প্রাণ জুসের একটি বোতলে লোহার নাট-বল্টু পাওয়া গেছে। এ মুহূর্তে একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তার কাছে বোতলটি কর্ক (ছিপি) না-খোলা অবস্থায় রয়েছে। এর মধ্য দিয়ে জনস্বাস্থ্যের জন্য ভয়াবহ ঝুঁকিপূর্ণ দিকটি বেরিয়ে এলো। অনেকেই বলছেন, জুস বা এ ধরনের পানীয়ে প্রায়ই ভেজাল বা দূষিত পদার্থ পাওয়া যাচ্ছে। শুক্রবার (৭ জুন) বিকেলে বাংলানিউজের এ প্রতিবেদকের কাছে এসব তথ্য খুলে বলেন সোলায়মান। এ মুহূর্তে সোলায়মানের কাছে প্রাণের বোতলটি কর্ক বা ছিপি না খোলা অবস্থায়-ই রয়েছে।
বাংলানিউজকে তিনি বলেন, “কৌতুহলবশত বোতলটি আমি সংগ্রহ করি। এর ছবিও তুলে রাখি। প্লাষ্টিকের ওই বোতলটিতে লোহার নাট-বল্টু দুই ইঞ্চি লম্বা হবে।” “প্রাণের মতো একটি কোম্পানির বোতলের ভেতর নাট-বল্টু প্রবেশ এটা বিস্ময়কর”, –মন্তব্য করেন তিনি। জানা গেছে, কোম্পানির লোকজন তার কাছ থেকে বোতলটি নানাভাবে নেয়ার চেষ্টা করছেন কিন্তু বৃহৎ এ শিল্প প্রতিষ্ঠানের এ ঘটনা মানুষের সামনে তুলে ধরতে এটি তিনি সংগ্রহে রাখবেন বলে জানা গেছে।
গত বুধবার নাজিম চৌধুরী নামের এক ক্রেতা ফেনী শহরের মহিপাল থেকে প্রাণ কোম্পানির তৈরি করা ২৫০ এমএল প্রাণ ফ্রুটো জুস নির্ধারিত মূল্য (২২ টাকা) দিয়ে কেনেন। এর সিরিয়াল নং বিডি এস ১৫৮১। বোতলটি কেনার পরই ক্রেতা উৎপাদন তারিখ দেখেন। মেয়াদ ২৩/৫/১৩ থেকে ২২/৫/১৪ পর্যন্ত। সবই ঠিক আছে। কিন্তু কর্ক খোলার সময় দেখেন, বোতলটি একটু ভারি লাগছে। এখানেই খটকা! একটু নেড়েচেড়ে ক্রেতা দেখেন বোতলের ভেতর আস্ত নাট-বল্টু। ক্রেতা রেগে যান বিক্রেতার ওপর। দোকানদার তার কাছে মাফ চেয়ে বলেন, “কোম্পানি এভাবেই বাজারজাত করেছে। আমার দোষ নেই।” ক্রেতাও একপর্যায়ে বোতলটি না কিনে চলে যান। কৌতহলবশত এ বোতলটি দাম দিয়ে কিনে নেন সোলায়মান ডালিম নামের একজন। তিনি বেসরকারি একটি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা।
এ বিষয়ে জানতে প্রাণ গ্রুপের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে কেউ এ বিষয়ে কথা বলতে রাজী হন নি। তবে প্রাণ ফ্রুটোর উৎপাদন শাখায় কর্মরত একজন জানান, স্বয়ংক্রিয় মেশিনে কর্ক লাগানোর সময় কোনো যন্ত্রাংশ হয়তো অজ্ঞাতভাবে ভেতরে ঢুকে গিয়ে থাকতে পারে। প্রাণ ম্যাঙ্গো জুসে এ পর্যন্ত একাধিকবার ক্ষতিকর মাত্রায় ফরমালিন পাওয়া গেছে। ফরমালিন মিশ্রিত প্রাণ ম্যাঙ্গো জুস বিক্রি করায় গত ৭ ডিসেম্বর চট্টগ্রামে নগরীর দুইটি প্রতিষ্ঠানকে দশ হাজার টাকা জরিমানা করেছিলো। অভিযানে ফ্রুটো জুসে ক্ষতিকর মাত্রায় (২.৩০ পিপিএম) ফরমালিন পাওয়া যায়। এরও আগে বাংলাদেশ স্ট্যান্ডার্ডস অ্যান্ড টেস্টিং ইনস্টিটিউট (বিএসটিআই) জানিয়েছে, ‘প্রাণ’-এর কোনো ফ্রুট ড্রিংকসে অন্তত ১০ শতাংশ আসল ফলের রস থাকার কথা থাকলেও তাতে এর আদৌ কোনো উপাদানই নেই। এসব পণ্য হলো ম্যাংগো, অরেঞ্জ, লেমন, স্ট্রবেরি, লিচি, অ্যাপল, পাইনঅ্যাপল ও ফ্রুট ককটেল। শুধু কৃত্রিম সুগন্ধী প্রয়োগ করে এসব ড্রিংকস তৈরি করা হয়েছে।
বিএসটিআই-র এমন দাবির পর গত ৬ নভেম্বর সংবাদ সম্মেলন করে প্রাণ গ্রুপের কর্মকর্তারা বলেছেন, প্রাণ জুস নিম্নমানের ও ভেজাল বলে যেসব অপপ্রচার হচ্ছে তা ঠিক নয়। বিএসটিআই প্রাণের অরেঞ্জ ড্রিংকসের নিবন্ধন বাতিল করায় তা বাজার থেকে তুলে নেওয়া হয়েছে। কিন্তু প্রাণের সব খাদ্যপণ্য বাতিল বলে ‘অপপ্রচার’ করা হচ্ছে।
Leave a Reply