সোমবার, ১৭ মার্চ ২০২৫, ০৬:৫৬

সিলেট সিটি নির্বাচন: ঘনিভূত হচ্ছে নির্বাচনী আমেজ

সিলেট সিটি নির্বাচন: ঘনিভূত হচ্ছে নির্বাচনী আমেজ

সুমন আহমেদ: সিলেট টানা দু’দিনের হরতালের মধ্যে থেমে থেমে চলছে বৃষ্টি। প্রাকৃতিক বৈরী পরিবেশ ও দেশের অস্থিতিশীল রাজনৈতিক পরিস্থিতির মধ্যেও সিলেট সিটি করপোরেশনের নির্বাচনের উত্তাপ ক্রমশ বাড়ছে। নির্বাচনের প্রাক-প্রস্তুতিতে সরগরম হয়ে পড়েছে সিলেট নগর। এরইমধ্যে রোববার শেষ হচ্ছে মনোয়নপত্র দাখিলের শেষ সময়। এই সময়ের মধ্যে প্রার্থীদের মনোয়নপত্র দাখিল করতে হবে। অনেকেই সরে গেছেন প্রার্থিতা থেকে। আবার অনেকেই নতুন এসে যুক্ত হয়েছেন প্রার্থী তালিকায়। বিশেষ করে বিএনপির তালিকায় কয়েকজিন ইতিমধ্যে তাদের মেয়র পদে নির্বাচনের ঘোষণা দিয়েছেন। এতে আর এক ধাপ নির্বাচনী উত্তাপ বাড়িয়ে দিয়েছে সিলেট নগরীতে।

কয়েকদিন আগে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত মেয়র কামরানকে সিলেট সিটি করপোরেশনের প্রার্থী হিসেবে ঘোষণা দিয়েছিলেন। সেই হিসাবে সিলেট সিটি করপোরেশনের নির্বাচন নিয়ে সরকার দল আওয়ামী লীগ শুরু থেকেই প্রার্থী নিয়ে শংকা মুক্ত। কারণ হিসেবে টানা দুই বারের মেয়র ও সিলেটের মানুষের কাছে ব্যাপক জনপ্রিয় ব্যাক্তি হিসেবেই দেখছেন আওয়ামী নীতি নির্ধারকরা্। জানা যায়, সিলেটের মেয়র প্রার্থী হিসেবে কামরানের ওপর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আর্শিবাদ রয়েছে। নাগরিক কমিটির ব্যানারে প্রার্থী ঘোষণা দিলেও মূলত তিনি আওয়ামী লীগের প্রার্থী।

নগরীর হাফিজ কমপ্লেক্সে এক জনাকীর্ণ অনুষ্ঠানে আওয়ামী লীগের নেতারা বিশাল শোডাউন করে সদ্য সাবেক মেয়র বদর উদ্দিন আহমদ কামরানের প্রার্থিতা ঘোষণা করেছেন। ইতিমধ্যে মেয়র কামরান সিলেট সিটি করপোরেশনের মেয়র পদ থেকে পদত্যাগ করেছেন এবং ধারাবহিকতায় তিনি নগর ভবনের কর্মকাণ্ডের আপাতত ইতি টানছেন। নির্বাচন কমিশনের বেঁধে দেয়া নিয়ম অনুযায়ী একই সঙ্গে দলের মহানগর সভাপতির পদও তাকে ছাড়তে হচ্ছে। সকল নিয়ম মেনেই তাকে এবার সিলেট সিটি করপোরেশনের নির্বাচনে অংশ নিতে হচ্ছে। সিলেট আওয়ামীলীগে বিশেষ করে মহানগর কমিটিতে কোন্দল থাকলেও এক্ষেত্রে তাদের মধ্যে কোন কোন্দল পরিলক্ষিত হয়নি। আর তাই মেয়র কামরানকে ঘিরে সিলেটের আওয়ামী লীগ একাট্টা। যেভাবেই হোক ঘর ঠিক রাথতে হবে।

গত কয়েকদিন আগেও বিএনপি’র প্রার্থী তালিকায় ছিলেন প্রায় ডজন খানেক প্রার্থী। তবে দেখা যাচ্ছে তাদের প্রার্থী তালিকা ছোট হয়ে এসেছে। সে তালিকা থেকে উঠে এসেছে তিন জনের নাম আর এরা তিনজনই নির্বাচনের মাঠে লড়তে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ। ইতিমধ্যে তিনজনই মনোয়নপত্র জমা দিয়েছেন। এদরে মধ্যে প্রার্থী তালিকায় চূড়ান্তভাবে এগিযে রয়েছেন বিএনপি’র কেন্দ্রীয় সদস্য আরিফুল হক চৌধুরী, সিলেট মহানগর বিএনপি’র সিনিয়র সহ-সভাপতি নাসিম হোসাইন ও স্বেচ্ছাসেবক দলের কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি এডভোকেট শামসুজ্জামান জামান। এই তিন নেতা ইতিমধ্যে শোডাউন করে প্রার্থিতা ঘোষণা করেছেন।

