গ্যালারী থেকে ডেস্ক: তথ্য মতে, বিশ্বের জনপ্রিয় খেলা ক্রিকেটের সূচনা হয়েছিলো ১৩ শতকে। এরপর ১৮৪৮ সালে জন্ম নেওয়া ইংল্যান্ডের উইলিয়াম গিলবার্ড গ্রেসকে ক্রিকেটের জনক বলা হয়। কারণ তিনি এই খেলাটিকে সবার কাছে জনপ্রিয় করে তোলেন। ১৮৬৬ সালে থেকে ১৯০৬ সাল পর্যন্ত গ্রেস ছাড়া ইংল্যান্ডের ক্রিকেট ভাবাই যেতো না। আধুনিক ক্রিকেটের অনেক টেকনিকের বিকাশ ঘটিয়েছেন তিনি । আর এ খেলাকে বলা হতো জেন্টলম্যানস গেম।
আবার অনেককে বলতে শোনা যায়, ব্রিটেনে এক সময় রাখাল বালকেরা গবাদি পশু চরানোর ফাঁকে ফাঁকে গাছের ডালকে ব্যাট আর পাথরকে বল বানিয়ে এক ধরনের খেলা খেলতো। কিছুটা আমাদের ডাণ্ডা-গুলি খেলার মতো। হয়তো রাখাল বালকদের সেই খেলা থেকে এই খেলার উৎপত্তি।
কিন্তু দূভাগ্য হলেও সত্য যে, সময়ের পরিক্রমায় সেই জেন্টলম্যানস গেম এখন বির্তকের কেন্দ্রবিন্দুতে এসে দাঁড়িয়েছে। ভাইরাসে আক্রান্ত হয় খেলাটি। খেলোয়াড়রা জড়িয়ে যায় জুয়াড়িদের দুষ্টচক্রে। অবশ্য এর শুরুটা হয় দক্ষিণ এশিয়া থেকে। সময়টা ছিলো ১৯৯৪ সাল। ওই বছর শ্রীলঙ্কার মাটিতে চার জাতি (ভারত,পাকিস্তান, অস্ট্রেলিয়া ও শ্রীলঙ্কা) সিঙ্গার ওয়ার্ল্ড সিরিজ অনুষ্ঠিত হয়। দুই কারণে বৃষ্টি ভেজা এ সিরিজটিকে মানুষ মনে রাখে।
১. টেন্ডুলকারের প্রথম ওয়ানডে সেঞ্চুরি
২. পাকিস্তানি ক্রিকেটার সেলিম পারভেজ অপর দুই ক্রিকেটার সেলিম মালিক ও মুশতাক আহমেদকে বাজিকরদের থেকে টাকা নিতে দেখেছেন। মজার ব্যাপার হচ্ছে, ওই সিরিজে শুধু শ্রীলঙ্কা ছাড়া বাকি তিন দলের বিরুদ্ধেই উঠেছিল অভিযোগ। বাদ যায়নি শক্তিশালী অস্ট্রেলিয়াও। ভারতীয় বাজিকরদের থেকে ওই সময়ে মার্ক ওয়াহ ও শেন ওয়ার্নেরও অর্থ নেওয়ার অভিযোগ উঠেছিল। আর ভারতের মনোজ প্রভাকরকে নাকি খারাপ বোলিংয়ের জন্য ২৫ লাখ রুপি দেওয়ার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল। শুধু এটিই নয়। ১৯৯৪ সালে আরো একটি ঘটনা ঘটিয়েছিলেন এ প্রভাকর। ভারতের কান উইলস ওয়ার্ল্ড সিরিজে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ধীরে খেলার অভিযোগে প্রভাকর ও নয়ন মঙ্গিয়াকে দুই ম্যাচের জন্য সাসপেন্ড করা হয়েছিল। ওই ম্যাচে কিছুটা এদিক-ওদিক করার গন্ধ পায় বোর্ড। আর ৯৫ সালে মার্ক ওয়াহ ও শেন ওয়ার্ন নতুন করে আরেকটি আকাশ ভেঙে পড়ার মতো তথ্য দেন। পাকিস্তানের ফয়সালাবাদে প্রথম টেস্টের আগে নাকি সেলিম মালিক তাদের ঘুষের প্রস্তাব দিয়েছিল। আর এর বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়েছিলেন আতাউর রেহমান, রশিদ লতিফ, বাসিত আলী ও আমির সোহেল।
