প্যারিস ও লন্ডন সিরিয়ার বিদ্রোহীদের অস্ত্র দিয়ে সহায়তার জন্য সবার সমর্থন লাভের চেষ্টা করলেও ইউরোপের অন্য দেশগুলো বিশেষ করে জার্মানি, সুইজারল্যান্ড ও অষ্ট্রিয়া এ নীতির তীব্র বিরোধিতা করেছে। তারা ব্রিটেন ও ফ্রান্স সিরিয়ার সরকার বিরোধী সশস্ত্র গ্রুপগুলোকে অস্ত্র সহায়তা দেয়ার জন্য ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত অন্যদেশগুলোকে রাজি করাতে ব্যর্থ হয়েছে। ডাবলিনে ইউরোপীয় ইউনিয়নের পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের প্রথম দিনের বৈঠকে সিরিয়ার ওপর থেকে অস্ত্র নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয়ার ইস্যুতে ইউরোপীয় ইউনিয়নের সদস্যরা দ্বিধাবিভক্ত হয়ে পড়েছে। বিশেষ করে আল কায়দার মত উগ্র গোষ্ঠীগুলোর হাতে অস্ত্র পৌঁছার পরিণতির কথা বিবেচনা করেই মূলত এ দেশগুলো সিরিয়ার ওপর থেকে অস্ত্র নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয়ার ব্যাপারে আপত্তি জানাচ্ছে।
ফরাসি পররাষ্ট্রমন্ত্রী লরেন ফাবিয়াস দাবি করেছেন, বিদ্রোহীদের হাতে আরো অস্ত্র তুলে দেয়া হলে সিরিয়া সমস্যার দ্রুত সমাধান হবে। তৃতীয় কোনো দেশে সরাসরি সামরিক হস্তক্ষেপ এবং এ ক্ষেত্রে ইউরোপের অন্য দেশগুলোর সমর্থন লাভের জন্য ফ্রান্স ও ব্রিটেনের চেষ্টা এবারই প্রথম নয়। লন্ডন ও প্যারিস এর আগেও লিবিয়ায় সামরিক হস্তক্ষেপে মুখ্য ভূমিকা পালন করেছিল। লিবিয়া যুদ্ধে ফ্রান্স ও ব্রিটেনের যুদ্ধ বিমান অংশ নিয়েছিল। ন্যাটোর নেতৃত্বে লিবিয়ায় সামরিক হামলার ফলে উত্তর আফ্রিকার এ দেশটিতে সশস্ত্র গ্রুপগুলো ক্ষমতায় যাওয়া ছাড়াও অস্ত্র চোরাচালান বহুগুণে বেড়ে গেছে।
২০১১ সালের মার্চে সিরিয়ায় সংকটের শুরু থেকেই পাশ্চাত্য ও তাদের মিত্ররা সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বাশার আল আসাদের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে এবং তার পতন ঘটানোর জন্য সর্বাত্মক চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। সিরিয়ার সরকার বিরোধীদের সমর্থকরা অর্থাৎ পাশ্চাত্য ও তাদের কয়েকটি আরব মিত্র দেশ সিরিয়া সংকটের শুরু থেকেই রাজনৈতিক উপায়ে সিরিয়া সমস্যা সমাধানের বিরোধিতা করে আসছে এবং তাদের দাবি প্রেসিডেন্ট আসাদের পদত্যাগের মাধ্যমেই কেবল সিরিয়া সমস্যার সমাধান হতে পারে।
সিরিয়ার সরকার বিরোধীদের ওপর আল কায়দা গোষ্ঠীর প্রভাব থাকায় বিরোধীদের জন্য পাঠানো অস্ত্র উগ্র আল কায়দা গোষ্ঠীর হাতে পড়বে না এমন নিশ্চয়তা পাশ্চাত্য দিতে পারবে না। এ ছাড়া এসব অস্ত্র পাশ্চাত্যের স্বার্থে কাজে লাগবে এমন নিশ্চয়তাও পাশ্চাত্যের নেতৃবৃন্দ দিতে পারছেন না। কিন্তু তারপরও ফ্রান্স ও ব্রিটেন সিরিয়ার সরকার বিরোধী সশস্ত্র গ্রুপগুলোর কাছে অস্ত্র পাঠানোর ব্যাপারে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। লন্ডন ও প্যারিস ইউরোপের অন্যান্য দেশকেও প্রভাবিত করার জন্য সিরিয়ায় রাসায়নিক অস্ত্র ব্যবহারের বিপদের কথা বারবার বলে আসছে।
যুদ্ধ ও সহিংসতার মাধ্যমে তারা সিরিয়ার ততপর সন্ত্রাসী গ্রুপগুলোকে গোপনে অর্থ ও অস্ত্র দিয়ে সহায়তার পাশাপাশি বিভিন্ন রকম তথ্য দিয়ে তাদেরকে সহযোগিতা করছে। কিন্তু পাশ্চাত্য এখন পর্যন্ত তাদের এ লক্ষ্যে পৌঁছাতে সফল হয়নি এবং ফ্রান্স ও ব্রিটেন কতদিন পর্যন্ত সিরিয়ার ব্যাপারে ইউরোপের সমর্থন পাবে সেটাও দেখার বিষয়।
Leave a Reply