শীর্ষবিন্দু নিউজ: বর্ণিল মঙ্গল শোভাযাত্রার মধ্য দিয়ে বুধবার খাগড়াছড়িতে দুদিনব্যাপী শ্রীকৃষ্ণের জন্মাষ্টমী উৎসব শুরু হয়েছে। কৃষ্ণপক্ষের অষ্টমী তিথিতে ভগবান শ্রীকৃষ্ণ অবতাররূপে জন্মগ্রহণ করেছিলেন। দুষ্টের দমন আর শিষ্টের রক্ষার জন্য তিনি পৃথিবীতে আসেন। সনাতন ধর্মাবলম্বীরা দেশের বিভিন্ন স্থানে যথাযোগ্য ধর্মীয় আনুষ্ঠানিকতায় দিনটি পালন করছে। জন্মাষ্টমী উৎসব উপলক্ষ্যে ঢাকাসহ সারা বাংলাদেশ উদযাপিত হচ্ছে ব্যাপক উদ্দিপনায়।
ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্যপূর্ণ বর্ণাঢ্য আনুষ্ঠানিকতার মধ্য দিয়ে বন্দরনগরী চট্টগ্রামে পালিত হচ্ছে হিন্দু ধর্মালম্বীদের উপাস্য দেবতা ভগবান শ্রী কৃঞ্চের আর্বিভাব দিবস শুভ জন্মাষ্টমী। শ্রী কৃঞ্চের জন্মদিন উপলক্ষে নগরীসহ জেলার বিভিন্ন স্থানে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের মিলনমেলা বসেছে। বুধবার সকালে নগরীর আন্দরকিল্লা মোড় থেকে জন্মাষ্টমী উপলক্ষে বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা বের করে শ্রী শ্রী জন্মাষ্টমী উদযাপন পরিষদ। বৃষ্টি উপেক্ষা করে নগরীর বিভিন্ন থানা এবং জেলার বিভিন্ন স্থান থেকে সনাতন ধর্মীবলম্বী বিভিন্ন বয়সী নারী, পুরুষ নেচে গেয়ে যোগ দেন শোভাযাত্রায়।
বেসমারিক বিমান চলাচল ও পর্যটন বিষয়ক সংসদীয় কমিটির সভাপতি এবং আওয়ামী লীগ প্রেসিডিয়ামের সদস্য ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন বেলুন ও পায়রা উড়িয়ে শোভাযাত্রার উদ্বোধন করেন। এসময় সাবেক মেয়র ও নগর আওয়ামী লীগের সভাপতি এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরী শোভাযাত্রা মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন।
খাগড়াছড়ি প্রতিনিধি জানান, সকালে জেলা শহরের লক্ষ্মী নারায়ণ মন্দিরের সামনে শ্রী শ্রী জন্মাষ্টমী উদযাপন পরিষদের উদ্যোগে আয়েজিত শোভাযাত্রার উদ্বোধন করেন খাগড়াছড়ি জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরা।
শহরের গুরুত্বপূর্ণ সড়ক প্রদক্ষিণ করে শোভাযাত্রাটি লক্ষ্মী নারায়ণ মন্দিরে গিয়ে শেষ হয়। এলপর সেখানে আগত ভক্তদের মাঝে মহাপ্রসাদ বিতরণ করা হয়।
মন্দিরে সকাল থেকে চণ্ডী পাঠ, গীতা পাঠ, কৃষ্ণনাম জপ, ধর্মীয় আলোচনা এবং রাতে কৃষ্ণ পূজার আয়োজন করা হয়েছে।
উদ্বোধন অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন খাগড়াছড়ির জেলা প্রশাসক মো. মাসুদ করিম, পৌর মেয়র রফিকুল আলম, সদর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান শানে আলম, জন্মাষ্টমী উদযাপন পরিষদের আহ্বায়ক স্বপন চন্দ্র দেবনাথ, খাগড়াছড়ি সনাতন সমাজ কল্যাণ পরিষদের সভাপতি অ্যাডভোকেট বিধান কানুনগো প্রমুখ।
নরসিংদীতে শোভাযাত্রা ও আলোচনা সভা
নরসিংদী প্রতিনিধি জানান, জেলা শহরে জন্মাষ্টমী উপলক্ষে দুটি শোভাযাত্রা করা হয়েছে।
জেলা ও শহর পূজা উদযাপন কমিটির উদ্যোগে এ দুটি শোভাযাত্রা হয়।
স্থানীয় গোপীনাথ আশ্রম থেকে একটি শোবাযাত্রা বের হয়ে শহরের বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে। এতে কয়েকশ’ মানুষ অংশ নেয়।
এছাড়া জেলা প্রশাসকের কার্যালয় থেকে শুরু হওয়া অপর শোভাযাত্রাটি নতুন জেলা শিল্পকলা একাডেমীতে গিয়ে শেষ হয়। পরে আলোচনা সভা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হয় সেখানে।
