শীর্ষবিন্দু নিউজ ডেস্ক: যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে বাংলাদেশি কূটনীতিকের বিরুদ্ধে তাঁর গৃহকর্মী মামলা করেছেন। নিউইয়র্কে বাংলাদেশ কনসাল অফিসের কনসাল জেনারেল মনিরুল ইসলাম ও তাঁর স্ত্রী ফাহিমা ইসলাম প্রভার বিরুদ্ধে গতকাল শুক্রবার ম্যানহাটন ফেডারেল আদালতে এ মামলা করা হয়। বাংলাদেশি গৃহকর্মী মাসুদ পারভেজ ওরফে রানা বাদী হয়ে মামলাটি করেন।
আদালতে করা অভিযোগে মাসুদ পারভেজ বলেন, চাকরির নাম করে দেশ থেকে আনার পর তাঁকে রীতিমতো গৃহবন্দী করে রাখা হয়েছিল। ম্যানহাটনের ৫৭ স্ট্রিটের কনসাল জেনারেলের সরকারি বাসায় তাঁকে দিয়ে ভোর ছয়টা থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত কাজ করানো হয়। মাসে তিন হাজার ডলার করে দেওয়া হবে বলে প্রতিশ্রুতি দেওয়া হলেও গত ১৮ মাসে তাঁকে কোনো মজুরি দেওয়া হয়নি। ঘরের রান্নাবান্না, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করা, কাপড় ধোয়াসহ সব কাজ তাঁকে দিয়ে করানো হতো। বাংলাদেশ থেকে নিয়ে যাওয়ার পর মাসুদ পারভেজের কাছ থেকে তাঁর পাসপোর্ট নিয়ে যাওয়া হয়। ঘরের বাইরে বের হলে পুলিশ তাঁকে গ্রেপ্তার করবে বলে ভয় দেখানো হতো।
আদালতে করা অভিযোগে আরও বলা হয়, ১৮ মাসে গৃহবন্দী থাকা অবস্থায় মাসুদ পারভেজকে দাসের মতো ব্যবহার করেছেন মনিরুল ইসলাম ও তাঁর স্ত্রী। এ সময় তাঁকে অন্তত দুই দফায় শারীরিকভাবে নির্যাতন করা হয়। তাঁকে কখনো ছুটি বা বিশ্রামে যাওয়ার সুযোগ দেওয়া হয়নি। মাসুদ পারভেজের পক্ষে মামলাটি করেন আইনজীবী ডানা সাসম্যান। এই আইনজীবী কিছুদিন আগে ভারতীয় কূটনীতিক দেবযানী খোবরাগাড়ের বিরুদ্ধে দায়ের করা গৃহকর্মীর মামলাটিও পরিচালনা করেন। সপ্তাহের শেষ কর্ম দিবসে দায়ের করা মামলায় নিউইয়র্কে বাংলাদেশিদের মধ্যে তোলপাড় শুরু হয়েছে। ন্যূনতম মজুরি আইন লঙ্ঘন, গৃহকর্মী নির্যাতন ও অসাধু উপায়ে শ্রম ব্যবহারের জন্য বাংলাদেশি কূটনীতিক ও তাঁর স্ত্রীর নামে যেকোনো সময় পুলিশি তত্পরতা শুরু হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।
কনসাল জেনারেল মনিরুল ইসলাম আগামী মাসেই মরক্কোতে বাংলাদেশ দূতাবাসে যোগ দেওয়ার জন্য নিউইয়র্ক ছাড়ার কথা। গতকাল রাতে যোগাযোগ করা হলে কনসাল জেনারেল মনিরুল ইসলাম দাবি করেন, গৃহকর্মীর আনা সব অভিযোগ ভিত্তিহীন। কয়েক দিন আগে হঠাত্ করে উধাও হয়ে গেছে মাসুদ পারভেজ। তাঁর কোনা খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না। যোগাযোগও করা যাচ্ছে না। তিনি জানান, মাসুদের গ্রামের বাড়ি কুমিল্লার মুরাদনগর উপজেলায়। তাঁর দাবি, দেশ থেকে গৃহকর্মী হিসেবে মাসুদকে নিউইয়র্কে আনার আগে তাঁর বাবা নাসির উদ্দিনের হাতে নগদ ১২ লাখ টাকা দেওয়া হয়েছে। মামলা করার সংবাদ পাওয়ার পর মাসুদের সঙ্গে চেষ্টা করেও যোগাযোগ করা যায়নি এবং মামলার বাইরে তাঁর আর কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি।