বুধবার, ২৯ নভেম্বর ২০২৩, ০৩:৩৯

বাংলাদেশসহ দক্ষিণ এশিয়ায় ব্রিটিশ ভিসা বাণিজ্য

বাংলাদেশসহ দক্ষিণ এশিয়ায় ব্রিটিশ ভিসা বাণিজ্য

নিউজ ডেস্ক, লন্ডন / ১০৪
প্রকাশ কাল: বৃহস্পতিবার, ২ নভেম্বর, ২০২৩

শিক্ষার্থী এবং কর্মজীবীদের টার্গেট করে ব্রিটিশ ভিসা বাণিজ্য গড়ে তুলেছে দক্ষিণ এশিয়ার কিছু ব্রোকার।

তারা এ জন্য প্রতিজনের কাছ থেকে আদায় করছে ৮০০ পাউন্ড পর্যন্ত। অথচ এক্ষেত্রে কোনো অর্থই নেয়ার কথা নয়।

এ খবর দিয়ে অনলাইন গার্ডিয়ান বলছে, ব্রিটিশ ভিসা অ্যাপয়েন্টমেন্ট বুকিং করে দিতে এসব বাণিজ্য গড়ে উঠেছে।

অবজার্ভারের এক তদন্তে দেখা গেছে, বাংলাদেশসহ দক্ষিণ এশিয়ার কিছু দেশে বায়োমেট্রিক অ্যাপায়েন্টমেন্ট করে দিতে ব্রোকাররা এই কাজটি করছে।

এ বিষয়ে তারা ফেসবুক এবং টেলিগ্রামে বিজ্ঞাপন দিচ্ছে। বাংলাদেশ, ভারত, পাকিস্তান ও নেপালে এমন একটি বিজ্ঞাপনে বলা হচ্ছে- আপনি কি বৃটেন সফর নিয়ে উদ্বেলিত? ভিসা অ্যাপয়েন্টমেন্ট নিয়ে ঝামেলা এড়িয়ে চলুন।

অন্যরা অফিসিয়াল ঝামেলা এড়াতে সাহায্য করার প্রস্তাব দেয়। প্রতিশ্রুতি দেয় আগেভাগে কোনো অর্থ পরিশোধ ছাড়াই পরের দিন অ্যাপয়েন্টমেন্ট করিয়ে দিতে।

এক্ষেত্রে তারা যৌক্তিক অর্থ দাবি করে। আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থী এবং স্বাস্থ্যকর্মীদের অতিরিক্ত আবেদনের কারণে কিছু কনস্যুলার সার্ভিসে চাপ পড়েছে।

এই চাপকে ব্যবহার করে আন্ডারগ্রাউন্ড মার্কেট বানিয়ে ফেলেছে কিছু এজেন্ট। বৃটেনে যদি কেউ কমপক্ষে ৬ মাস অবস্থান করতে চান এবং সুনির্দিষ্ট কিছু দেশে স্বল্প মেয়াদে সফরে যেতে চান তাহলে নিজদেশে ব্যক্তিগতভাবে উপস্থিত হয়ে আঙ্গুলের ছাপ ও ছবি তুলতে হয়।

সরাসরি বায়োমেট্রিক অ্যাপায়েন্টমেন্ট বিনামূল্যে করা হয় অথবা অগ্রাধিকারভিত্তিক সার্ভিসের ক্ষেত্রে ৩০ থেকে ৮৫ পাউন্ড নেয়া হয়। দক্ষিণ এশিয়ার কিছু মানুষ ভিএফএস গ্লোবালের মাধ্যমে স্লট পেতে জটিলতার মুখোমুখি হন।

এ অঞ্চলে ব্রিটিশ ভিসা আবেদন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কাছ থেকে কন্ট্রাক্টে প্রক্রিয়া করে এই কোম্পানি। এই পদ্ধতি স্থানীয়রা বিভিন্নভাবে ব্যবহার করে। এজেন্টদের কেউ কেউ নতুন প্রকাশিত স্লট প্রকাশ হওয়ার পর পরই সরাসরি ক্লায়েন্টের পক্ষে তা বুকিং দেন।

