শুক্রবার, ২১ নভেম্বর ২০২৫, ০৫:১৭

ঢাকা ইউনিভার্সিটি অ্যালামনাই ইন দ্য ইউকের অষ্টম বার্ষিক সাধারণ সভা অনুষ্ঠিত

ঢাকা ইউনিভার্সিটি অ্যালামনাই ইন দ্য ইউকের অষ্টম বার্ষিক সাধারণ সভা অনুষ্ঠিত

নিলুফা ইয়াসমীন হাসান, লন্ডন: আনন্দঘন পরিবেশে পূর্ব লন্ডনের রিজেনেন্টস লেক ব্যাংকুয়েটিং হলে অনুষ্ঠিত হয়েছে ঢাকা ইউনিভার্সিটি অ্যালামনাই ইন দ্য ইউকের অষ্টম বার্ষিক সাধারণ সভা ও নির্বাচন। গত ৯ নভেম্বর (রোববার) বিপুল সংখ্যক প্রাক্তন শিক্ষার্থীর অংশগ্রহণে দিনব্যাপী এই আয়োজন উৎসবমুখর পরিবেশে সম্পন্ন হয়।

সভার সভাপতিত্ব করেন বিদায়ী কমিটির সভাপতি প্রশান্ত লাল দত্ত পুরকায়স্থ বি.ই.এম, এবং অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন সাধারণ সম্পাদক মেসবাহ উদ্দীন ইকো।

ইতিহাস: ১৯২১ সালের ১ জুলাই প্রতিষ্ঠিত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় বাংলাদেশের ইতিহাসে গণতান্ত্রিক আন্দোলন, ভাষা আন্দোলন ও মুক্তিযুদ্ধে অনন্য ভূমিকা রেখেছে। দেশ-বিদেশে ছড়িয়ে থাকা এই বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন শিক্ষার্থীদের মধ্যে সৌহার্দ্য ও সম্প্রীতির সেতুবন্ধন গড়ে তোলার লক্ষ্যে ২০১৬ সালের ডিসেম্বরে গঠিত হয় ‘ঢাকা ইউনিভার্সিটি অ্যালামনাই ইন দ্য ইউকে’। পরের বছর ২০১৭ সালের জানুয়ারি থেকে সংগঠনটি পূর্ণাঙ্গভাবে কার্যক্রম শুরু করে। সংগঠনের অন্যতম লক্ষ্য কেবল প্রাক্তন শিক্ষার্থীদের মিলনমেলা নয়, বরং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অসচ্ছল ও মেধাবী শিক্ষার্থীদের বৃত্তি প্রদান করা।

সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন টাওয়ার হ্যামলেটস কাউন্সিলের নির্বাহী মেয়র লুৎফর রহমান। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ঐতিহ্য ও দেশের সকল গণতান্ত্রিক আন্দোলনে এর অগ্রগামী ভূমিকার প্রশংসা করেন।

তাঁর বক্তব্যে মেয়র বলেন, ‘যে কোনো সমাজে শিক্ষাই হলো মূল শক্তি। আমাদের সন্তানদের যেন সেরা শিক্ষায় শিক্ষিত করে তোলা যায়, সে লক্ষ্যেই কাজ করতে হবে।’ তিনি ব্রিটিশ সমাজের সঙ্গে সম্পৃক্ত থেকে নিজেদের ঐতিহ্য অক্ষুণ্ণ রাখার পরামর্শ দেন এবং প্রাক্তন শিক্ষার্থীদের ভূয়সী প্রশংসা করেন।

দিনব্যাপী এই আয়োজনে অনুষ্ঠিত হয় সংগঠনের অষ্টম সাধারণ সভা ও নির্বাচন। নির্বাচন কমিশনের প্রধান কমিশনার শাহগীর বখত ফারুক এবং কমিশনার বীর মুক্তিযোদ্ধা দেওয়ান গৌস সুলতান ও ব্যারিস্টার নাজির উদ্দিন চৌধুরীর তত্ত্বাবধানে ২০২৫–২০২৭ মেয়াদের জন্য নতুন কার্যকরী কমিটি ঘোষণা করা হয়। যেহেতু কোনো পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা ছিল না, তাই ভোটগ্রহণ ছাড়াই সর্বসম্মতভাবে নতুন কমিটি গঠিত হয়।

