শীর্ষবিন্দু আন্তর্জাতিক নিউজ ডেস্ক: ভারতের জ্যেষ্ঠ কূটনীতিক দেবযানী খোবরাগাড়ে যুক্তরাষ্ট্র ছেড়ে নিজ দেশের পথে রওনা হয়েছেন বলে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে। আজ শুক্রবার টাইমস অব ইন্ডিয়ার খবরে এ কথা জানানো হয়।
এর আগে ভিসা জালিয়াতি ও ভুল তথ্য দেওয়ার অভিযোগে দেবযানীর বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিকভাবে অভিযোগ গঠন করে যুক্তরাষ্ট্র সরকার। তবে দায় থেকে মুক্তির কূটনৈতিক অধিকারবলে তিনি চাইলে যুক্তরাষ্ট্র ত্যাগ করতে পারবেন বলে জানানো হয়। তার গ্রেপ্তার করা নিয়ে ভারত ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে প্রায় একমাস ধরে চলা কূটনৈতিক টানাপড়েনের মধ্যেই নিউ ইয়র্কের গ্র্যান্ড জুরি বৃহস্পতিবার দেবযানীর বিচার শুরুর এই আদেশ দেয়।
অবশ্য কূটনৈতিক হিসাবে আপাতত বিচার প্রক্রিয়া থেকে রেহাই পাচ্ছেন ৩৯ বছর বয়সী দেবযানী। যুক্তরাষ্ট্র সরকারের নির্দেশনা অনুযায়ী ইতোমধ্যে তিনি দেশের পথে উড়াল দিয়েছেন বলে ভারতীয় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বরাত দিয়ে বিবিসি জানিয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রের কৌঁসুলি প্রীত ভারারা ডিস্ট্রিক্ট জাজকে পাঠানো একটি চিঠিতে জানান, খোবরাগাড়ের বিরুদ্ধে এ অভিযোগ বহাল থাকবে। তিনি যদি কূটনৈতিক ছাড় বাদে যুক্তরাষ্ট্রে ফিরে আসেন, তবে তাঁকে বিচারের মুখোমুখি দাঁড়াতে হবে। প্রতিক্রিয়ায় দেবযানী বলেছিলেন, অভিযোগ থেকে অব্যাহতি পেতে আমার যে কূটনৈতিক অধিকার আছে, সেটা আমি আদালতকে দেখাব। এর পরই আমি যুক্তরাষ্ট্র ত্যাগ করব। তবে আদালতে কূটনৈতিক অধিকারের বিষয়টি নিষ্পত্তি করার আগেই আজ যুক্তরাষ্ট্র ছাড়লেন দেবযানী।
গৃহপরিচারিকার ভিসার আবেদনে তথ্য জালিয়াতি এবং তাঁকে নির্ধারিত মজুরির চেয়ে কম মজুরি দেওয়ার অভিযোগে গত ১২ ডিসেম্বর নিউইয়র্কে দেবযানী খোবরাগাড়েকে গ্রেপ্তার করা হয়। গ্রেপ্তারের সময় প্রকাশ্যে তার হাতে হাতকড়া পরানো হয় এবং ধরে নিয়ে গিয়ে বিবস্ত্র করে দেহ তল্লাশি করা হয়। এ ঘটনায় ভারতজুড়ে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া দেখা যায়। এর জের ধরে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ভারতের কূটনৈতিক সম্পর্ক উত্তপ্ত হয়ে ওঠে।
ওই ঘটনায় ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া দেখায় ভারত। নয়া দিল্লিতে যুক্তরাষ্ট্রের দূতাবাস ও কূটনীতিকদের সুযোগ সুবিধা কমিয়ে দেয়ার পাশাপাশি দেবযানীকে অপমান করার জন্য যুক্তরাষ্ট্রকে ক্ষমা চাইতে বলা হয়। ভারত সরকার দেবযানীর মামলা প্রত্যাহার করে নেয়ার দাবি জানালেও যুক্তরাষ্ট্র তার বিচারের বিষয়ে কোনো ছাড় দিতে রাজি হয়নি। বরং অভিযোগ গঠনের সময় পেছানোর যে আবেদন দেবযানী করেছিলেন, যুক্তরাষ্ট্রের আদালতে তাও খারিজ হয়ে যায়।
এর আগে কূটনৈতিক লড়াইয়ের মধ্যে বিচার এড়াতে দেবযানীকে নিউ ইয়র্ক কনস্যুলেট থেকে জাতিসংঘে ভারতের স্থায়ী মিশনে বদলি করে ভারত। অন্যদিকে দেবযানীর বিচার করার জন্য যুক্তরাষ্ট্র তাকে কূটনৈতিক সুরক্ষার আওতার বাইরে রাখতে চাপ দেয়। ভারত তাতে ‘না’ বলার পরই দেবযানীকে দেশে ফেরত পাঠানোর কথা বলে যুক্তরাষ্ট্র।
এজন্য বৃহস্পতিবার তাকে জি-১ ভিসা দেয়া হয়। এর মাধ্যমেই সন্তানদের যুক্তরাষ্ট্রে রেখে পূর্ণ কূটনৈতিক মর্যাদা নিয়ে দেশে ফিরছেন দেবযানী। ভারতে রওনা হওয়ার আগে দেবযানী তার বিরুদ্ধে আনা সব অভিযোগ মিথ্যা ও ভিত্তিহীন উল্লেখ করে নিজেকে নির্দোষ দাবি করেছেন।