শীর্ষবিন্দু আন্তর্জাতিক নিউজ ডেস্ক: সৌদি আরবের মক্কায় মসজিদ আল-হারামে ক্রেইন উল্টে পড়ার ঘটনা তদন্ত করে এর ফলাফল জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে বলে জানিয়েছেন দেশটির বাদশা সালমান বিন আব্দুল আজিজ আল সউদ। শনিবার রাতে বাদশা সালমান দুর্ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন, তারপর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আহতদের দেখতে যান তিনি।
মুসলমানদের পবিত্রতম স্থান কাবা শরীফ ঘিরে রাখা মসজিদে শুক্রবারের ওই দুর্ঘটনায় ১০৭ জন নিহত এবং অন্তত ২৩৮ জন আহত হন। ক্রেন উল্টে পড়ার জন্য প্রবল ঝড়ো বাতাস ও ব্যাপক বৃষ্টিপাতকে দায়ি করেছেন দেশটির কর্মকর্তারা।
সৌদি আরবের রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থার প্রতিবেদনে প্রকাশিত উদ্ধৃতিতে বাদশা সালমান বলেছেন, সব কারণ তদন্ত করার পর ফলাফল নাগরিকদের সামনে ঘোষণা করা হবে। নিহতদের মধ্যে ইরান, তুরস্ক, আফগানিস্তান, মিশর ও পাকিস্তানের নাগরিক রয়েছেন বলে জানিয়েছে বার্তা সংস্থাটি।
সৌদি আরবের বেসামরিক প্রতিরক্ষা কর্তৃপক্ষের মহাপরিচালক সুলাইমান আল-আমর জানিয়েছেন, ক্ষয়ক্ষতি নির্ধারণ ও মসজিদের নিরাপত্তা বিষয়টি খতিয়ে দেখতে তদন্ত শুরু করা হয়েছে। হ্জ পালনের জন্য চলতি মাসে সারা বিশ্ব থেকে বিশ লাখেরও বেশি মুসলমান মক্কায় সমবেত হবেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। হাজ পালনে এই দুর্ঘটনার কোনো প্রভাব পড়বে না বলে জানিয়েছেন দেশটির কর্মকর্তারা।
আহতদের মধ্যে কতজন দুর্ঘটনায় আহত হয়েছেন আর কতজন দুর্ঘটনার পর সৃষ্ট হুড়োহুড়িতে পদদলিত হয়েছেন তা স্পষ্ট নয়। ইসলামিক হেরিটেজ রিসার্চ ফাউন্ডেশনের সহ-প্রতিষ্ঠাতা ইরফান আল- আলবি জানিয়েছেন, বিশাল উন্নয়নকাজের জন্য আল-হারাম মসজিদের চারদিকে ১৫টি বড় ক্রেন দাঁড় করিয়ে রাখা হয়েছে।
দুর্ঘটনার সময় মসজিদটিতে আট লাখ লোক ছিল জানিয়ে সুলাইমান আল-আমর বলেন, সৌদি আরবের স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তা নীতি পুনর্বিবেচনা করা দরকার। পুরো এলাকাটিকে পরিত্যক্ত যন্ত্রপাতির ভাগাড়ের মতো লাগছে,” বলেন তিনি। মসজিদের ক্ষতিগ্রস্ত অংশের কাজ কয়েক দিনের মধ্যেই শুরু হবে বলে জানান তিনি।
টুইটারে ছড়িয়ে পড়া কয়েকটি ছবিতে দেখা যায়, হজের ইহরাম পরিহিত রক্তাক্ত বহু মানুষের দেহ কংক্রিটের স্তূপের মধ্যে পড়ে আছে। ছাদ ভেঙে নেমে আসা লাল রঙের একটি বিশাল ক্রেইনের অংশবিশেষও এসব ছবিতে দেখা যাচ্ছে। মক্কার আমির প্রিন্স খালেদ আল-ফয়সাল ঘটনাটি তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন বলে আল আরাবিয়ার খবরে বলা হয়।
একসঙ্গে ২২ লাখ হাজির স্থান সঙ্কুলানের জন্য গতবছর মসজিদের এলাকা ৪ লাখ বর্গমিটার সম্প্রসারণের কাজ শুরু করে সৌদি সরকার। এই নির্মাণ কাজের জন্য ভারী কয়েকটি ক্রেইনও সেখানে রাখা ছিল বলে রয়টার্সের এক ছবিতে দেখা যায়। প্রতি বছর ৩০ থেকে ৪০ লাখ মুসলমান হজ পালন করতে বিশ্বের সর্ববৃহৎ এই মসজিদে সমবেত হন। এই দুর্ঘটনা হজ পালনে কোনো প্রভাব ফেলবে না বলে জানিয়েছে হজ আয়োজক কমিটির একজন কর্মকর্তা।
এর আগে ২০০৬ সালে কাবা শরীফের কাছে একটি বহুতল হোটেল ভবন ধসে ৭৬ জন নিহত হন। নিকট অতীতে হজ মৌসুমে সবচেয়ে হতাহতের ঘটনা ঘটে ১৯৯০ সালের ২ জুলাই। ওই ঘটনায় একটি সুড়ঙ্গে পদদলিত হয়ে ১ হাজার ৪২৬ জনের মৃত্যু হয়।