নবনির্বাচিত কমিটির সভাপতি হয়েছেন সিরাজুল বাসিত চৌধুরী এবং সাধারণ সম্পাদক হয়েছেন ব্যারিস্টার মোহাম্মদ কামরুল হাসান (এম কিউ হাসান)। কোষাধ্যক্ষ হিসেবে দায়িত্ব পেয়েছেন সৈয়দ জাফর। এছাড়া সিনিয়র সহ-সভাপতি হয়েছেন মেসবাহ উদ্দীন ইকো এবং সহ-সভাপতি হিসেবে নির্বাচিত হয়েছেন নিলুফা ইয়াসমীন হাসান, রীপা সুলতানা রাকীব ও মির্জা আসাব বেগ।

সভায় বিদায়ী সাধারণ সম্পাদক মেসবাহ উদ্দীন ইকো সংগঠনের গত দুই বছরের কর্মকাণ্ডের প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন এবং কোষাধ্যক্ষ সৈয়দ জাফর আর্থিক প্রতিবেদন পেশ করেন। সংগঠনের বৃত্তি কর্মসূচি সম্পর্কেও বিস্তারিত তুলে ধরা হয়। ২০১৭ সালে শুরু হওয়া এই কার্যক্রমের মাধ্যমে গত বছর ২৫ জন এবং চলতি বছরে ৫০ জন শিক্ষার্থী এককালীন বৃত্তি পেয়েছে। এবারের সাধারণ সভায় প্রাক্তন শিক্ষার্থীরা আগামী বছর আরও দেড়শ শিক্ষার্থীকে বৃত্তি দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।

বর্তমান সাধারণ সম্পাদক এম কিউ হাসান প্রয়াত সদস্য রাজিয়া বেগমের স্মৃতিচারণ করেন। অনুষ্ঠানে প্রয়াত অ্যালামনাই সদস্য রাজিয়া বেগম এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকজন প্রয়াত শিক্ষকের স্মরণে দাঁড়িয়ে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়। কোরআন তেলাওয়াত করেন খালিদ ইয়াহইয়া এবং গীতা পাঠ করেন বিধান মণ্ডল।

সাংস্কৃতিক পর্ব: দুপুরের পর অনুষ্ঠিত হয় এক বর্ণাঢ্য সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন রীপা সুলতানা রাকীব, মিজানুর রহমান, এরিনা সিদ্দিকী সুপ্রভা ও সৈয়দা সুবর্ণা। উদ্বোধনী পরিবেশনা ছিল অ্যালামনাইর সিনিয়র সদস্য মাহফুজা রহমানের লেখা কবিতা ‘আমরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়’।

এরপর গানের পর্বে অংশ নেন রীপা সুলতানা রাকীব, কাজী কল্পনা, বিশিষ্ট শিল্পী সহোদর সায়ীদ জোবায়ের ও সায়ীদ তারেক, কে জি বি কনক, নীলা নিকি খান ও সৈয়দা তামান্না। শিশু শিল্পী প্রাপ্তি দেব সরকার নৃত্য পরিবেশন করেন এবং ড. হাসনিন চৌধুরী আবৃত্তি করেন।

এছাড়া অষ্টম সাধারণ সভা উপলক্ষে একটি স্মারক ম্যাগাজিন প্রকাশ করা হয়। সম্পাদকীয় কমিটিতে ছিলেন প্রশান্ত দত্ত পুরকায়স্থ, মেসবাহ উদ্দীন ইকো, নিলুফা ইয়াসমীন হাসান, এম কিউ হাসান, সৈয়দ জাফর ও মোস্তফা কামাল।

দিনশেষে নবনির্বাচিত সভাপতি সিরাজুল বাসিত চৌধুরী ও সাধারণ সম্পাদক এম কিউ হাসান উপস্থিত সদস্যদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে বলেন, ‘আমরা সবাই মিলে এই সংগঠনকে আরও শক্তিশালী করবো, যেন প্রবাসে থেকেও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ঐতিহ্য, মূল্যবোধ ও সামাজিক দায়বদ্ধতার ধারাটি অটুট থাকে।’

একটি প্রাণবন্ত, মিলনমেলার আবহে পরিপূর্ণ এই দিন শেষে উপস্থিত সকলে গভীর তৃপ্তি নিয়ে বাড়ি ফেরেন— সঙ্গে নিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতি গর্ব ও ঐক্যের উজ্জ্বল স্মৃতি।




Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *



পুরানো সংবাদ সংগ্রহ

সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি রবি
 
১০১১১২১৩১৪১৫১৬
১৭১৮১৯২০২১২২২৩
২৪২৫২৬২৭২৮২৯৩০
All rights reserved © shirshobindu.com 2012-2025