শীর্ষবিন্দু নিউজ: তিন জ্যেষ্ঠ মন্ত্রীর উপস্থিতিতে মিয়ানমার, কম্বোডিয়া, ভিয়েতনাম এবং পূর্ব আফ্রিকার দেশগুলোতে বিনিয়োগে সহযোগিতা করতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। রোববার রাজধানীতে এক মতবিনিময় সভায় বিদেশে বিনিয়োগের অনুমোদনের ব্যবস্থা করার দাবি জানায় দেশের শিল্পপতিদের প্রভাবশালী সংগঠন মেট্রোপলিটন চেম্বার অফ কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (এমসিসিআই)।
সভায় অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত, শিল্পমন্ত্রী আমির হোসেন আমু ও বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ বক্তব্য রাখলেও বিদেশে বিনিয়োগের বিষয়ে কিছু বলেননি। স্বাগত বক্তব্যে এমসিসিআই সভাপতি রোকেয়া আফজাল রহমান দেশের সামষ্টিক অর্থনৈতিক পরিস্থিতি তুলে ধরে শিল্প-বাণিজ্যের স্বার্থে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখা ও আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখার ওপর জোর দেন।
দেশে বিনিয়োগ হচ্ছে না ও ব্যাংকগুলোতে উদ্বৃত্ত তারল্য পড়ে আছে মন্তব্য করে তিনি বলেন, বেসরকারি খাতের প্রবৃদ্ধি বাড়াতে ব্যাংকঋণের সুদ হার কমানো এবং ব্যবসায়ের জন্য ভ্রমণ ও ব্যবসা উন্নয়ন ব্যয়ের সিলিং বাড়ানোর উদ্যোগ নিতে পারে সরকার। একইসঙ্গে মিয়ানমার, কম্বোডিয়া, ভিয়েতনাম এবং পূর্ব আফ্রিকার দেশগুলোতে বিনিয়োগের সুযোগ করে দিতে পারে সরকার। রাজধানীর মতিঝিলে এমসিসিআই ভবনে আয়োজিত মতবিনিময় সভায় বিভিন্ন খাতের ব্যবসায়ীরা বক্তব্য রাখেন।
তারা বলেন, শিল্পের জন্য এখন সবচেয়ে বড় প্রয়োজন বিশেষায়িত শিল্পাঞ্চল। পাশাপাশি গ্যাস, বিদ্যুৎ, বন্দর ও অবকাঠামো উন্নয়ন ও ব্যাংকঋণের সুদ হার কমানোর দাবি জানান। সভায় অর্থমন্ত্রী বলেন, জ্বালানি ও বিদ্যুতের সমস্যা সমাধান করতে সরকারের আরো অন্তত দু’বছর লাগবে। বর্তমানে বিদ্যুৎ উৎপাদন নিয়ে যেসব চুক্তি আছে তাতে ১৯ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন হবে। এসব চুক্তির বিদ্যুৎ আসতে সময় লাগবে। এজন্য রেন্টালের সমস্যা এখনই শেষ হচ্ছে না। একটু সময় লাগবে। কৃষি খাত ছাড়া অন্য কোন খাতের সুদের হার সরকার নিয়ন্ত্রণ করে না বলে জানান তিনি।
অনেকে বলে থাকেন সঞ্চয়পত্রের সুদ হার কমালে ব্যাংকের আমানত সংগ্রহ ব্যয় কমতো, তাতে ঋণের সুদহার কমবে। আমি সেটা করেও দেখেছি, তাতে সুদ হার কমেনি। বরং সঞ্চয়পত্র বিক্রি কমেছে। মন্ত্রীর বক্তব্যের আগে কয়েকজন ব্যবসায়ী ঋণের উচ্চ সুদহারের জন্য সঞ্চয়পত্রে বেশি সুদ দেয়াকে দায়ী করেন।
শিল্পের জন্য জমির সমস্যা সমাধানে সম্প্রতি এক জরিপের বরাত দিয়ে অর্থমন্ত্রী বলেন, সরকারের অনেক প্রতিষ্ঠানের অতিরিক্ত জমি আছে। এগুলোতে কীভাবে শিল্প স্থাপিত হতে পারে তা গুরুত্ব দিয়ে দেখা হচ্ছে। শিল্পমন্ত্রী আমির হোসেন আমু বলেন, “অর্থনৈতিক জোনের জন্য ভবিষ্যতে জমির কোনো সংকট হবে না। চট্টগ্রামের মিরাসসরাই এলাকা অর্থনৈতিক জোন করার জন্য প্রধান্য দেওয়া হচ্ছে।
এছাড়া বিসিকের বরাদ্দ দেওয়া প্লটের বিষয়ে রিপোর্ট দিতে বলেছি। প্লট অব্যবহৃত থাকলে তার বরাদ্দ বাতিল করে আবার নতুন করে বরাদ্দ দেওয়া হবে। বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ বলেন, ব্যবসা-বাণিজ্য সঠিকভাবে এগিয়ে নিতে ব্যবসায়ীদের নিয়ে পরামর্শক কমিটি গঠন করা হয়েছে। এছাড়া পণ্যের বহুমুখী বাজার বাড়াতে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
তিনি বলেন, শ্রমিক নামধারী কিছু স্বার্থান্বেষী মহল পোশাক শিল্পের বিরুদ্ধে বিদেশিদের কাছে অভিযোগ করছে। যে দেশে শুল্কমুক্ত সুবিধা পাওয়া যায়নি সেই দেশের সঙ্গে চুক্তি করা হবে। তবে এখন যেসব দেশে শুল্ক মুক্ত সুবিধা রয়েছে, সেসব দেশে অশুল্ক বাধা দূর করা হবে। এর আগে সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ও ব্যবসায়ী মঞ্জুর এলাহী বলেন, পরিকল্পিতভাবে শিল্পায়ন হচ্ছে না। এতে কৃষি সম্পদ কমে যাবে। শিল্প জোন করা দরকার। জোন করা হলে দেশ-বিদেশি বিনিয়োগ বাড়বে। চীন কারখানা স্থানান্তর করতে চায়। কিন্তু জমি পাচ্ছে না।
এফবিসিসিআইয়ের সভাপতি কাজী আকরাম উদ্দিন বলেন, এখন বিনিয়োগের মুল সমস্যা জমি। এসমস্যা সমাধানে পরিকল্পিতভাবে অর্থনৈতিক জোন করতে হবে। বিসিকের জমি পরে আছে ব্যবহার হচ্ছে না। সে জমি ব্যবহার করা যেতে পারে। এগুলো শিল্পের জন্য নতুন করে বরাদ্দ দেওয়া উচিত। সভায় অন্যান্যের মধ্যে এফবিসিসিআইয়ের সাবেক সভাপতি এ কে আজাদ, ইন্টারন্যাশনার চেম্বার অব বাংলাদেশের সভাপতি মাহবুবুর রহমান, এক্সপোটার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের সভাপতি সালাম মুর্শিদী ও ফরেন চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি রুপালি চৌধুরী বক্তব্য রাখেন।