শুক্রবার, ১৩ জুন ২০২৫, ১১:৫০

জিএসপি নিয়ে ওবামার সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত

জিএসপি নিয়ে ওবামার সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত

 

 

 

 

 

 

 

 

 

যুক্তরাষ্ট্রে রপ্তানির ক্ষেত্রে বাংলাদেশের বাণিজ্য সুবিধা প্রত্যাহারের ব্যাপারে খুব শিগগিরই  সিদ্ধান্ত নিতে যাচ্ছেন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা। দেশের পোশাক শিল্পে সংঘটিত ধারাবাহিক শ্রমিক মৃত্যুর প্রতীকী জবাব হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে এ পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে বলে রয়টার্স গতকাল এক রিপোর্টে জানিয়েছে। বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রের ‘ট্রেড রিপ্রেজিন্টিটিভস অফিস’ অন্যান্য সরকারি সংস্থার সহায়তায় এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় খসড়া তৈরি করছে। আগামী ৩০শে জুনের মধ্যেই হোয়াইট হাউস থেকে এ ব্যাপারে চূড়ান্ত ঘোষণা আসবে বলে জানা গেছে। অবশ্য এ সুবিধা প্রত্যাহার করে নেয়া হলে যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের বর্তমান রপ্তানির ১ শতাংশও ক্ষতিগ্রস্ত হবে না, তারপরও বাংলাদেশ সরকার এ সুবিধা প্রত্যাহার না করতে যুক্তরাষ্ট্র সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়ে আসছে। যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে বড় শ্রমিক সংগঠন এএফএল-সিআইও প্রথমে ২০০৭ সালে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে বাংলাদেশের প্রাপ্ত জেনারেলাইজড সিস্টেম অব প্রিফারেন্স (জিএসপি) সুবিধা বাতিলের আবেদন করেছিল। মার্কিন সরকার এ আবেদনের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত গ্রহণ ছয় বছর ধরে স্থগিত করে রেখেছিল। তারা আশা করেছিল জিএসপি প্রত্যাহারের হুমকিই বাংলাদেশের শ্রম আইন সংস্কারের জন্য যথেষ্ট হবে। তবে নভেম্বরে তাজরীন ফ্যাক্টরিতে আগুন লেগে ১১২ জনের মৃত্যু এবং এপ্রিলে রানা প্লাজা ভবন ধসে ১১২৯ জনের মৃত্যুর ফলে ওবামা প্রশাসন এবার বাংলাদেশের এ বাণিজ্য সুবিধা হ্রাস বা বন্ধ করার ব্যাপারে সিন্ধান্ত নেবে বলে মন্তব্য করেছেন এএফএল-সিআইও’র বাণিজ্য বিভাগের প্রধান সেলেস্টে ড্রাকে। তিনি বলেন, গত বছর বাংলাদেশের অবস্থা এতটাই ভয়াবহ ছিল যে শ্রমিক ইসুতে যুক্তরাষ্ট্র যদি কোন ব্যবস্থা না নেয়, তাহলে জিএসপি সুবিধাটাই অর্থহীন হয়ে দাঁড়াবে। জিএসপি কর্মসূচির মাধ্যমে দরিদ্র দেশগুলোতে থেকে পণ্য ক্রয়ের ক্ষেত্রে মার্কিন কর প্রত্যাহার করে সেসব দেশে কর্মসংস্থানের সুযোগ দেয়া হয়। ১৯৭৬ সালে জিএসপি সুবিধা চালু হওয়ার পর থেকেই বাংলাদেশ যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে এই সুবিধা পেয়ে আসছে। তবে বাংলাদেশের প্রধান রপ্তানি পণ্য তৈরি পোশাক খাত এই সুবিধার আওতাভুক্ত নয়। গ্লোবাল ওয়ার্কাস ফাউন্ডেশনের সঙ্গে সম্পৃক্ত বাণিজ্যবিষয়ক বিশ্লেষক এড গ্রেসার বলেছেন, গত বছর বাংলাদেশ যুক্তরাষ্ট্রে তাবু, গলফ খেলার সরঞ্জাম, প্লেটসহ প্রায় তিন কোটি ৫০ লাখ মার্কিন ডলার মূল্যের পণ্য রপ্তানি করেছে। এর ওপর জিএসপি-সুবিধা অনুযায়ী ২০ লাখ ডলার শুল্ক ছাড় পেয়েছে। কিন্তু বাংলাদেশ ৪৯০ কোটি ডলারের তৈরি পোশাক রপ্তানি করতে গিয়ে যুক্তরাষ্ট্রকে ৭৩ কোটি ২০ লাখ ডলার শুল্ক দিয়েছে, যা ২০১২ সালে ফ্রান্সের কাছ থেকে প্রাপ্ত শুল্কের প্রায় দ্বিগুণ। অতীতে অনেক আইনপ্রণেতাই বাংলাদেশ ও কম্বোডিয়া থেকে যুক্তরাষ্ট্রে যাওয়া তৈরী পোশাক খাতকে জিএসপি-সুবিধার আওতায় আনার প্রস্তাব দিয়েছেন। