শেষ পর্যন্ত শিল্পী সমিতির সাধারণ সম্পাদকের পদ হারালেন চিত্রনায়ক জায়েদ খান। তার প্রার্থিতা বাতিল করেছেন আপিল বোর্ড। চিত্রনায়িকা নিপুণকে সাধারণ সম্পাদক ঘোষণা করা হয়েছে। গতকাল সন্ধ্যায় এফডিসিতে এই সিদ্ধান্তের কথা জানান আপিল বোর্ডের চেয়ারম্যান সোহানুর রহমান সোহান।
নির্বাচনী তফসিলের ১০ নম্বর ধারা মোতাবেক আচরণবিধি ভঙ্গের অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় জায়েদ খানের প্রার্থিতা বাতিল করা হয়েছে বলে জানান সোহান। জায়েদের প্রার্থিতা বাতিল হওয়ায় বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নিপুণ আক্তারকে সাধারণ সম্পাদক পদে বিজয়ী ঘোষণা করা হয়। জায়েদের বিরুদ্ধে ভোট কেনার অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় এই সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে বলে জানায় আপিল বোর্ড। দুজন সাক্ষী ভোট দেয়ার বিনিময়ে অর্থ নেয়ার কথা স্বীকার করায় এই সিদ্ধান্ত দিয়েছে বোর্ড।
সোহান আরও বলেন, নির্বাচনের তফসিলে স্পষ্ট উল্লেখ রয়েছে যে, এমন অভিযোগ প্রমাণিত হলে ওই প্রার্থীর প্রার্থিতা নির্বাচন কমিশন বাতিল করতে পারবেন। অভিযোগ পেয়েও বিষয়টি আমলে না নিয়ে নির্বাচন কমিশন প্রধান পীরজাদা শহীদুল হারুন দায়িত্বজ্ঞানহীনতার পরিচয় দিয়েছেন। এবং তার পক্ষপাতদুষ্টতার বিষয়টি স্পষ্ট হয়েছে। এ বিষয়ে প্রার্থীরা আপিল বোর্ডে অভিযোগ করেন। আমরা সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের দিকনির্দেশনা চাইলে তারা আমাদেরকে চিঠি দেয়। চিঠি মোতাবেক আপিল বোর্ড বিষয়টির তদন্ত করে অভিযোগের সত্যতার প্রমাণ পেয়ে অভিযুক্ত প্রার্থী জায়েদ খান ও চুন্নুর প্রার্থিতা বাতিল ঘোষণা করেছে।
এর আগে গত ২৮শে জানুয়ারি অনুষ্ঠিত হয়েছিল বাংলাদেশ শিল্পী সমিতির নির্বাচন। সেখানে সাধারণ সম্পাদক পদে তৃতীয়বারের মতো জয়লাভ করেন জায়েদ খান। যদিও নির্বাচণের দিনই তার বিরুদ্ধে টাকার বিনিময়ে ভোট কেনার অভিযোগ তুলেন নিপুণ। পরবর্তীতে বেশ কয়েক দফায় নিপুণ অভিযোগ তোলেন, নির্বাচনে দুর্নীতি করেছেন জায়েদ। এসব অভিযোগ নিয়ে সংবাদ সম্মেলনও করেছিলেন নিপুণ। ভোটের দিন একজন পুলিশ কর্মকর্তার সঙ্গে জায়েদ খানের কথোপকথনের একটি স্ক্রিনশটও ফাঁস করেন তিনি। যদিও সেই স্ক্রিনশট বানোয়াট বলে দাবি করেন জায়েদ খান।
পরবর্তীতে নিপুণ লিখিত অভিযোগ জানান নির্বাচনীয় আপিল বোর্ডের কাছে। এরপর আপিল বোর্ড দিকনির্দেশনা চায় সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের কাছে। মন্ত্রণালয় থেকে বিষয়টি বৈঠকের মাধ্যমে সুরাহা করার নির্দেশনা আসে আপিল বিভাগের কাছে। তারই ধারাবাহিকতায় গতকাল বিকালে বৈঠক ডাকে আপিল বোর্ড। আগের দিন মানবজমিনকে এই বৈঠক ও আপিল বিভাগকে অবৈধ বলে দাবি করেন জায়েদ খান।
গতকাল সন্ধ্যায় এই বৈঠকে নিপুণ উপস্থিত থাকলেও জায়েদ খান ছিলেন অনুপস্থিত। তার অনুপস্থিতিতেই সোহানুর রহমান সোহান ঘোষণা করেন, শিল্পী সমিতির সাধারণ সম্পাদক হিসেবে জায়েদ খানের প্রার্থিতা বাতিলের কথা। এদিকে দু’দিন আগেই সোহানুর রহমান সোহানসহ আপিল বোর্ড ও সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের পাঁচজনকে জায়েদ খান লিগ্যাল নোটিশ পাঠান। আপিল বোর্ডের সবার বিরুদ্ধে মামলা করবেন বলেও জানান তিনি।
উল্লেখ্য, এর আগে দুই মেয়াদে চার বছর চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেছেন জায়েদ খান। তখন তার সঙ্গে সভাপতি ছিলেন মিশা সওদাগর। সর্বশেষ নির্বাচনে সভাপতি পদে বিজয়ী হয়েছেন বরেণ্য অভিনেতা ইলিয়াস কাঞ্চন। ২৮শে জানুয়ারি হয়ে যাওয়া শিল্পী সমিতির এই নির্বাচনে ভোটারের সংখ্যা ছিল ৪২৮ জন।
এর মধ্যে ভোট দিয়েছেন ৩৬৫ জন। তাদের প্রদত্ত ভোটেই নতুন নেতৃত্ব এসেছে সংগঠনটিতে। নির্বাচনে ১৯১ ভোট পেয়ে সভাপতি পদে বিজয়ী হয়েছেন ইলিয়াস কাঞ্চন। তার প্রতিদ্বন্দ্বী মিশা সওদাগর পেয়েছেন ১৪৮ ভোট। তখন সাধারণ সম্পাদক পদে বিজয়ী জায়েদ খান পেয়েছিলেন ১৭৬ ভোট। তার প্রতিদ্বন্দ্বী নায়িকা নিপুণ আক্তার পান ১৬৩ ভোট।
Leave a Reply