দীন ইসলাম: চার সিটি’র সিভিল ও পুলিশ প্রশাসন এখন মহাটেনশনে রয়েছে। সিনিয়র কর্মকর্তাদের জুনিয়রদের ওপর বিনা কারণে পরোক্ষ খবরদারি, কর্মকর্তাদের চিহ্নিত করে প্রার্থীদের নানা অভিযোগের তীর এবং ফল নিয়ে নানা হিসাব নিকাশের কারণে টেনশন দিন দিন বাড়ছে।
এছাড়া, নির্বাচনের জন্য দায়িত্বশীল সিনিয়র ও জুনিয়র কর্মকর্তাদের দিকে সারা দেশ তাকিয়ে রয়েছে। তাই বেশ সাবধানে কাজ করছেন তারা। নিয়মের মধ্যে কাজ করতে গিয়ে কোন কোন কর্মকর্তা বাটে পড়ে যাওয়ার শঙ্কায় রয়েছেন। এ কারণে পুলিশ ও সিভিল প্রশাসনের বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তারা চাচ্ছেন, নির্বাচনকালে সেনা মোতায়েন হোক। এতে তাদের দায়িত্ব পালন অনেক সহজ হয়ে যাবে। বড় ধরনের ঝক্কি পোহাতে হবে না। অন্যদিকে সিভিল ও পুলিশ প্রশাসন যন্ত্রের বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তারা বলছেন, দেশের গুরুত্বপূর্ণ এ স্থানীয় সরকার নির্বাচনের গতিপ্রকৃতি আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ব্যাপক প্রভাব পড়তে পারে। এ জন্য বিভিন্ন মহল থেকে নির্বাচনের সর্বশেষ অবস্থা সম্পর্কে খোঁজখবর রাখা হচ্ছে। নির্বাচনে কোন দলের প্রার্থীরা জিততে পারে এ নিয়ে রয়েছে সজাগ দৃষ্টি। ওই অনুযায়ী বিভিন্ন পক্ষের সঙ্গে যোগাযোগও বাড়িয়ে দিয়েছেন কিছু কিছু কর্মকর্তা।
চার সিটি করপোরেশনে দায়িত্ব পালনকারী কয়েক জন কর্মকর্তার সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে, নির্বাচনের দায়িত্ব পালনকারী কর্মকর্তারা সরাসরি কোন হুমকি না পেলেও প্রচ্ছন্ন নানা কথাবার্তা শুনছেন। প্রায় প্রতিদিনই সরকারের বিভিন্ন পর্যায় থেকে ফোন করে নির্বাচনের গুরুত্ব সম্পর্কে তাদের বোঝানো হচ্ছে। নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ করার জন্য নানা পরামর্শও দেয়া হচ্ছে। এ কাজে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের দলবাজ কিছু কর্মকর্তা আগ বাড়িয়ে দায়িত্ব পালন করছেন। তারা কথা বলার শেষ দিকে নির্বাচনে দায়িত্বশীলদের বলছেন, নির্বাচনে অমুক ভাই জিততে না পারলে সরকারি পর্যায়ে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া হতে পারে। তাই আশা করছি বিষয়টি সম্পর্কে তুমি বা তোমরা খোঁজখবর রাখবে। আবার কোন কোন কর্মকর্তাকে বলা হচ্ছে, সবেমাত্র চাকরি শুরু করেছো। এখনও বাকি জীবন পড়ে আছে। তাই লাল কালির দাগ পড়া কি ঠিক হবে? একটু সাবধানে কাজ করলে শান্তিতে কাজ করার পাশাপাশি নির্বাচনের পর ঢাকাতে ভাল পোস্টিংও পাবে। বিষয়টি মনে রেখো।
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, চার সিটিতে যে সব কর্মকর্তা নিরপেক্ষভাবে দায়িত্ব পালন করছেন তাদের পেছনে লেগেছে মহাজোট সমর্থিত প্রার্থীরা। তাদের কোন সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে বাধা হয়ে দাঁড়ালে তাদেরকে জামায়াত সমর্থিত কর্মকর্তা বানানোর চেষ্টা করছেন। কোন কোন ক্ষেত্রে এরই মধ্যে একটি জোটের প্রার্থীরা সফলও হয়েছেন। এখন কোন কোন কর্মকর্তাকে বদলি করতে না পেরে মানসিকভাবে হেনস্তা করা হচ্ছে। আর যারা মহাজোটের কাজে বাধা হয়ে দাঁড়াচ্ছেন না তাদের নিয়ে কোন টেনশন নেই। তবে ওই সব কর্মকর্তার কাছ থেকে নির্বাচনের ফলাফল নিয়ে আগামী কিছু রিপোর্ট ভালভাবে দেখছেন না মহাজোট সমর্থিত প্রার্থীরা।
বরিশাল সিটি করপোরেশন সূত্রে জানা গেছে, এ মহানগরীতে কয়েক দিন আগে পুলিশ প্রশাসনের এক মেধাবী কর্মকর্তা দায়িত্ব নিয়েছেন। ওই কর্মকর্তা বিদেশে পড়াশোনার পাশাপাশি পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেছেন। এখন ওই কর্মকর্তাকে ভিন্নমতের মনে করে প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছেন সদ্য সাবেক মেয়র শওকত হোসেন হিরণ। এ যাত্রায় সফল হওয়ার সম্ভাবনা খুব একটা নেই বলে মনে করা হচ্ছে। অন্যদিকে প্রতিদ্বন্দ্বী মেয়র প্রার্থী আহসান হাবিব কামাল সেনা মোতায়েনের দাবি জানিয়ে সাংবাদিকদের বলেছেন, সাজানো প্রশাসন দিয়ে নির্বাচন করার পরিকল্পনা করেছে সরকার। এটা সফল হতে দেয়া হবে না।
বরিশাল ছাড়াও খুলনা, রাজশাহী ও সিলেটের ১৮ দলীয় জোটের প্রার্থীরা সেনা মোতায়েনের দাবি জানিয়ে আসছেন। সংসদেও এনিয়ে স্পিকারের হস্তক্ষেপ চেয়েছেন ভারপ্রাপ্ত চিফ হুইপ শহিদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানী। তারা বলছেন, অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের স্বার্থে চার সিটি করপোরেশনে সেনা মোতায়েন জরুরি প্রয়োজন। অন্যথায় যে কোন অনাকাঙিক্ষত পরিস্থিতির জন্য তাদেরই দায় নিতে হবে। নির্বাচন কমিশন এখনও চার সিটি নির্বাচনে সেনা মোতায়েনের প্রয়োজন নেই- একথা বলে আসছে।
Leave a Reply