেওয়ার দাবিটি আমার কাছে কখনোই গ্রহণযোগ্য বলে মনে হয় না। অবৈধ ইমিগ্র্যান্টদের প্রতি সদয় হলে সেটি ব্রিটেনে নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে বলেও মন্তব্য করেন তিনি। এবার লন্ডন মেয়র বরিস জনসনের কণ্ঠে অবৈধ ইমিগ্র্যান্টদের বৈধতা প্রদানের দাবিটি উচ্চারিত হলে কনজারভেটিভ পার্টির ঐ এমপিও তার স্বপক্ষে সুর মিলিয়েছেন। বিভিন্ন শ্রেনীর ইমিগ্রান্টের দেশ বলে খ্যাত ব্রিটেনে ণ্ডন মেয়র বরিস জনসনের জনপ্রিয়তা এখন তুঙ্গে। একের পর এক ভরাডুবির পর হয়তো ক্যামরুনের স্থলাভিষিক্ত হতে যাচ্ছেন টরির বর্তমান ব্যাপক সমালোচিত-আলোচিত-জনপ্রিয় নেতা লন্ডন মেয়র বরিস জনসন।

আগেও একবার প্রথমবার লন্ডন মেয়র পদ জয়ের পর বরিস এরকম মন্তব্য করে ব্যাপক আলোচনায় আসেন। তার দল টরি পার্টির ব্যাপক সমালোচনার মুখোমুখি হতে হয়েছে তাকে। তবে এবার একটু শক্ত হয়েই তিনি এ রকম মন্তব্য করলেন। যাতে নাড়া দিয়েছে টরি সরকারের শেষ সময়ে হয়তো বরিসের হাত ধরে জনপ্রিয়তা ফিরে পায় বিশ্বব্যাপী সমালোনায় ভরপুর ক্ষমতাসীন এই দল।

অবশ্য মেয়র বরিস জনসন কর্তৃক এই দাবি উত্থাপিত হওয়ার আগেই গত সপ্তাহে প্রাইম মিনিস্টার ডেভিড ক্যামেরন কনজারভেটিভ পার্টির আরেক এমপির এ ধরণের দাবির প্রেক্ষিতে অবৈধ ইমিগ্র্যান্ট বৈধতা দানের বিষয়টিকে অগ্রহণযোগ্য বলে মন্তব্য করেছেন। এর পরপরই মেয়র বরিস জনসন কর্তৃক এই দাবিটি উত্থাপিত করার মাধ্যমে স্পষ্টতই প্রাইম মিনিস্টারের বিপরীতমুখী অবস্থান নিলেন লন্ডন মেয়র।

দ্বিতীয় মেয়াদে লন্ডর মেয়র নির্চিত হওয়ার পর প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরুনের চেয়ে লন্ডন মেয়র বরিস জনসন এগিয়ে রয়েছেন অনেক দূর। অনেকে বলছেন আগামী নির্বাচনে টরি ক্ষমতায় আসলে হয়েতো বরিস হবেন প্রধানমন্ত্রী। তাই টরি দল বিশেষ বিবেচনায় বরিসের দ্বিতীয়বার উচ্চারিত সাধারণ ক্ষমা ঘোষণার এড়িয়ে যেতে পারবে না বলে বিশেষজ্ঞদের ধারণা।

এক্ষেত্রে বরিস জনসন মনে করেন, এই ধরণের ব্যর্থতার কারণে অবৈধ ইমিগ্র্যান্টরা ব্রিটেনে বসবাসে এক ধরণের অলিখিত বৈধতা পেয়ে যাচ্ছেন। এলবিসি রেডিওর ফোন ইন প্রোগ্রামে অংশ নিয়ে অবৈধ ইমিগ্র্যান্টদের বৈধতা দানের জোরালো দাবিটি তুলেন মেয়র বরিস জনসন। বিশেষ করে যে সকল অবৈধ ইমিগ্র্যান্ট দীর্ঘদিন থেকে ব্রিটেনে বসবাস করছেন তাদের বৈধতা প্রদানের পক্ষে মত দিয়েছেন সরকার দলীয় কনসারভেটিভ পার্টির এই ক্ষমতাধর নেতা।

তিনি এলবিসি রেডিওকে বলেন, ব্রিটেনে অবৈধভাবে ১০ কিংবা ১২ বছর থেকে বাস করছেন এমন অনেকেই রয়েছেন, যারা নগদ অর্থের বিনিময়ে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে কাজ করছেন। এটিকে তিনি বস্ন্যাক ইকোনমি হিসেবে আখ্যায়িত করেন। তিনি বলেন, ঐ সকল ইমিগ্র্যান্টদের যদি বৈধতা দেওয়া হয় তাহলে তারা কাজের মাধ্যমে ব্রিটেনের ট্যাক্স সিস্টেমে ইতিবাচক প্রভাব রাখবেন। তিনি অবৈধ ইমিগ্র্যান্টদের বৈধতা প্রদানের দাবিকে যুক্তিসংগত হিসেবে উল্লেখ করে এই লক্ষ্যে লন্ডন মেয়র বরিস জনসনের সাথে একযোগে কাজ করারও প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করেন।

উল্লেখ্য, কোয়ালিশন সরকারের শরিক দল লিবডেম ২০১০ সালে তাদের নির্বাচনী ইশতেহারেও অবৈধ ইমিগ্র্যান্টদের বৈধতা প্রদানের কথা উল্লেখ করেছিলো। পরবর্তীতে অবশ্য দলটি এই বিষয়টিকে অগ্রাহ্য করেছে। অন্যদিকে গত সপ্তাহে কনজারভেটিভ পার্টির ডাকসাইটে এক এমপি ব্রিটেনের প্রায় অর্ধমিলিয়ন অবৈধ ইমিগ্র্যান্টকে বৈধতা দানের দাবিটি উত্থাপন করেছিলেন।

 




Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *



পুরানো সংবাদ সংগ্রহ

সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি রবি
 
১০১১১২১৩১৪১৫১৬
১৭১৮১৯২০২১২২২৩
২৪২৫২৬২৭২৮২৯৩০
৩১  
All rights reserved © shirshobindu.com 2012-2024