শুক্রবার, ০৪ অক্টোবর ২০২৪, ০৯:০৫

মারিয়া বিনতে শামউন কিবতিয়া (রা.)

মারিয়া বিনতে শামউন কিবতিয়া (রা.)

আজ শুক্রবার। পবিত্র জুমাবার। আজকের বিষয় ‘মারিয়া বিনতে শামউন কিবতিয়া (রা.)’। শীর্ষবিন্দু পাঠকদের জন্য এই বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেছেন ‘ইসলাম বিভাগ প্রধান’ ইমাম মাওলানা নুরুর রহমান।

মারিয়া বিনতে শামউন কিবতিয়া (রা.)। কিবতীয় মারিয়া নামে অধিক পরিচিত, ছিলেন একজন মিশরীয় খ্রীষ্টান নারী। ৬২৮ সালে তৎকালীন আলেক্সান্দ্রীয় কিবতীয় অর্থডক্স রাজ্যপাল মুকওকিস তাঁকে ও তাঁর বোন সিরিন বিনতে শামউনকে ইসলামের নবী হজরত মুহম্মদের নিকট উপহার হিসেবে প্রেরণ করে। মারিয়া ও তাঁর বোন উভয়ই কৃতদাসী ছিলেন।

প্রিয়নবীর দাসী। নবীপুত্র ইবরাহিমের (রা.) মা। তিনি মূলত মিশরের অধিবাসী। মিশরের হাফান গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। মুয়াবিয়া ইবনে আবু সুফিয়ান (রা.) তাঁর খেলাফতকালে এ মহিয়সী নারীর সম্মানার্থে ওই গ্রাম থেকে কর মাফ করে দিয়েছিলেন। তিনি প্রথমে খ্রিস্টান ছিলেন। ইস্কান্দারিয়ার স¤্রাট মুকাওকিস তাকে নবীজির কাছে উপঢৌকন হিসেবে পাঠিয়েছিল। সময়টি ছিল ৭ম হিজরির ঐতিহাসিক হুদায়বিয়ার সন্ধির পর।

সম্রাট মুকাওকিস নবীজির কাছে মারিয়া কিবতিয়ার (রা.) সঙ্গে আরও কিছু মূল্যবান জিনিসও হাদিয়া করেছিল। তার মধ্যে ছিল মারিয়ার বোন শিরিন, একহাজার মিসকাল স্বর্ণ, ২০টি মোলায়েম কাপড়, তার নিজস্ব খচ্চর দুলদুল এবং উফাইর নামে তার একটি গাধা। এ সবকিছু স¤্রাট পাঠিয়েছে সাহাবি হাতেব ইবনে বালতাআ (রা.)-এর সঙ্গে করে। তিনিই মূলত মারিয়াকে (রা.) ইসলাম গ্রহণ করার জন্য উৎসাহিত করেন। এতে করে তিনি ও তাঁর বোন ইসলাম গ্রহণ করেন। (আল ইসাবাহ, ইবনে হাজারকৃত : ৮/৩১০)।

মারিয়াকে নবীজি নিজের জন্য নির্বাচন করেন আর তাঁর বোন শিরিনকে কবি সাহাবি হাসসান বিন সাবেত (রা.)-এর জন্য দিয়ে দেন। মারিয়া ছিলেন খুবই সুদর্শনা। চুলগুলো ছিল কোঁকড়ানো। কোনো কোনো ইতিহাসবিদ বলেছেন, সে সময়ে আরবদের মধ্যে তাঁর মতো গুণবতী নারী চোখে পড়ত না। মহানবী (সা.) তাকে খুবই মর্যাদা দিতেন। তাকে কুবায় রেখেছিলেন। মাঝে-মধ্যে তাঁর কাছে তাশরিফ নিয়ে যেতেন। দাসী হিসেবে অন্তরঙ্গ হতেন।

এজন্য তার ওপর পর্দার বিধান আরোপ করেন। ৮ম হিজরির জিলহজ মাসে তাঁর গর্ভে আসে নবীপুত্র ইবরাহিম। নবীপতœীরা তার সঙ্গে বরাবরই ঈর্ষা করতেন, তখন এটার মধ্যে আরও মাত্রা বৃদ্ধি পায়। (আততবাকাতুল কুবরা : ৮/২১২, ১/১৩৫; আসসিরাতুন নববিয়্যাহ : ৪/৬০১)। নবীপতœী আয়েশা (রা.) বলেন, ‘আমি কোনো নারীর ওপর এতটুকু ঈর্ষা করতাম না, যতটুকু ঈর্ষা করতাম মারিয়ার ওপর। কারণ, তিনি ছিলেন খুবই সুদর্শনা।

রাসুলও ছিলেন তাঁর প্রতি মুগ্ধ হযরত মারিয়া ছিলেন একজন বিধবা খ্রিষ্টান নারী। তিনি মারিয়া আল কিবতিয়া সপ্তম হিজরী সালে। মিশরের শাসনকর্তা মুকাউকিসকে হযরত রাসূল (সঃ) ইসলামের আহ্বান জানিয়ে পত্র লেখেন। পত্রবাহক ছিলেন হাবিত ইবনে আবু বলতা (রাঃ)।

মিশরের অধিপতির নিকট পত্রখানা হস্তগত হলে এর বড়ই সম্মান দেখান। যদিও তিনি ইসলাম গ্রহণ করেননি। তথাপি অত্যন্ত বিণয় ও নম্র ভাষায় পত্রের উত্তর দেন। তার বশ্যতার নিদর্শন স্বরূপ মারিয়া ও শিরীন নামক দুইজন খ্রিষ্টান দাসী, একজন গােলাম, দুলদুল নামক একটি ঘােড়া, একটি খচ্চর এবং হাজার মিসকাল সােনা ও কাপড় চোপড় উপঢৌকন হিসেবে হযরত রাসূল (সঃ) – এর খেদমতে পেশ করেন। হযরত মারিয়া কিবরিয়ার পূর্ব নাম ছিল মেরী।

হযরত রাসূল (সঃ) তাকে ইসলাম ধর্মে দীক্ষিত করার সময় তার নাম রাখেন মারিয়া কিবতিয়া। মারিয়ার অনুরােধে এবং তাদের প্রতি সম্মান দেখাতে মারিয়া কিবতিয়াকে স্ত্রীর মর্যাদা প্রদান করেন। হযরত মারিয়া (রাঃ) – এর গর্ভে হযরত রাসূল (সঃ) – এর একটি পুত্র সন্তান। জন্মগ্রহণ করেন। তার নাম রাখা হয়েছিল হযরত ইব্রাহীম (রাঃ) । পুত্রটি শিশুকালেই ইন্তেকাল করেন।




Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *



পুরানো সংবাদ সংগ্রহ

সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি রবি
 
১০১১১২১৩
১৪১৫১৬১৭১৮১৯২০
২১২২২৩২৪২৫২৬২৭
২৮২৯৩০৩১  
All rights reserved © shirshobindu.com 2012-2024