অন্যরা ভিএফএস গ্লোবালের বুকিং পোর্টাল মনিটর করেন। এজেন্টরা বাতিল করার আগে বা অর্থ শোধ করা ক্লায়েন্টের পক্ষে নতুন করে স্লট বুকিং করার আগে নতুন নতুন অ্যাপয়েন্টমেন্টের জন্য অনুরোধ করেন, যা তাদের প্রয়োজন নেই।

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলেছে, তারা এই প্রতারণামূলক আচরণ মোকাবিলার চেষ্টা করছে। এই সমস্যা সবচেয়ে খারাপ পাকিস্তানে। সেখানে এজেন্টরা এই অ্যাপয়েন্টমেন্ট সিস্টেম লঙ্ঘন করেন।

গত এক বছরে সেখানে এই ধারা উল্লেখযোগ্য হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। সেখান থেকে যেসব মানুষ বৃটেনের ভিসার জন্য আবেদন করেছেন তারা বলেছেন, অফিসিয়াল চ্যানেলের মাধ্যমে অ্যাপয়েন্টমেন্ট পাওয়ার চেষ্টা করার পর এজেন্টের কাছে যাওয়া ছাড়া তাদের সামনে বিকল্প কোনো পথ নেই।

পাকিস্তান থেকে স্টুডেন্ট ভিসার জন্য আবেদন করেছেন এক আফগান নাগরিক। তিনি বলেন, সেপ্টেম্বরে বার বার বুকিং দেয়ার পোর্টাল চেক করেছেন। কিন্তু প্রতিবারই দেখতে পেয়েছেন সব বুক হয়ে গেছে। কোনো ফাঁকা নেই।

অন্যদিকে এক থেকে তিনদিনের মধ্যে স্লট পাইয়ে দেয়ার জন্য প্রতিজনের কাছ থেকে আড়াই লাখ পাকিস্তানি রুপি বা ৭৩৫ ডলার দাবি করে এজেন্টরা।

তিনি আরও বলেন, আপনি যদি ভিএফএস অফিসে যেতে চান, তাহলে কাউকে না কাউকে অর্থ দিতে হবে। আমার বন্ধুদের কেউই নরমাল অ্যাপয়েন্টমেন্ট বুক করতে পারেনি।

যদি তারা কেউ নরমাল অ্যাপয়েন্টমেন্ট সরাসরি করতে সক্ষম হতো, তাহলে এসব মানুষকে এত অর্থ দিতো না কেউ।

দক্ষিণ-পূর্ব পাকিস্তানের গুজরানওয়ালার কামোকের আরেকজন আবেদনকারী বলেছেন, ইসলামাবাদ থেকে জরুরি অ্যাপয়েন্টমেন্ট বুক করে দিতে এক লাখ ৯০ হাজার পাকিস্তানি রুপি বা প্রায় ৫৬০ ডলার দাবি করেছে। ৬ ঘন্টা গাড়ি চালিয়ে তিনি ভিএফএস গ্লোবাল সেন্টারে গিয়ে দেখতে পান অ্যাপয়েন্টমেন্ট নেই। পরে তিনি আরেক এজেন্টকে ৪০ হাজার রুপি দিয়েছেন।

তিনি তাকে আট দিনের মধ্যে স্লট নিশ্চিত করে দিয়েছেন। বিলম্ব হওয়া মানে তাকে ব্রিটেনের ফ্লাইট মিস করতে হবে। তাতে তার বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লাস শুরুর তারিখ মিস হয়ে যাবে।

তিনি বলেন, তার দেশের ‘অ্যাপয়েন্টমেন্ট বিক্রির এসব মিডলম্যান’ হলো প্রতিটি শিক্ষা বিষয়ক কনসালট্যান্ট।

তিনি আরও বলেন, যদি আপনি পাকিস্তানে কোনো ভিএফএস সেন্টারের সামনে দাঁড়ান, তাহলে অনেক মানুষ আপনার কাছে আসবে এবং জানতে চাইবে- আপনার কি অ্যাপয়েন্টমেন্ট লাগবে?




Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *



পুরানো সংবাদ সংগ্রহ

সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি রবি
 
১০১১১২
১৩১৪১৫১৬১৭১৮১৯
২০২১২২২৩২৪২৫২৬
২৭২৮২৯৩০  
All rights reserved © shirshobindu.com 2023