তাহমিনা তাছির: পাঁচ বছরের আরিয়ার অবসর কাটে কার্টুন দেখে, নয় তো ছবি এঁকে। সময় পেলেই ও ডরেমন দেখে, কিন্তু তাই বলে আরিয়ার কোনো কিছুই নিত্য রুটিন থেকে বাদ পড়ে না। প্রতিদিন সকালে ঘুম থেকে ওঠে নাশতা খেয়ে তারপর স্কুলে যাওয়া, নিয়ম করে পড়া তৈরি করা, ছবি আঁকার ক্লাস করা, কার্টুন দেখা, মা’র কাছে গল্প শোনা, খেলাধুলা সবই হয় নিয়ম করে। ভাবলে বেশ অবাকই লাগে, এইটুকু শিশু নানা বাহানা না করে কীভাবে বড়দের মতো নিয়মমাফিক চলে। আসলে এসবই সম্ভব হয়েছে ছোটবেলা থেকে নিয়ম অনুযায়ী চলার কারণে। কেননা সব বাবা মা-ই চান, তাদের আদরের সন্তান বেড়ে উঠুক সুন্দর, সুস্থ ও নিয়মমাফিকভাবে। বাবা-মা’র কথা শোনা, পড়ালেখা করা আর কী। কিন্তু শিশু যতই বড় হতে থাকে, ততই প্রকাশ পেতে থাকে তার নিজস্ব ব্যক্তিত্ব,পছন্দ-অপছন্দ, ভালালাগা আর মন্দলাগা। আর তখনই অভিভাবকরা তাদের চিন্তা-চেতনার সঙ্গে সন্তানের কর্মকাণ্ডের মিল খুঁছে পান না। আসলে বাবা-মা সন্তানকে নিয়মতান্ত্রিকভাবে বড় করতে চাইলে বিষয়টি সম্পর্কে তাদের ভালোভাবে বোঝাতে পারেন না। তবে একদম ছোটবেলা থেকেই শিশুকে নিয়মের ছকে না ফেলে বড় করাও সম্ভব নয় আর তা উচিতও হবে না।
া প্রথম কথা হচ্ছে সন্তানকে নিয়মের মধ্যে বড় করতে হলে বাবা-মাকেও ডিসিপ্লিন লাইফ লিড করতে হবে। প্রতিটি সংসারেই একটা নির্দিষ্ট নিয়ম আছে আর তা প্রথমে বাবা-মাকেই মেনে চলতে হবে। কেননা বাবা-মা সন্তানের আদর্শ। শিশু যখন দেখবে বড়রা অনেক রাত পর্যন্ত টিভি দেখেন বা মা অনেক বেলা অবদি ঘুমান, তখন তার মধ্যে দোটানা কাজ করবে। সে কাকে অনুসরণ করবে ঠিক বুঝে উঠতে পারবে না।
া শিশুরা বাস করে তাদের খেয়ালখুশি আর নিজস্ব জগতে। যেখানে তারা নিজেরাই রাজা, কিন্তু তাদের সে জগতেরও একটা সীমারেখা থাকা জরুরি। কারণ ওরা এতই ছোট যে, নিজেদের ভালো-মন্দ বোঝার বয়স ওদের হয়নি। তাই বিষয়গুলো ওদের ভাষায় ওদের মতো করে বোঝাতে হবে।
া মনে রাখতে হবে আপনিই কিন্তু আপনার সন্তানের প্রথম আদর্শ, তাই যাই করুন না কেন সন্তানের কথা মাথায় রেখে সে মতো কাজ করুন। বাড়ির বড়দের নিয়মকানুন সম্পর্কে একমত হওয়া খুবই জরুরি। যেমন বাচ্চাদের চিপস, কোক এসব বাইরের খাবার খেতে দেয়া উচিত নয়, কিন্তু দেখা যাচ্ছে বাচ্চার মন ভালো করার জন্য বাবা নয় তো মা লুকিয়ে বাচ্চাকে এসব খাবার দিচ্ছেন। তখন স্বাভাবিকভাবেই শিশুটি দ্বিধান্বিত হয়ে যাবে।
া শিশু কোনো অপছন্দের কাজ করলে তা জোরালোভাবে বিষয়টিকে না বলুন এবং সেখান থেকে ওকে ফেরাতে চেষ্টা করুন। প্রথমবার না শুনলে আবারও বুঝিয়ে বলুন। তবে হ্যাঁ বকাঝকা বা মারামারির মধ্যে যাবেন না। এতে শিশুর মধ্যে আক্রমণাত্মক দৃষ্টিভঙ্গির সৃষ্টি হবে।
া ছোট শিশুরা পানি নিয়ে খেলতে ভীষণ পছন্দ করে, কিন্তু তাই বলে ওকে সেই কাজটি করতে দেবেন না। এ ব্যাপারে প্রতিবাদ কঠোরভাবে করুন ও বুঝিয়ে বলুন। দেখবেন কিছুক্ষণ পর ও ঠিক বুঝে যাবে বিষয়টি ঠিক নয়।
া নিয়মানুবর্তিতার নামে সবসময় শিশুদের সঙ্গে মেজাজ দেখাবেন না। সব কিছুতে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করবেন না। কেননা নিয়ম করে চলা মানেই সব কিছু থেকে শিশুকে বঞ্চিত করা নয়। মনে রাখবেন ওরও নিজস্ব একটা জগত্ আছে, আছে ব্যক্তিত্ব । তবে কাজের সময় বিশেষ কিছুর জন্য বায়না ধরলে বকা না দিয়ে বুঝিয়ে বলুন। ওকে আত্মবিশ্বাস দেন যে, কাজটি আপনি পরে করে দেবেন।
া প্রতি সপ্তাহে না পারেন মাঝে মাঝেই শিশুকে ওর পছন্দের জায়গা বা কোথাও বেড়াতে নিয়ে যান। এতে ওদের মন-মেজাজ এমনকি খাওয়া ও লেখাপড়ার প্রতি আগ্রহ বাড়বে। আর শিশু যত বাইরের পরিবেশ দেখবে, ওর মানসিক বিকাশ তত সুস্থভাবে হবে। এছাড়া বাইরের পরিবেশের সঙ্গে শিশু নিজেকে মানিয়ে নিতেও শিখবে। শিশু বুঝতে পারবে বেড়াতে যাওয়া পারিবারিক নিয়মেরই একটি অংশ।
া স্কুল থেকে ফেরার পর কখনোই ওকে পড়াতে বসাবেন না। কিছুক্ষণ ঘোরাঘুরি করুক, খাওয়া-দাওয়া করুক, তারপর পড়াতে বসান।
া মনে রাখবেন নিয়মের যাঁতাকলে পড়ে যেন আপনার সন্তানের সুস্থ মানসিক ও শারীরিক বিকাশ বাধাগ্রস্ত না হয়। নিয়ম তো নিয়মই। একে যেমন তৈরি করা যায়, তেমনি ভাঙাও যায়। তাই মনে রাখবেন যে নিয়ম সন্তানের জন্য কষ্টকর হবে, তা একটু এদিক-সেদিক করে নিন। দেখবেন সন্তানও তার সঙ্গে মানিয়ে নেবে আর আপনারও সমস্যা হবে না।
Leave a Reply