বুধবার, ১৪ মে ২০২৫, ১২:৪৪

ব্রিটেনে স্কুল পাঠ‌্যক্রমে যৌন শিক্ষা ইস্যুতে উদ্বিগ্ন অভিভাবকরা

ব্রিটেনে স্কুল পাঠ‌্যক্রমে যৌন শিক্ষা ইস্যুতে উদ্বিগ্ন অভিভাবকরা

মুসলিম, দক্ষিণ এশীয় এবং ব্রিটিশ বাংলাদেশি পরিবারগুলোর জন্য পাঠ্যক্রম পরিবর্তন চ্যালেঞ্জ এবং উদ্বেগের সৃষ্টি করছে। বিশেষ করে নতুন পরিস্থিতিতে নিজেদের সন্তা‌ন‌দের নৈতিক মূল‌্যবো‌ধের বিষয়‌টি নি‌য়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন বাংলাদেশি ও ব্রিটিশ বাংলাদেশি অভিভাবকরা।

ব্রিটেনের বিদ্যালয়গুলো‌তে প্রাথমিক পর্যায় থেকে পাঠ‌্যক্রমে যৌন শিক্ষা ও ট্রান্স‌জেন্ডার ইস্যু নি‌য়ে বিতর্ক বেড়েই চলেছে। স্কুলগু‌লোর হোয়াটসঅ্যাপ গ্রু‌পগু‌লো‌তে এ বিষয়ে অভিভাবকদের বিভিন্ন মতের লড়াই দেখা যাচ্ছে।

অনেক মুসলিম, দক্ষিণ এশীয় এবং ব্রিটিশ বাংলাদেশি অভিভাবকদের কাছে যৌন শিক্ষা এবং লিঙ্গান্তরিত‌দের সচেতনতা সম্পর্কিত অন্তর্ভুক্তিমূলক পাঠ্যক্রম তাদের গভীরভাবে লালিত ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক মূল্যবোধের প্রতি একটি চ্যালেঞ্জ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। প্রধান উদ্বেগ হলো শিশু‌দের সেই বয়স‌টি। এত ছোট বয়সে তাদের সামনে যৌন অভিযোজন এবং লিঙ্গ পরিচয়ের বিষয়টি আনা হচ্ছে।

বাংলাদেশি অভিভাবকরা মনে করেন, পাঠ্যক্রমটি শিশু‌দের বয়‌সের সা‌থে উপযুক্ত নয়। ছোট শিশুদের সাম‌নে এমন বিষয়গু‌লো উন্মোচিত করা হ‌চ্ছে যা তারা আবেগগত বা জ্ঞানগতভাবে প্রক্রিয়াকরণের জন্য প্রস্তুত নয়, যার ফলে বিভ্রান্তি এবং উদ্বেগের সৃষ্টি হয়।

মুসলমান ও দক্ষিণ এশীয় কমিউনিটির অনেক অভিভাবক পাঠ্যক্রম এবং কীভাবে এই সংবেদনশীল বিষয়গুলো শেখানো হয় সে সম্পর্কে সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে ক্রমশ গুরুত্বহীন ও প্রান্তিক হওয়ার উদ্বেগ প্রকাশ করছেন। তারা বৃহত্তর স্বচ্ছতা, অর্থপূর্ণ পরামর্শ এবং তাদের সন্তানদের নির্দিষ্ট পাঠ থেকে অব্যাহতি দেওয়ার অধিকারের পক্ষে কথা বলছেন যা তাদের মৌলিক বিশ্বাসের সাথে সাংঘর্ষিক– এমন একটি অধিকার যা তারা মনে করেন ক্রমশ সীমিত করা হচ্ছে।

পরিচয়ের ওপর প্রভাব: এমন উদ্বেগ রয়েছে যে লিঙ্গান্তরিত পরিচয়ের উপর জোর দেওয়া অল্প বয়স্ক, প্রভাবিত হওয়ার মতো শিশুদের ওপর অযাচিত প্রভাব ফেলতে পারে, যা তাদের নিজস্ব লিঙ্গ সম্পর্কে এমনভাবে প্রশ্ন করতে পরিচালিত করে যা তাদের সাংস্কৃতিক বোঝাপড়া এবং পিতামাতার দিকনির্দেশনার সাথে সাংঘর্ষিক হতে পারে।

মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে অর্জিত জ্ঞানের ওপর ভিত্তি করে শিক্ষা সম্প্রসারিত করা হয়। স্বাস্থ্য সম্পর্কে শিক্ষার্থীদের বোধগম্যতা বৃদ্ধি করা হয়, যেখানে মাদক ও অ্যালকোহলের মতো ঝুঁকিপূর্ণ বিষয়গুলো অন্তর্ভুক্ত থাকে।

ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ইতিবাচক ও স্বাস্থ্যকর যৌন সম্পর্ক কীভাবে স্থাপন করা যায় তা শেখানো হয়। সম্মতির গুরুত্ব এবং সম্মতি সম্পর্কিত আইন শেখানো হয় স্কু‌লের নবম বর্ষে। গর্ভনিরোধ, গর্ভধারণের বিকল্প এবং গার্হস্থ্য সহিংসতা নিয়ে আলোচনা করা হয়। সেই সাথে নিরাপদ যৌনতার বিষয়ে তথ্য দেওয়া হয়।

প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের লিঙ্গ পরিচয়ের ক্ষেত্রে তাদের ‘জন্মের লিঙ্গ’ (Sex-based pronouns) অনুযায়ী নাম ব্যবহার করার কথা বলা হয়েছে। মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে, শিক্ষার্থীর অনুরোধ বিবেচনা করা যেতে পারে, তবে শিক্ষক বা শিক্ষার্থীদের পছন্দের সর্বনাম ব্যবহার করতে বাধ্য করা উচিত নয়।