নগরীর মালঞ্চ সেন্টারে মুরব্বীয়ানদের সঙ্গে  সভা করে সবার আগে প্রার্থিতা ঘোষণা করেন বিএনপি’র কেন্দ্রীয় নেতা আরিফুল হক চৌধুরী। আবার নগরীর এইডেড স্কুল মিলনায়তনে সভা করে নিজের প্রার্থিতা ঘোষণা করেছেন মহানগর বিএনপি’র সিনিয়র সহ-সভাপতি নাসিম হোসাইন। এদিকে, সিলেট বিএনপি’র বড় একটি অংশটি গত সপ্তাহে এক সংবাদ সম্মেলন করে বিএনপিকে আন্দোলনের অংশ হিসেবে নির্বাচনে অংশ নেয়ার দাবি জানিয়েছেন। তারা দলের সমর্থিত প্রার্থী হিসেবে এডভোকেট শামসুজ্জামান জামানের নাম ঘোষণা করার দাবি জানান।

জানা যায়, একই সঙ্গে সিলেট মহানগর বিএনপি’র সাধারণ সম্পাদক আবদুল কাইয়ূম জালালী পংকি, যুগ্ম সম্পাদক আজমল বখ্‌ত সাদেকও মেয়র পদে মনোয়ন পত্র কিনেছেন। তবে তারা মনোয়নপত্র জমা নাও দিতে পারেন। আর সদ্য কারামুক্ত বিএনপি নেতা ডাঃ শাহরিয়ার ও সিটি কাউন্সিলার কয়েস লোদী নির্বাচন থেকে সরে দাড়াবেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। যদিও এই দুইজন খুবই অনঢ় ছিলেন নিজেদের প্রার্থী হিসেবে তুলে ধরতে। তবে ধারণা করা হচ্ছে কারাগারে অন্তরীণ থাকায় নির্বাচনী প্রচারণাসহ অন্যান্য অসুবিধা থাকায় আপাতত নিজেরা প্রার্থী হচ্ছেন না। তবে এ ব্যাপারে তাদের কোন ভাষ্য পাওয়া যায়নি।

এদিকে, নির্বাচন কমিশনের শর্ত অনুযায়ী যারা নির্বাচনে অংশ নেবেন তারা দলের পদবি ছাড়তে হবে। এ শর্ত সিলেট বিএনপি’র নির্বাচনের প্রার্থী তালিকা ছোট করার পথ সুগম করে দিয়েছে। এর কারণ বিএনপি থেকে যারা মনোয়নপত্র জমা দেবেন তারা দলের পদবি ছাড়তে হবে। অনেকেই এজন্য প্রার্থীতা নিয়ে চিন্তা-ভাবনা করছেন। জানা যায়, মেয়র প্রার্থী আরিফুল হক চৌধুরী বিএনপি’র কেন্দ্রীয় সদস্য। রাজনীতি থেকে অনেকটা নির্বাসনে যাওয়া এ নেতাকে বিএনপি’র কেন্দ্রীয় নেতারা কেন্দ্রীয় সদস্য হিসেবে রেখেছেন। এ পদবিই এখন তার কাছে বড়। এরপরও মেয়র হতে গিয়ে তাকে সদস্য পদটি ছাড়তে হচ্ছে। আর মহানগর বিএনপি’র সিনিয়র সহ-সভাপতি নাসিম হোসাইনও পদ ছেড়ে নির্বাচনে অংশ নেবেন। এডভোকেট শামসুজ্জামান একাধারে তিন পদের মালিক। তিনি স্বেচ্ছাসেবক দলের কেন্দ্রীয়-সহ সভাপতির পাশাপাশি স্বেচ্ছাসেবক দলের জেলার আহবায়ক। একই সঙ্গে মহানগর বিএনপি’র সিনিয়র যুগ্ম আহবায়ক। তিনি নির্বাচনের প্রার্থী হতে গিয়ে তিনটি পদই ছাড়তে হচ্ছে। পদ ছেড়ে নির্বাচনে অংশ নেয়া নিয়ে তিন প্রার্থিই তাদের রাজনীতির ভবিষ্যৎ নিয়েও চিন্তা-ভাবনা করছেন।

জামায়াতও এবারের সিটি নির্বাচনে প্রার্থী দেয়ার চিন্তা-ভাবনা করছে। কারাবন্দির নেতা সিলেট মহানগর জামায়াতে ইসলামের আমীর এডভোকেট এহসানুল মাহবুব জুবায়েরকে তারা মেয়র পদে প্রার্থী করার প্রস্তুতি চালাচ্ছে। এছাড়া সিটি করপোরেশনের ১৫টি ওয়ার্ডে শক্তিশালী প্রার্থী দেয়ার চেষ্টা চালাচ্ছে তারা। জাতীয় পার্টি থেকে সিলেটের নেতা নজরুল ইসলাম প্রার্থী হচ্ছেন বলে জানা গেছে। তিনি কয়েক মাস ধরে নির্বাচনের প্রস্তুতিও চালাচ্ছিলেন।

তফসিল অনুযায়ী সিলেটসহ চার সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে মনোনয়নপত্র দাখিলের শেষ দিন ১২ মে। মনোনয়নপত্র বাছাই হবে ১৫ ও ১৬ মে। প্রার্থিতা প্রত্যাহারের শেষ তারিখ ২৬ মে। ভোটগ্রহণ হবে ১৫ জুন। সিলেটসহ দেশের চারটি সিটি কর্পোরেশনে একই দিন ভোটগ্রহণ করা হবে।

 




Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *



পুরানো সংবাদ সংগ্রহ

সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি রবি
 
১০১১১২১৩১৪১৫১৬
১৭১৮১৯২০২১২২২৩
২৪২৫২৬২৭২৮২৯৩০
৩১  
All rights reserved © shirshobindu.com 2012-2024