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রের পোশাক প্রস্তুতকারীরা এর বিরোধিতা করেছেন। বাংলাদেশে অবস্থিত ইউরোপীয় অনেক কোম্পানিই আগুন ও ভবনবিষয়ক নিরাপত্তা চুক্তিতে স্বাক্ষর করলেও মার্কিন কোম্পানিগুলোতে এসব চুক্তিতে স্বাক্ষর করেনি। এদিকে যুক্তরাষ্ট্রের শ্রম মন্ত্রণালয় বাংলাদেশের তৈরী পোশাক ফ্যাক্টরিগুলোতে অগ্নিনির্বাপণ এবং ভবন নিরাপত্তা জোরদার এবং নির্দিষ্ট মান বজায় রাখতে ২৫ লাখ ডলারের তহবিল ঘোষণা করেছে। মার্কিন শ্রম মন্ত্রণালয়ের এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে তৈরী পোশাক খাত। যুক্তরাষ্ট্রে রপ্তানির ক্ষেতেও এ খাত উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখছে। এ খাতে শ্রমিকদের অধিকার এবং কর্মক্ষেত্রে নিরাপত্তার মান নিয়ে দীর্ঘ দিন ধরেই উদ্বেগ পরিলক্ষিত হয়ে আসছে। আশির দশকে শ্রমিকদের অধিকার সুরক্ষার মানদণ্ডে উত্তীর্ণ হতে ব্যর্থ হওয়ায় অন্তত ১৩টি দেশের জিএসপি-সুবিধা আংশিক বা পুরোপুরি বাতিল করা হয়। পরে তাদের বেশির ভাগই অধিকারের বিষয়টি নিশ্চিত করায় আবার তাদের জিএসপি-সুবিধায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়। ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সেন্টার ফর দ্য সাউথ এশিয়া স্টাডিজের সহযোগী পরিচালক সঞ্চিতা সাক্সেনা বলেছেন, বাংলাদেশী পণ্যের ক্ষেত্রে জিএসপি-সুবিধা প্রত্যাহার করে নিলেও তৈরী পোশাকশিল্পের শ্রমিকদের কোন উপকারে আসবে না। সাক্সেনা বলেন, যদি যুক্তরাষ্ট্র এই পরিস্থিতির উন্নয়নে সহায়তা করতে চায়, তাহলে আন্তর্জাতিক ব্র্যান্ড কর্তৃপক্ষ ও বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থাগুলো এসব পোশাক কারখানায় নজরদারি করতে পারে এবং বিদ্যমান আইনগুলো প্রয়োগে চাপ দিতে পারে। বাংলাদেশে থাকা মার্কিন কোম্পানিগুলো কাজের পরিবেশের ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ মান বজায় রাখবে বলে যুক্তরাষ্ট্র আশা করে। কাজের পরিবেশের বিষয়টি নিয়ে বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে কাজ করার বিষয়টি কোম্পানিগুলোর নিজস্ব বিষয় বলেও যুক্তরাষ্ট্র মনে করে। মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র জেন পাসাকি এসব কথা জানিয়েছেন। সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে জেন পাসাকি বলেছেন, ‘আমরা মনে করি, কোম্পানিগুলোর নিজেদেরই সিদ্ধান্ত নেয়া প্রয়োজন। বাংলাদেশে যে কর্ম-পরিবেশ ও পরিস্থিতি বিরাজ করছে, এ ব্যাপারে বাংলাদেশকে সহায়তার প্রয়োজনে কোম্পানিগুলো ও সরকারের সঙ্গে কিভাবে কাজ করা যায়, তা নিয়ে সরকার ও আমাদের কোম্পানিগুলোর সঙ্গে আলোচনা চলছে। পাসাকি বলেন, আমরা মনে করি, কোম্পানিগুলো কাজের পরিবেশের ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ মান বজায় রাখবে, মানবাধিকারের শর্তগুলো পুরোপুরি মেনে চলবে। এসব নিয়ে বাংলাদেশের সঙ্গে আমাদের আলোচনা চলছে।




Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *



পুরানো সংবাদ সংগ্রহ

সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি রবি
 
১০১১১২১৩১৪১৫
১৬১৭১৮১৯২০২১২২
২৩২৪২৫২৬২৭২৮২৯
৩০  
All rights reserved © shirshobindu.com 2012-2025