এদিকে ৯৫ সালে দুবাইয়ের শারজাতে ভারতীয় অজয় জাদেজার কাছে এসেছিলো দুই বাজিকর। নিরাপত্তারক্ষীরা অবশ্য এদের বের করে দেয়। ঘটনার এখানেই শেষ নয়। লিডসে ১৯৯৯ সালে বিশ্বকাপে অস্ট্রেলিয়া বনাম দক্ষিণ আফ্রিকার ম্যাচে স্টিভ ওয়াহর ক্যাচ ফেলে দিলেন হার্শেল গিবস। ওইদিন হার্শেল গিবসে কেউই সন্দেহের চোখে দেখেনি। কিন্তু হ্যানসি ক্রনিয়ের সঙ্গে গিবসের নাম আসায় সন্দেহ আরো ঘনীভূত হয়। তবে স্বীকারোক্তির পর গঠিত কিং কমিশনের তদন্তের সময় ক্রনিয়ে জানিয়েছিলেন, ১৯৯৬ সালে বাজিকর মুকেশ গুপ্তের সঙ্গে তাকে (ক্রনিয়েকে) পরিচয় করে দিয়েছিলেন ভারতের সাবেক অধিনায়ক আজহার উদ্দিন। এরপর জুয়াড়িদের সঙ্গে আঁতাত করে তখন টেস্ট সিরিজে হারার উদ্যোগ নিয়েছিলেন তিনি। প্রথম টেস্টে খারাপ খেলার জন্য পিটার স্ট্রাইডমকে রাজি করাতে পারেননি ক্রনিয়ে।
দ্বিতীয় টেস্টে খারাপ খেলার জন্য মার্ক বাউচার, জ্যাক ক্যালিস ও ল্যান্স ক্লুজনারকে অর্থের প্রলোভন দেখিয়েছিলেন। কিন্তু তারা হাসির ছলে উড়িয়ে দেন। তবে নাগপুরে শেষ ওয়ানডে ম্যাচে হার্শেল গিবস ও হেনরি উইলিয়ামসকে ১৫ হাজার ডলার করে দিয়ে রাজি করাতে সক্ষম হন। আর এর ওপর ভিত্তি করে ভারতীয় তদন্ত ব্যুরো আজহারকে দোষী সাব্যস্ত করে। কিছুদিন পরেই তাকে আজীবনের জন্য নিষিদ্ধ করা হয়। ক্রনিয়ে স্বীকার করেছিলেন জুয়াডিদের কাছ থেকে তিনি মোট এক লাখ ৪০ হাজার ডলার নিয়েছিলেন। এটাই শেষ নয় একবার বৃষ্টিতে প্রায় পরিত্যক্ত ইংল্যান্ড ও দক্ষিণ আফ্রিকার একটি টেস্ট ম্যাচ সমাপ্ত করতে আফ্রিকান জুয়াড়ি মারলন অ্যারোনস্ট্যামের ডাকে শেষ রাতে অধিনায়ক নাসের হুসেইনের কাছে ছুটে যান ক্রনিয়ে। ম্যাচের পঞ্চম দিনে উভয় দল তাদের একটি করে ইনিংস প্রত্যাহার করে নেয়। এবং সেই টেস্টে ইংল্যান্ড জিতে যায়। ম্যাচটি পরিত্যক্ত হলে জুয়াড়িদের বেশ ক্ষতি হতো। তাই তারা ক্রনিয়েকে দিয়ে ম্যাচটি শেষ করে নেয়। আর এতে ক্রনিয়ে পান পাঁচ হাজার পাউন্ড এবং তার স্ত্রীকে দেওয়া হয় একটি চামড়ার জ্যাকেট। ক্রনিয়ের আসল নাম হচ্ছে ওয়াসেল জোহানেস ক্রনিয়ে। ২০০২ সালে ১ জুন ওয়েস্টার্ন কেপে নিজ বাড়িতে ফেরার পথে কুটেনিকা পার্বত্য এলাকায় বিমান দুর্ঘটনায় নিহত হন। এর দুই বছর আগে তিনি ম্যাচ গড়াপেটার কথা স্বীকার করেন।
ম্যাচ পাতানোর অভিযোগে আজহার উদ্দিন, ক্রনিয়ে, সেলিম মালিক নিষিদ্ধ হওয়ার দীর্ঘ ১৩ বছর পরে এসে সুনামি বয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ ক্রিকেটের ওপর। দেশের তারকা ক্রিকেটার আশরাফুল অকপটে স্বীকার করেছেন টাকার বিনিময়ে ম্যাচ ফিক্সিং করেছেন তিনি। বলেছেন, সাবেক তিন তারকা ক্রিকেটারের কথাও। এতসব বির্তকের পর এ খেলাটি কী এখনো জেন্টলম্যানস গেম? কোথায় আজেকর বাংলাদেশের ক্রিকেট ভবিষ্যত? এখন যেকান খেলোড়ারকে কি বিশ্বাস করা যাবে সহজেই? এ রকম হাজারো প্রশ্ন ক্রীড়াপ্রেমি সহ বাংলাদেশের আপামর জন সাধারণের মনে।
Leave a Reply