বিদ্যালয়গুলোকে একক লিঙ্গের স্থান, যেমন— টয়লেট এবং চেঞ্জিং রুমগুলোর সুরক্ষার বিষয়ে সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে এবং লিঙ্গান্তরিত শিক্ষার্থীদের ব্যবহারের ক্ষেত্রে একটি সতর্কতামূলক পদ্ধতি অবলম্বন করতে পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। শিক্ষার্থীদের পোশাকের ক্ষেত্রে বিদ্যালয়ের নীতি নমনীয় করার পরামর্শ দেওয়া হয় যাতে লিঙ্গান্তরিত শিক্ষার্থীরা তাদের পছন্দের পোশাক পরতে পারে।

সাধারণভাবে, প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সম্পর্কের মূল বিষয়গুলোর ওপর ভিত্তি স্থাপন করা হয় এবং বয়ঃসন্ধির প্রাথমিক পরিবর্তনগুলো শেষ দিকে (যেমন: পঞ্চম ও ষষ্ঠ বর্ষে) আলোচনা করা শুরু হয়। মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে (সপ্তম বর্ষ এবং তার পরে), যৌনতা, সম্মতি এবং লিঙ্গ পরিচয়ের মতো বিষয়গুলো আরও বিস্তারিতভাবে আলোচনা করা হয়। নবম বর্ষের শিক্ষার্থীরা এই বিষয়গুলোর ওপর আরও গভীর জ্ঞান লাভ করে।

দক্ষিণ এশীয়, মুসলমান ও বাংলাদেশি অভিভাবকরা বিষয়গু‌লো নি‌য়ে উদ্বিগ্ন। তারা তা‌দের সন্তা‌ন‌দের মূল‌্যবোধের শিক্ষার বিষয়টি নি‌য়ে উদ্বেগের কথা আমা‌দের জানাচ্ছেন। শিক্ষক ও কর্মীদের বৃহত্তম ইউরোপীয় ইউনিয়নের সর্ববৃহৎ স‌ম্মেল‌ন গত সপ্তা‌হে লিড‌সের হ্যারোগেটে অনুষ্ঠিত হ‌য়ে‌ছে। সেই স‌ম্মেলনেও এ বিষয়গু‌লো আলোচনা হ‌য়ে‌ছে।

সরকার কর্তৃক নতুন নির্দেশিকা অনুসারে, কিছু নির্দিষ্ট বিষয় পড়ানোর ক্ষেত্রে বয়সের সীমা নির্ধারণের প্রস্তাব করা হয়েছে। উদাহরণস্বরূপ, প্রস্তাবিত নির্দেশিকা অনুসারে, ৯ বছর বয়সের আগে যৌন শিক্ষা এবং ১৩ বছর বয়সের আগে যৌন কার্যকলাপের সুস্পষ্ট আলোচনা নিষিদ্ধ করা হতে পারে।

এছাড়া, বিদ্যালয়ে লিঙ্গ পরিচয়ের ধারণা পড়ানোও নিষিদ্ধ করার প্রস্তাব করা হয়েছে। তবে, এই প্রস্তাবনা এখনও পর্যালোচনার অধীনে রয়েছে। দশ বছরের কম বয়সী শিশুদের জন্য যৌন শিক্ষা এবং তেরো বছরের কম বয়সীদের জন্য যৌন সঙ্গম সম্পর্কে শিক্ষাদানের বিরুদ্ধে মুসলমান ও বাংলাদেশি অভিভাবকদের অবস্থান রয়েছে।

এটি এই বিশ্বাসকে জোরদার করে যে অল্পবয়সী শিশুদের এই ধারণাগুলো বোঝার মতো মানসিক বা জ্ঞানীয় পরিপক্বতা নাও থাকতে পারে। খুব তাড়াতাড়ি এই বিষয়গুলো উপস্থাপন করলে বিভ্রান্তি, উদ্বেগ এবং সুস্থ সম্পর্কের বিকৃতি ঘটতে পারে।

এর পরিবর্তে, শারীরিক স্বায়ত্তশাসন, সম্মান এবং ব্যক্তিগত নিরাপত্তার মৌলিক পাঠের ওপর মনোযোগ দেওয়া অপরিহার্য, যা তাদের অপ্রতিরোধ্য না করে তাদের বিকাশমূলক চাহিদাগুলোকে আরও ভালোভাবে সমর্থন করতে পারে।

উল্লেখ্য, ২০২০ সালের সেপ্টেম্বর মাস থেকে ইংল্যান্ডের সমস্ত বিদ্যালয়ে ‘সম্পর্ক শিক্ষা’ (Relationships Education) প্রাথমিক শিক্ষার্থীদের জন্য এবং ‘সম্পর্ক ও যৌন শিক্ষা’ (Relationships and Sex Education-RSE) মাধ্যমিক শিক্ষার্থীদের জন্য বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। এছাড়া, ‘স্বাস্থ্য শিক্ষা’ (Health Education)-ও সমস্ত বিদ্যালয়ে বাধ্যতামূলক।




Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *



পুরানো সংবাদ সংগ্রহ

সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি রবি
 
১০১১
১২১৩১৪১৫১৬১৭১৮
১৯২০২১২২২৩২৪২৫
২৬২৭২৮২৯৩০৩১  
All rights reserved © shirshobindu.com 2012-2025