শনিবার, ১৫ মার্চ ২০২৫, ০৩:১২

রজব মাসের ইবাদত ও মাহে রমজানের প্রস্তুতি

রজব মাসের ইবাদত ও মাহে রমজানের প্রস্তুতি

 

 

 

 

 

মাওলানা হাবিবুর রহমান : প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ (স.) প্রত্যেক বছর রজব মাস এলেই রমজানুল মোবারকের জন্য প্রস্তুতি গ্রহণ করতেন। তাঁর ইবাদত বন্দেগী সব কিছুতেই একটি পরিবর্তন সূচিত হতো। আর তিনি নতুন একটি দোয়া শুরু করতেন। বলতেন- আল্লাহুম্মা বারিকলানা ফি রজাবা ওয়া শাবানা ওয়া বাল্লিগনা রমাজানা অর্থাত্ হে রাব্বুল আলামীন আপনি আমাকে রজব ও শাবানে বরকত দিন এবং রমজান পর্যন্ত পৌঁছে দিন। এই দোয়া বারবার তার মুখে ধ্বনিত প্রতিধ্বনিত হতো। তাঁর সঙ্গে সাহাবা আজমাঈনও এই দোয়া করতেন। সেই কারণে যারা রসূলের (স.) সত্যিকারের আশেক ও উম্মত হতে চায় এবং তাঁর প্রত্যেকটি সুন্নতের অনুসরণে জীবন যাপন করে আল্লাহর রিজামন্দি হাসিল করতে চায় তারা এই রজব মাস থেকে উপরোল্লেখিত দোয়াটির আমল শুরু করবেন।

