মঙ্গলবার, ১৩ মে ২০২৫, ১০:৫০

লন্ডনে বিএনপি-জামায়াতের গোপন সমঝোতা!

লন্ডনে বিএনপি-জামায়াতের গোপন সমঝোতা!

অতি সম্প্রতি লন্ডনে বিএনপি-জামায়াতের শীর্ষ নেতাদের বৈঠকে কী আলোচনা হয়েছে তা এখনো অজানা। দুই দলের পক্ষ থেকেই আনুষ্ঠানিকভাবে কিছুই বলা হয়নি। এ কারণেই বাড়ছে কৌতূহল।

দু’দলের মধ্যে যে দূরত্ব বেড়েছিল তার কি কিছুটা অবসান হয়েছে? কেন দূরত্ব তৈরি হলো, কারা এর জন্য দায়ী তা নিয়ে দু’দলের নেতারা আলোচনা করেছেন। খুঁজেছেন উত্তর। চলমান রাজনীতি ও ভবিষ্যৎ নির্বাচন নিয়ে দীর্ঘসময় আলোচনা হলেও সুনির্দিষ্ট কোনো সিদ্ধান্তের দিকে হাঁটেননি নেতারা।

যদিও বৈঠকটি ছিল মূলত মানবিক। তবে এক ঘণ্টার এই বৈঠকে বেশির ভাগ সময় রাজনীতির চর্চাই হয়েছে। অসুস্থ বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াকে দেখতেই জামায়াতের আমীর ডা. শফিকুর রহমান সেখানে যান। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের বাসায় তারা মিলিত হন।

ডা. শফিকুর রহমান ইউরোপীয় ইউনিয়নের আমন্ত্রণে ব্রাসেলস গিয়েছিলেন। ইউরোপীয় নেতাদের কাছে তারা তাদের অবস্থান তুলে ধরেছেন। জামায়াত কী চায় তাও স্পষ্ট করেছেন। প্রথমবারের মতো অনুষ্ঠিত এই বৈঠককে তারা অত্যন্ত সফল বলে বর্ণনা করছেন বিভিন্ন মাধ্যমে।

বেগম জিয়ার সঙ্গে বৈঠক হবে এ নিয়ে কোনো জল্পনা ছিল না। অনেকটা নাটকীয়ভাবেই ডা. শফিকুর রহমান সেখানে হাজির হন। দু’দলের শুভাকাঙ্ক্ষীরা এই বৈঠকের ব্যাপারে নানাভাবে তাগিদ দিয়ে আসছিলেন। এর আগে অবশ্য ফোনালাপ হয় দু’পক্ষের মধ্যে।

তারেক রহমান নিজেই জামায়াতের আমীরকে স্বাগত জানান। যা ছিল অত্যন্ত আন্তরিকতায় ভরা। নিজ হাতে তিনি তাদের আপ্যায়িত করেন তার বাসভবনে। আলোচনার শুরুটা ছিল আবেগময়। অসুস্থ খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা কেমন, কীভাবে তার দিন কাটছে তা জানার চেষ্টা করেন ডা. শফিকুর রহমান। কবে দেশে ফিরবেন তাও জানতে চান ডা. শফিক। এরপর ধীরে ধীরে রাজনৈতিক আলোচনা শুরু হয়।

২০০১ সনের নির্বাচনে বিএনপি-জামায়াতের নেতৃত্বে চারদলীয় জোট গঠিত হয়। ক্ষমতায় আসে জোট। বাংলাদেশের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো সরকারে স্থান পায় জামায়াত। মতিউর রহমান নিজামী ও আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ মন্ত্রী হন। যা নিয়ে বিএনপি প্রচণ্ড সমালোচনার মুখে পড়ে।

ওয়ান-ইলেভেনের আগ পর্যন্ত তাদের মধ্যে সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্কই ছিল বহাল। এরপর থেকে দূরত্ব বাড়তে থাকে। বেগম জিয়া যান কারাগারে মিথ্যা মামলায়। জামায়াত নেতাদের ফাঁসি কার্যকর হয়। জাতীয়-আন্তর্জাতিক নানা খেলায় দু’দলের ঐক্যে ফাটল ধরে । অনেকটা প্রকাশ্যেই একে অপরকে দোষারোপ করতে থাকেন। সুযোগ নেয় ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ সরকার।

লন্ডন বৈঠকে বেগম জিয়া খুব কম কথা বলেছেন। তবে তার কথাবার্তার মধ্যে ঐক্যের সুর ছিল। তারেক রহমান আলোচনা এগিয়ে নিয়েছেন। ডা. শফিকুর রহমান বার কয়েক বলেছেন, কোত্থা থেকে কী হলো জানি না। কিন্তু আমাদের তরফে ঐক্য ভাঙার কোনো চেষ্টা ছিল না। বিএনপির নেতাদের বক্তৃতা-বিবৃতি পর্যালোচনা করলেই এর জবাব খুঁজে পাওয়া যাবে। তারেক রহমান তার অবস্থান খোলাসা করেন।

তিনি বলেন, এতবড় পার্টির কোথায়, কোন নেতা কী বলেছেন তা মনিটর করা সম্ভব নয়। কিন্তু দলের কোনো সিদ্ধান্ত ছিল না আমি যতটুকু জানি। তখন বেগম জিয়া অত্যন্ত স্বল্প কথায় বিএনপি-জামায়াত ঐক্যের পটভূমি বর্ণনা করেন। যাতে বৈঠকের পরিবেশ অন্যদিকে মোড় নেয়।

এরপর ডা. শফিক আলোচনার প্রসঙ্গ পাল্টে চলমান রাজনীতির দিকে  আলোকপাত করেন। ঘোলা পানিতে মাছ শিকারে একটি বাইরের শক্তি নানা ষড়যন্ত্র করছে তা নিয়েও তারা আলোচনা করেন এবং তারা একমত হন।

কবে নির্বাচন হতে পারে তা নিয়ে বেশ কিছু সময় আলোচনা হয়। নির্বাচনের সময়সীমা নিয়ে দু’দলের অবস্থান কাছাকাছি নয়, বিপরীতমুখী। দু’দলের মধ্যে দূরত্ব কমাতে কিছু করণীয় নিয়েও কথাবার্তা হয় তাদের মধ্যে। আরো ধৈর্য, আরো সংযমের উপর জোর দেন নেতারা। ঢাকায় একটি সূত্র নিশ্চিত করেছে, ভবিষ্যতে দু’দলের সম্পর্কে ফাটল ধরে এমন কোনো কাজকে প্রশ্রয় দেবেন না কেউই- সেই বিষয়েও তারা এক অলিখিত সিদ্ধান্তে পৌঁছান।

প্রসঙ্গত, পর্যবেক্ষকরা পরস্পরবিরোধী অবস্থান থেকে এক কক্ষে বসাটাকেও ইতিবাচক বলে মনে করছেন।  কারণ দু’দলের মধ্যে উদ্বেগ ছিল, ছিল বেদনা। একে অপরকে প্রতিদ্বন্দ্বী ভাবতে শুরু করেছিল। গেল সপ্তাহে বিএনপি-জামায়াতের শীর্ষ নেতারা এক বৈঠকে মিলিত হন।




Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *



পুরানো সংবাদ সংগ্রহ

সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি রবি
 
১০১১
১২১৩১৪১৫১৬১৭১৮
১৯২০২১২২২৩২৪২৫
২৬২৭২৮২৯৩০৩১  
All rights reserved © shirshobindu.com 2012-2025