শুক্রবার, ২১ নভেম্বর ২০২৫, ০৫:১৭

মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে হাসিনা ও কামালের মৃত্যুদণ্ড, মামুনের ৫ বছরের কারাদণ্ড

মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে হাসিনা ও কামালের মৃত্যুদণ্ড, মামুনের ৫ বছরের কারাদণ্ড

মানবতাবিরোধী অপরাধে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের মৃত্যুদণ্ডাদেশ দিয়েছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। অন্যদিকে এই মামলায় সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের ৫ বছরের কারাদণ্ড দেয়া হয়েছে। উল্লেখ্য, সাবেক আইজিপি চৌধুরী মামুন এই মামলার অ্যাপ্রুভার(রাজসাক্ষী) ছিলেন।

জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের সময় সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধে শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে করা মামলার রায়ে দু’টি অভিযোগে তাকে মৃত্যুদণ্ড দেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। অপর তিনটি অভিযোগে আমৃত্যু কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত।

এর আগে রায়ের পর্যবেক্ষণে  ট্রাইব্যুনাল বলেছেন, মানবতাবিরোধী অপরাধের যেসব অভিযোগ আনা হয়েছে, তাতে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল ও সাবেক আইজিপি আবদুল্লাহ আল-মামুনের অপরাধ প্রমাণিত হয়েছে।

সোমবার রায় ঘোষণার আগে চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনকে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে (আইসিটি-১) আনা হয়। পুলিশের পাহারায় সকাল ৯টা ৫ মিনিটের দিকে একটি প্রিজন ভ্যানে করে কড়া নিরাপত্তার মধ্য দিয়ে তাকে ট্রাইব্যুনাল প্রাঙ্গণে আনা হয়। তিনি এই মামলায় আটক থাকা একমাত্র আসামি, যিনি পরে রাজসাক্ষী হন। বাকি দুই আসামি সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ভারতে রয়েছেন।

শেখ হাসিনাসহ এ মামলার তিন আসামির বিরুদ্ধে মোট পাঁচটি অভিযোগ আনা হয়েছে। সেগুলো হলো-  উসকানিমূলক বক্তব্য প্রদান; প্রাণঘাতী অস্ত্র ব্যবহার করে আন্দোলনকারীদের নির্মূল করার নির্দেশ; রংপুরে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র আবু সাঈদকে গুলি করে হত্যা; রাজধানীর চানখাঁরপুল এলাকায় আন্দোলনরত ছয়জনকে গুলি করে হত্যা এবং আশুলিয়ায় ছয়জনকে পুড়িয়ে হত্যা করা।

উল্লেখ্য, ২০২৪ সালের ৫ই আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল পুনর্গঠন করা হয়। পুনর্গঠিত ট্রাইব্যুনালে জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের সময় সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের ঘটনায় প্রথম মামলাটি (মিসকেস বা বিবিধ মামলা) হয় শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে।

এ ছাড়া ট্রাইব্যুনালের ইতিহাসে এই প্রথম কোনো মামলায় আসামি ‘অ্যাপ্রুভার’ (দোষ স্বীকার করে ঘটনার সত্য বিবরণ প্রকাশ) হয়েছেন। পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন এই মামলায় ‘অ্যাপ্রুভার’ হওয়ার আবেদন করলে তা মঞ্জুর করেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১।

গত বছরের ১৭ই অক্টোবর পুনর্গঠিত ট্রাইব্যুনালের প্রথম বিচারকাজ অনুষ্ঠিত হয়। সেদিনই এ মামলায় শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন ট্রাইব্যুনাল। শুরুতে এই মামলায় শেখ হাসিনাই একমাত্র আসামি ছিলেন। প্রসিকিউশনের করা আবেদনের প্রেক্ষিতে ১৬ই মার্চ এ মামলায় শেখ হাসিনার পাশাপাশি সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনকে আসামি হিসেবে তা মঞ্জুর করেন ট্রাইব্যুনাল।

এ মামলায় গত ১২ই মে চিফ প্রসিকিউটর কার্যালয়ে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেয় ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থা। পরে গত ১লা জুন আসামিদের বিরুদ্ধে ট্রাইব্যুনালে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ (ফরমাল চার্জ) দাখিল করে প্রসিকিউশন।

এতে শেখ হাসিনাকে জুলাই-আগস্টে নৃশংসতার ‘মাস্টারমাইন্ড, হুকুমদাতা ও সুপিরিয়র কমান্ডার’ হিসেবে বর্ণনা করা হয়। আনুষ্ঠানিক অভিযোগে এই তিন আসামির বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট মোট পাঁচটি অভিযোগ আনা হয়।

এ মামলায় আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগগুলো হলো- গত বছরের ১৪ই জুলাই গণভবনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে শেখ হাসিনার উস্কানিমূলক বক্তব্য প্রদান। হেলিকপ্টার, ড্রোন ও প্রাণঘাতী অস্ত্র ব্যবহার করে আন্দোলনকারীদের নির্মূল করার নির্দেশ প্রদান। রংপুরে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র আবু সাঈদকে গুলি করে হত্যা।

রাজধানীর চানখাঁরপুল এলাকায় ছয় আন্দোলনকারীকে গুলি করে হত্যা এবং আশুলিয়ায় ছয়জনকে পোড়ানোর অভিযোগ। এই পাঁচ অভিযোগে তিন আসামির বিরুদ্ধে গত ১০ই জুলাই আনুষ্ঠানিক অভিযোগ গঠন করেন ট্রাইব্যুনাল। পরে ২৩শে অক্টোবর মামলাটির যুক্তিতর্ক শেষ হয়।

উল্লেখ্য, শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে ট্রাইব্যুনালে আরও ৩টি মামলা রয়েছে। যার মধ্যে দুটি মামলায় আওয়ামী লীগ শাসনামলের সাড়ে ১৫ বছরে গুম-খুনের ঘটনায় তাকে আসামি করা হয়েছে। অপরটি রাজধানীর মতিঝিলের শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলামের সমাবেশে হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় করা মামলা।




Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *



পুরানো সংবাদ সংগ্রহ

সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি রবি
 
১০১১১২১৩১৪১৫১৬
১৭১৮১৯২০২১২২২৩
২৪২৫২৬২৭২৮২৯৩০
All rights reserved © shirshobindu.com 2012-2025