হিজরি সালের শাবান মাসের সমাপ্তির পরই প্রতিবছর মানবজীবনের সব কালিমা দূর করার বিশেষত্ব নিয়ে কৃচ্ছ্রসাধনের মাস পবিত্র রমজানুল মোবারক আসে। এ গুরুত্ববহ তাৎপর্যময় মাস সারা বিশ্বের মুসলমানদের সুদীর্ঘ এক মাসের সিয়াম সাধনার জন্য বিশেষভাবে প্রস্তুত হওয়ার কথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে যায়। মুমিন বান্দার জীবনে বছরের মধ্যে রমজান মাসটিই এক দুর্লভ সুযোগ এনে দেয়। তাই এ পুণ্যময় মাসের গুরুত্ব এত বেশি। এ কারণেই বলা হয়, পবিত্র রমজান মাস হচ্ছে ইবাদত, পবিত্র কোরআন তিলাওয়াত, জিকর, শোকর ও আল্লাহর নৈকট্য লাভের এক বিশেষ মৌসুম। একদা নবী করিম (সা.) মাহে রমজানের প্রাক্কালে বলেন, ‘রমজান মাস আগতপ্রায়, এ মাস বড়ই বরকতের মাস, আল্লাহ তাআলা বিশেষ দৃষ্টি প্রদান করেন এবং খাছ রহমত বর্ষণ করেন, গুনাহ মাফ করেন ও দোয়া কবুল করেন।’ অনেকে মনে করেন শাবান মাস থেকেইতো রমজানের প্রস্তুতি গ্রহণের সময়। তাদেরকে এই হাদীসের অনুসরণে এখন থেকে রজব মাস থেকেই মন মানসিকতার আমূল পরিবর্তন করে পবিত্র রমজানুল মোবারকের জন্য প্রস্তুতি গ্রহণ করার আহ্বান করছি। কারণ এটি এমন একটি মাস যে মাসে এই পৃথিবীর সব চেয়ে আশ্চর্যজনক ঘটনা মিরাজ সংঘটিত হয়েছিল। যা পৃথিবীবাসিকে বিস্ময়ে বিমূঢ় করে ফেলে। রসূল (স.)কে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা এই সময় মক্কা থেকে বায়তুল মোকাদ্দাসে নেন। সেখান থেকে উদ্ধালোকে উত্থান ঘটান। যা মানব কল্পনারও বাইরে। যা ছিল রক্তমাংসের একজন মানুষের জন্য সম্পূর্ণরূপে অসম্ভব। আল্লাহ রাব্বুল আলামীন রসূল (স.)কে দিয়ে এই অসম্ভবকে সম্ভব করে দেখিয়েছেন। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা তাঁর প্রিয় এই হাবিবকে নিয়ে প্রথম আসমান, দ্বিতীয়, তৃতীয়, চতুর্থ, পঞ্চম, ষষ্ঠ ও সপ্তম আসমান পার করে সিদরাতুল সুনতাহায় নেন। সেখান থেকে বায়তুল মামুর। তার পর সাতটি সমতল মাঠ পেরিয়ে একেবারে আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের সান্নিধ্যে পৌঁছান। এতো কাছে পৌঁছান, যা কুরআনের সূরা নজমে বলা হয়েছে— “ছুম্মা দানা ফাতাদাল্লা ফা-কানা কা’বা কাওছাইনে আও আদনা” অর্থাত্ তারপর সে কাছে এলো, অতপর সে আরো কাছে এলো, এসময় তাদের উভয়ের মাঝে ব্যবধান থাকলো মাত্র দুই ধনুকের সমান কিংবা তার চাইতেও কম। এরপর আল্লাহ তাকে কিছু আদেশ নিষেধ করলেন। যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের বিষয়টি। রসূল (স.)কে এদিন প্রথমত: পঞ্চাশ ওয়াক্ত নামাজ দেয়া হয়েছিল তারপর ষষ্ঠ আসমানে হযরত মুসা (আ.) এর সঙ্গে সাক্ষাত হলে তিনি তাকে আল্লাহর কাছে নামাজের ওয়াক্ত কমানোর জন্য দরখাস্ত করতে বলেন। সেই মোতাবেক রসূল (স.) আল্লাহর সমীপে দরখস্ত করায় পাঁচ ওয়াক্ত হয়। আল্লাহ রাব্বুল আলামীন বলেন এই পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আপনার ও আপনার উম্মতদের জন্য স্থিরিকৃত হলো। কিন্তু যারা এই পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ সঠিক সময়ে নিয়ম মাফিক পড়বে তাকে পূর্বঘোষিত পঞ্চাশ ওয়াক্ত নামাজের পূণ্য দান করা হবে। রসূল (স.)