টানা চার দিন স্থবিরতা কাটিয়ে রাজধানীর জীবনযাত্রা স্বাভাবিক হলেও পরিস্থিতি ছিল অসহনীয়। বৃহস্পতিবার বৌদ্ধ পূর্ণিমা। শুক্র ও শনিবার সরকারি ছুটি। রোববার ছিল বিএনপির হরতাল। সকালেই মিরপুরে প্রধান সড়ক অবরোধ করে গার্মেন্ট কর্মীদের বিক্ষোভ। পুরান ঢাকাসহ বিভিন্ন স্থানে ছাত্রদল ও যুবদলের বিক্ষোভ, ভাঙচুর, গাড়িতে আগুন। কর্মমুখী মানুষ ঘর থেকে বের হয়েই পড়েন বিড়ম্বনায়। অসহনীয় যানজটে নাকাল নগরবাসীকে রাস্তায় বসে বসে আতঙ্কের মধ্যে কাটাতে হয়েছে ঘণ্টার পর ঘণ্টা। দুপুরে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের দু’গ্রুপের সংঘর্ষ চলাকালে বন্ধ হয়ে যায় সদরঘাট এলাকার যানচলাচল সহ দোকানপাট।
দীর্ঘ সময় ধরে সংঘর্ষ চলায় তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয় ওই এলাকায়। সকাল সাড়ে ৮টায় মিরপুর শেওড়াপাড়ার রোকেয়া সরণিতে মিস অ্যামি বিআইপিওপিআই গ্রুপের পোশাক কারখানার শ্রমিকরা গার্মেন্টের ভেতরে কাজে যোগ দিয়ে তাদের দাবি মেনে নিতে বিক্ষোভ শুরু করেন। তাদের দাবি বকেয়া টিফিনের টাকা পরিশোধ এবং ৫ বছর শেষে বেসিক ভাতার দাবি। কারখানার ভেতরে বিক্ষোভ শুরু করলে মালিক পক্ষ মাইকে ঘোষণা দিয়ে কারখানা বন্ধ করে দেয়। ওই সময় শ্রমিকরা রাস্তায় নেমে এসে কারখানার এলে বিক্ষোভ করতে থাকে এবং পাশের একটি ভবনে ভাঙচুর চালায়। শ্রমিকরা রাস্তায় নেমে এলেও মিরপুর সড়কে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। দীর্ঘদিন ধরে শ্রমিকরা ওই সব দাবি জানিয়ে আসলেও মালিকপক্ষ কোন গা করেনি। বিকাল পর্যন্ত ব্যাপক সংখ্যক পুলিশ ও র্যাব শ্রমিকদের ঘিরে রাখে। তবে শ্রমিকরা জানিয়েছে তাদের দাবি না মানা পর্যন্ত তারা প্রতিদিন কারখানার সামনে বিক্ষোভ প্রদর্শন করবেন। সকাল ৮টা থেকে শ্রমিকদের বিক্ষোভ শুরু হয় রাজধানীর কলাবাগান এলাকায়।
বসুন্ধরা গ্রুপের একটি কারখানায় বকেয়া বেতন পরিশোধ ও কর্মক্ষেত্রে জীবনের নিরাপত্তার দাবিতে শ্রমিকরা বিক্ষোভ শুরু করে। কারখানা থেকে শ্রমিকরা রাস্তায় নেমে এসে বিক্ষোভ করতে থাকলে ওই সময় গাবতলী থেকে প্রবেশের সড়কটিতে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। এখানেও শ্রমিকদের অবস্থান চলে বিকাল পর্যন্ত। এখানেও শ্রমিকরা ঘোষণা দিয়েছেন তাদের দাবি না মানা পর্যন্ত তারা প্রতিদিন বিক্ষোভ করবেন কারখানার সামনে।
এদিকে বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির প্রতিবাদ জানিয়ে সকাল ১১টার দিকে মতিঝিল এলাকায় বিক্ষোভ প্রদর্শন করে জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল। ওই সময় মতিঝিল আরামবাগ পুলিশ বক্সের কাছে পরপর ১০টি ককটেলের বিস্ফোরণ ঘটে। এখানে তারা প্রায় ২০টির মতো যানবাহনে ভাঙচুর চালায় এবং হানিফ পরিবহনের একটি বাসে আগুন লাগিয়ে দিলে বাসটি ভস্মীভূত হয়। প্রায় একই সময় পুরান ঢাকা এলাকা থেকে একটি মিছিল নিউ মার্কেটের দিকে যাওয়ার সময় কাঁটাবনে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষ হয়। ছত্রভঙ্গ হয়ে মিছিলটি ফেরার পথে বেশ কয়েকটি যানবাহনে ভাঙচুর চালায়। সকাল সাড়ে আটটা থেকে মিরপুর সড়ক বন্ধ থাকার কারণে চরমভাবে ভোগান্তিতে পড়তে হয় অফিসমুখী মানুষদের। ওই সময় শেওড়াপাড়া থেকে যাত্রীবাহী সকল যানবাহন কালশী হয়ে মিরপুর-বনানী নতুন ফ্লাইওভার দিয়ে এয়ারপোর্ট হয়ে মতিঝিলের দিকে আসতে গেলে পুরো এয়ারপোর্ট সড়কে জ্যাম লেগে যায়। দুপুরের পরও মতিঝিল এলাকায় কর্মস্থলে পৌঁছতে পারেননি অনেকে। সকাল থেকে বেলা ২টা পর্যন্ত বিচ্ছিন্ন হয়ে থাকে মিরপুর এলাকা।
অন্যদিকে কলাবাগানে শ্রমিকদের সড়ক অবরোধের কারণে কয়েক হাজার যানবাহন আটকা পড়ে গাবতলী থেকে গুলিস্তান আসার পথে। কাঁটাবনে ছাত্রদল কর্মীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষ হলে আজিমপুর এলাকা থেকে ছেড়ে আসা মহাখালীর বাস বন্ধ রাখতে হয় দুপুর পর্যন্ত। মতিঝিলে বাসে আগুন দেয়া ও যানবাহন ভাঙচুরের কারণে ভয় এবং আতঙ্কে স্থবির হয়ে যায় বাণিজ্যিক এলাকা মতিঝিলের ব্যবসা বাণিজ্য। ওই সময় গুলিস্তান থেকে যাত্রাবাড়ী হয়ে নারায়ণগঞ্জ পর্যন্ত প্রায় সৃষ্টি হয় তীব্র যানজটের। ফকিরাপুল এলাকায় কয়েকটি ককটেল বিস্ফোরণ হলে সে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে বায়তুল মোকাররম এলাকা পর্যন্ত। এখানকার ফুটপাথের দোকানদাররা দ্রুত তাদের দোকান গুটিয়ে নেয়। মতিঝিল, কাঁটাবন, শেওড়াপাড়া, কলাবাগান, সদরঘাট এলাকায় ককটেল বিস্ফোরণ, যানবাহন ভাঙচুর, যানবাহনে আগুন এবং শ্রমিক বিক্ষোভ ও সড়ক অবরোধের কারণে সৃষ্ট তীব্র যানজট ছড়িয়ে পড়ে গোটা রাজধানীতে। স্থবির ও অচল হয়ে পড়ে রাজধানীর জনজীবন।
Leave a Reply