উদ্বোধনী বক্তব্যে ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন বলেন, ‘বাংলাদেশ সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির দেশ। আমাদের মুক্তিযুদ্ধের মূলমন্ত্র ছিল সব ধর্মের সব মানুষের সমান অধিকার। এদেশে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি ছিল, আছে এবং চিরদিন থাকবে।’
তিনি বলেন, ‘এদেশের সনাতন ধর্মাবলম্বীদের উপর মাঝে মাঝে নির্যাতন, নিপীড়ন নেমে আসে। আমরা এ নির্যাতন সমর্থন করিনা, ভবিষ্যতে হোক সেটাও আমরা আর চাইনা।’
এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরী বলেন, ‘আমরা সব ধর্মের মানুষ একে অন্যের উৎসব, পার্বণ মিলেমিশে পালন করি। আমাদের ঐক্যকে বাধাগ্রস্ত করার বিভিন্ন চেষ্টা অতীতে হয়েছে, কিন্তু ঐক্যে কেউ ফাটল ধরাতে পারেনি। যত বাধাবিপত্তি আসুক, আমরা ঐক্যবদ্ধ থাকব।’
অনুষ্ঠানে উপস্থিত প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ সহকারী সাইফুজ্জামান শিখর বাংলানিউজকে বলেন, ‘এদেশের সব ধর্মের মানুষ সবসময় মিলেমিশে বসবাস করবে এটাই আওয়ামী লীগ চায়। হিন্দু সম্প্রদায়সহ সকল মানুষ অতীতেও যেমন মাথা উঁচু করে বসবাস করছে, ভবিষ্যতেও করবে।’
শ্রী শ্রী জন্মাষ্টমী উদযাপন পরিষদের সভাপতি দেবাশীষ পালিতের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এ উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন সিএমপি কমিশনার শফিকুল ইসলাম, কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগ নেতা আমিনুল ইসলাম আমিন, দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মফিজুর রহমান, সাবেক ছাত্রলীগ নেতা মাহফুজুর হায়দার রোটন, পরিষদের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট চন্দন তালুকদার, পরিষদের নেতা আশুতোষ দাশ, চন্দন দাশ, কাজল দেবনাথ প্রমুখ।
শোভাযাত্রাটি আন্দরকিল্লা থেকে শুরু হয়ে নগরীর লালদিঘীর পাড়, কোতয়ালী মোড়, নিউমার্কেট, নন্দনকানন, চেরাগি পাহাড় হয়ে জেএম সেন হলে গিয়ে শেষ হয়।
শ্রী কৃঞ্চসহ বিভিন্ন দেবদেবী, ধর্ম প্রচারকের প্রতিকৃতি, ট্রাকে মাইক ও সাউন্ড সিস্টেম লাগিয়ে কীর্তনের সুর, ঢোল, ব্যান্ডের তাল, সব মিলিয়ে বর্ণিল রূপ নেয় শোভাযাত্রা। অংশগ্রহণকারী হাজারো ভক্তের মধ্যে বয়স্ক নারী, পুরুষ যেমন ছিলেন, তেমন ছিল বিভিন্ন স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরাও।
এদিকে শোভযাত্রা উপলক্ষে নগর জুড়ে কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করে পুলিশ। আন্দরকিল্লা মোড়সহ শোভযাত্রা যেসব পয়েন্ট দিয়ে নগরী প্রদক্ষিণ করেছেন সব পয়েন্ট মিলিয়ে প্রায় পাঁচশ পুলিশ সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে বলে সূত্র জানিয়েছে।
নগর পুলিশের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (দক্ষিণ) মোস্তাক আহমেদ বাংলানিউজকে বলেন, ‘পুরো নগরীতে নিরাপত্তার ব্যবস্থা জোরদার আছে। এছাড়া নগরের যেসব স্থান থেকে মিছিল এসে শোভাযাত্রায় যোগ দিয়েছে সব মিছিলগুলোকেই নিরাপত্তা দেয়া হয়েছে।’
নগরীর জেএম সেন হল প্রাঙ্গনে মঙ্গলবার শ্রীমদ্ভবত গীতাপাঠ, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, ঋষি ও বৈষ্ণব সম্মেলন, শ্রী কৃষ্ণের লীলাকীর্ত্তণের মধ্য দিয়ে শুরু হয়েছে জন্মাষ্টমীর আনুষ্ঠানিকতা।
বুধবার সকাল ১০টায় মহাশোভাযাত্রার পর মাতৃসম্মেলন, ধর্মীয় সম্মেলন, মহানামযজ্ঞের শুভ অধিবাস অনুষ্ঠিত হবে। এছাড়াও ২৯ ও ৩০ আগস্ট দিবারত্রি মহাযজ্ঞ অনুষ্ঠিত হবে বলেও জানানো হয়েছে।
Leave a Reply