শীর্ষবিন্দু নিউজ: ন্যূনতম মজুরি আট হাজার টাকা করার দাবিতে পোশাকশ্রমিকদের বিক্ষোভ অব্যাহত আছে। দাবি আদায়ে আজ মঙ্গলবার পোশাকশ্রমিকেরা রাজধানীর খিলক্ষেত, সাভারের আশুলিয়া, গাজীপুরের কালিয়াকৈরে বিক্ষোভ ও সড়ক অবরোধ করেছেন।
কুড়িল বিশ্বরোড: প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, ন্যূনতম বেতন বাড়ানোর দাবিতে আজ সকাল নয়টার দিকে কয়েকটি পোশাক কারখানার কয়েক হাজার শ্রমিক কুড়িল বিশ্বরোড সড়ক অবরোধ করেন। তাঁরা কুড়িল উড়ালসেতুর ওপরে ও নিচে অবরোধ তৈরি করে বিক্ষোভ করতে থাকেন। জানা গেছে, ইউরো জোন, গাজী টাওয়ার, মোহাম্মদীয়া, ক্ল্যাসিক, কেনিয়া গার্মেন্টসের প্রায় চার হাজার শ্রমিক এই অবরোধে অংশ নেন। অবরোধের কারণে বিমানবন্দর সড়কসহ সংশ্লিষ্ট সড়কে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। সড়কের উভয় পাশে দেখা দেয় তীব্র যানজট। বিশ্বরোড রেল ক্রসিংয়ে দায়িত্বরত পুলিশের বিশেষ শাখার উপপরিদর্শক জসিম উদ্দিন জানান, পুলিশের হস্তক্ষেপে সকাল ১০টা ২০ মিনেটের দিকে অবরোধ তুলে নেন শ্রমিকেরা। এরপর যান চলাচল শুরু হয়।
টঙ্গী: আমাদের প্রতিনিধি জানান, ন্যূনতম বেতন বাড়ানোর দাবিতে আজ বেলা সাড়ে ১১টার দিকে টঙ্গী মডেল থানা ঘেরাও করেন কয়েক শ পোশাকশ্রমিক। পুলিশ, শ্রমিক ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, আজ সকাল ১০টা থেকে টঙ্গী বিসিকি শিল্প এলাকার রেডিসন ওয়াশিং কারখানার কয়েক শ শ্রমিক বেতন বাড়ানোর দাবিতে কারখানার সামনে বিক্ষোভ শুরু করেন।
একপর্যায়ে বিক্ষোভকারী শ্রমিকদের ওপর হামলা হয়। আওয়ামী লীগের স্থানীয় এক নেতা ও কারখানা কর্তৃপক্ষ এই হামলা চালিয়েছে বলে মামুন, মাসুন, পাপিয়া ও মনিরুল নামের কয়েকজন শ্রমিক অভিযোগ করেছেন। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে শ্রমিকদের লাঠিপেটা করে পুলিশ। হামলা ও পুলিশের লাঠিপেটায় অন্তত ২০ জন শ্রমিক আহত হয়েছেন বলে সহকর্মীরা দাবি করেছেন।
এ ঘটনায় শ্রমিকেরা আরও ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন। তাঁরা জড়ো হয়ে বেলা সাড়ে ১১টার দিকে টঙ্গী মডেল থানার ভেতরে ঢোকার চেষ্টা করেন। এসময় থানার মূল ফটক বন্ধ করে দেয় পুলিশ। শ্রমিকেরা থানার মূল ফটকের বাইরে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ মিছিল করতে থাকেন। পুলিশের আশ্বাসে বেলা পৌনে ১২টার দিকে তাঁরা সেখান থেকে সরে স্টেশন রোড মোড়ে টঙ্গী-কালীগঞ্জ আঞ্চলিক মহাসড়ক অবরোধ করেন। বেলা ১২টার দিকে তাঁরা অবরোধ তুলে নেন।
টঙ্গী মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আবুল কালাম আজাদ প্রথম আলো ডটকমকে জানান, হামলাকারীদের আইনের আওতায় আনার ব্যাপারে পুলিশ আশ্বাস দিলে শ্রমিকেরা থানা ঘেরাও ও মহাসড়ক অবরোধ তুলে নেন।
আশুলিয়া: পুলিশ, শ্রমিক ও প্রত্যক্ষদর্শীদের বরাত দিয়ে আমাদের নিজস্ব প্রতিবেদক জানান, আশুলিয়ার জিরাবো এলাকায় আজ সকালে শ্রমিক অসন্তোষ দেখা দেয়। সেখানে পুলিশের সঙ্গে পোশাকশ্রমিকদের সংঘর্ষ ও ধাওয়া-পাল্টাধাওয়ার ঘটনা ঘটেছে।
আজ সকাল আটটার দিকে জিরাবো বিশমাইল সড়কের উভয় পাশে মাসকাট ও রেডিয়েনসসহ অন্তত ১০টি পোশাক কারাখানার শ্রমিকেরা নিজ নিজ প্রতিষ্ঠানের সামনে জড়ো হন। এরপর তাঁরা সর্বনিম্ন মজুরি আট হাজার টাকায় উন্নীত করার দাবিতে কারখানার ভেতরে না ঢুকে বিক্ষোভ করতে থাকেন।
একপর্যায়ে শ্রমিকেরা অন্যান্য কারখানায় ইটপাটকেল ছোড়েন। সড়ক অবরোধের চেষ্টা করলে পুলিশ তাঁদের ধাওয়া করেন। এ সময় পুলিশের সঙ্গে তাঁদের ঘণ্টাব্যাপী দফায় দফায় সংঘর্ষ হয়।
শিল্প পুলিশ আশুলিয়া জোনের পরিদর্শক আবদুস সাত্তার প্রথম আলো ডটকমকে বলেন, সকাল ১০টা থেকে পরিস্থিতি পুলিশের নিয়ন্ত্রণে থাকলেও শ্রমিকেরা বিভিন্ন অলিগলিতে অবস্থান নিয়েছেন। ওই এলাকাসহ পুরো শিল্প এলাকায় বিপুলসংখ্যক পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।
কালিয়াকৈর: কালিয়াকৈর থানার পরিদর্শক (তদন্ত) আহসানউল্লাহ প্রথম আলো ডটকমকে জানান, ন্যূনতম বেতন বাড়ানোর দাবিতে গাজীপুরের কালিয়াকৈর উপজেলার চন্দ্রা পল্লী বিদ্যুত্ এলাকায় আজ সকাল সাড়ে আটটার দিকে কয়েকটি কারখানার শ্রমিকেরা কাজে না গিয়ে কর্মবিরতি ও বিক্ষোভ শুরু করেন। একপর্যায়ে তাঁরা ওই এলাকায় ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কে গাছের গুঁড়ি ফেলে অবরোধ সৃষ্টি করেন। পুলিশ সকাল সাড়ে নয়টার দিকে ঘটনাস্থলে গিয়ে শ্রমিকদের সরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করে। এ সময় শ্রমিকেরা পুলিশকে লক্ষ্য করে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করেন। পোশাকশ্রমিকদের ছত্রভঙ্গ করতে পুলিশ লাঠিপেটা ও কাঁদানে গ্যাসের শেল নিক্ষেপ করে। এ সময় অন্তত ১০ জন আহত হন।