শীর্ষবিন্দু নিউজ ডেস্ক: ২০১২ সালের শেষের দিকে বাংলাদেশী গার্মেন্ট কারখানা তাজরীন ফ্যাশনসের অগ্নিকাণ্ডে ১১২ জন শ্রমিকের প্রাণহানি হয়। ওই কারখানার মালিক দম্পতি রোববার পুলিশের কাছে আত্মসমর্পণ করেছেন। অবহেলার অভিযোগে তাদের বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড়াতে হবে বলে আশা করা হচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাবশালী দৈনিক নিউ ইয়র্ক টাইমসের এক সম্পাদকীয়তে তাজরীন অগ্নিকাণ্ড এবং সংশ্লিষ্ট ঘটনাপ্রবাহ নিয়ে সম্পাদকমণ্ডলীর অভিমত উঠে এসেছে।
জাস্টিস ফর বাংলাদেশী ওয়ার্কার্স’- শীর্ষক ওই সম্পাদকীয়তে আরও বলা হয়, বাংলাদেশে কখনও বা ন্যায়বিচার বিলম্বিত হয়, কখনও বা হয় প্রত্যাখ্যাত। ন্যায়বিচার পাওয়ার বিষয়টি বিশেষ করে গার্মেন্ট শ্রমিকদের ধরাছোঁয়ার বাইরে ছিল এত দিন। দেশটির শক্তিশালী গার্মেন্ট শিল্প প্রায় ৪০ লাখ শ্রমিকের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করেছে। বাংলাদেশের গার্মেন্ট খাত ওয়াল-মার্ট, গ্যাপ, এইচঅ্যান্ডএম-এর মতো পশ্চিমা ক্রেতা প্রতিষ্ঠানের কাছে শত কোটি ডলারের পোশাক বিক্রয় করে থাকে।
অথচ নিরাপত্তা রক্ষায় এ শিল্পে রয়েছে এক শোচনীয় রেকর্ড। সামপ্রতিক বছরগুলোতে কারখানায় একাধিক অগ্নিকাণ্ডে শ’ শ’ গার্মেন্ট কর্মী প্রাণ হারিয়েছেন। তারপরও আইনি বিশেষজ্ঞরা বলছেন, তাজরীনের মালিক দেলোয়ার হোসেন, তার স্ত্রী ও প্রতিষ্ঠানের একজন পরিচালক মাহমুদা আক্তারের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের মাধ্যমে এবারই প্রথমবারের মতো কারখানা অগ্নিকাণ্ড সংক্রান্ত কোন মামলায় নির্বাহী পর্যায়ের কেউ অভিযুক্ত হলেন।
এছাড়া, ২০১৩ সালের এপ্রিলে ধসে পড়া রানা প্লাজার নির্বাহী কর্মকর্তারা আটক রয়েছেন। তাদের বিচার কাজ এবছর শুরু হতে পারে বলে আশা করা হচ্ছে। ভয়াবহ ওই ভবন ধসের ঘটনায় মারা যান ১১০০ শ্রমিক। তাজরীন অগ্নিকাণ্ডে প্রাথমিকভাবে দেলোয়ার হোসেনের বিরুদ্ধে কোন মামলা গঠন করার জন্য পর্যাপ্ত তথ্যপ্রমাণ ছিল না বলে জানিয়েছিল বাংলাদেশের পুলিশ। পরে মানবাধিকার কর্মীরা একটি মামলা দায়ের করলে আদালত পুলিশ কর্মকর্তাদের আরও তদন্ত চালিয়ে যাওয়ার আদেশ দেয়।
ওই তদন্তে জানা গেছে, কর্মীরা যেন পালিয়ে যেতে না পারে সেজন্য কারখানার ম্যানেজাররা দরজাগুলো বন্ধ রেখেছিলেন। কারখানার একটিও অগ্নিনির্বাপক ব্যবহার করা হয়নি বলে তদন্তে উঠে এসেছে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, কারখানার জানালা লোহার গ্রিল দিয়ে ঢাকা হওয়ায় অনেক কর্মী মারা গেছে। সাধারণত চুরির আশঙ্কামুক্ত থাকতে সাধারণত মালিকরাই লোহার গ্রিল স্থাপন করে থাকেন যা বড় ধরনের নিরাপত্তা ঝুঁকির কারণ। দেলোয়ার হোসেন যাবতীয় দায়ভার অস্বীকার করেছেন। তিনি ও তার স্ত্রী মাহমুদা আক্তার পুলিশি হেফাজতে থাকাটা অগ্রগতির লক্ষণ। তবে, নিশ্চিত দীর্ঘ একটি পথ পরিক্রমার এটা একটি পদক্ষেপ মাত্র। সরকারকে এখন অবশ্যই সুষ্ঠু ও দ্রুত বিচার সম্পন্ন করতে হবে।