কে এই রজনীতে আল্লাহ তাঁর বেহেশত দর্শন করান। দোযখ দর্শন করান। রসূল (স.) দুনিয়ায় এসে সাহাবীদের বলেছিলেন আল্লাহ রাব্বুল আলামীন আমাকে জান্নাত ও জাহান্নাম সবই দেখিয়েছেন। আমি দেখলাম জান্নাতের চতুষ্পার্শে কষ্ট কঠোরতা, দুঃখ, জ্বরাগ্রস্থতা, রোগ, শোক, বিপদ-আপদ মুছিবত দিয়ে ঘেরা। আর জাহান্নাম দেখলাম, তার চতুষ্পার্শে সুখ-শান্তি, আরাম আয়েশ ভোগ বিলাসিতা দিয়ে ঘেরা। সুতরাং যারা দুনিয়ায় আল্লাহর নির্দেশ অমান্য করে দুনিয়াবিক আরাম আয়েশ ভোগ বিলাসিতার স্রোতে গা ভাসিয়ে দিয়ে চলবে তারা এই বিলাসিতার দেয়াল টোপকিয়েই আল্লাহর জাহান্নামে প্রবেশ করবে। পক্ষান্তরে যারা দুনিয়ায় আল্লাহর আনুগত্য করতে গিয়ে বিপদ-আপদ মুসিবতে আবর্তিত হবে তারা এই মুসিবতের দেয়াল পার হয়েই আল্লাহর জান্নাতে প্রবেশ করবে। রসূল (স.) এই মিরাজের ঘটনা যখন মানুষের কাছে বলছিলেন তখন কাফেরেরা নতুন একটা ইস্যু পেয়ে গেল। তারা বললো, আমরা এতোদিন যে, মুহাম্মদ (স.)কে পাগল উম্মাদ বলেছি এখন তার বাস্তব প্রমাণ আমরা এখন হাতে পেয়েছি। তারা মানুষের কাছে বলতে লাগলো মুহাম্মদ (স.) সত্যিকারের পাগল হয়ে গেছে, সে নাকি একরাতে বায়তুল মোকাদ্দাসে গিয়েছে এবং উদ্ধালোকে গিয়েছে ও তাঁর রবের সঙ্গে সাক্ষাত করে এসেছে। কেউ কেউ তখন বলতে লাগলো তোমরা আবু বকরকে খোজো এবং তাকে এই কথা বলো। নিশ্চয়ই আবুবকর এই ঘটনা বিশ্বাস করবেনা। তারা খুজে আবুবকর (রা.)কে পেলো এবং তাকে বললো আবুবকর, তুমিতো মুহাম্মদের অন্ধ ভক্ত। তুমি কি এই কথা বিশ্বাস করবে? যে, মুহাম্মদ (স.) এক রাতে বায়তুল মুকাদ্দাস গিয়ে আবার মক্কায় ফিরে এসেছে? আবুবকর (রা.) নি:শঙ্কচিত্তে বললেন, এই কথা কি সত্যিই মুহাম্মদ (স.) বলেছেন? তারা বললো—হ্যাঁ বলেছেন। তুমি যেয়ে দেখ তিনি এখনো কাবার সামনে বসে এই কথা মানুষদের বলছে: আবুবকর (রা.) বললেন, আমি যাচ্ছি তবে তোমরা শুনে রাখ, এই কথা যদি মুহাম্মদ (স.) সত্যিই বলে থাকেন তাহলে অবশ্যই মিরাজ সত্য। অত:পর আবুবকর (রা.) হন্তদন্ত হয়ে কাবার সামনে গেলেন। দেখলেন সেখানে রসূল (স.)কে অনেক মানুষেরা ঘিরে রেখেছে। আবুবকর (রা.) বলছেন, অত:পর আমি লোকদের সরিয়ে তার কাছে গেলাম। বললাম, কাফেরেরা যা বলছে আপনি কি সত্যিই এই সব কথা বলেছেন? রসূল (স.) বললেন, হ্যাঁ আবুবকর আমি বলেছি। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা আমাকে দিয়ে মিরাজ করিয়েছেন। আবুবকর (রা.) বললেন, আমি বিশ্বাস করলাম- আপনি সত্য বলেছেন। আপনার মিরাজ সত্য। যে ঘটনাটি আল্লাহ তায়ালা মুহাম্মদ (স.)কে দিয়ে ঘটিয়েছেন সেই ঘটনাটি যখন কেউ বিশ্বাস করছিলনা। তখন সীমাহীন কষ্ট যন্ত্রণায় রসূল (স.) অস্থির চিন্তাগ্রস্ত অবস্থায় ছিলেন। এমতাবস্থায় আবুবকর (রা.) যখন মিরাজের ঘটনা স্বীকার করে নিলেন তখন রসূল (স.) এর মাথা থেকে যেন একটা বোঝা নেমে গেলো। স্বস্থির নি:শ্বাস ফেললেন। চোখ ফেটে আনন্দ অশ্রু গড়িয়ে পড়ছিল। তিনি আবুবকর (রা.)কে বুকে জড়িয়ে ধরলেন। আর বললেন, আবুবকর, আজ থেকে তুমি শুধু আবুবকর নও। আবুবকর সিদ্দিক। আল্লাহর কাছে চার শ্রেণির লোক নেয়ামতপ্রাপ্ত তাঁরা হলেন—’যারা নেয়ামতপ্রাপ্ত। তাঁরা হলেন নবীগণ, সিদ্দিকগণ, শহীদগণ ও সালেহীনগণ।’ রসূল (স.) মাদানী জীবনের একদিন বলেছিলেন, যে সময় মক্কার সব মানুষেরা আমার মিরাজের বিষয় নিয়ে হাসি-ঠাট্টা করছিল। সেই সময় আবুবকরই সর্বপ্রথম মিরাজের ঘটনা স্বীকার করে নেন। দুনিয়ার সব মানুষের ঈমান যদি এক পাল্লায় রাখা হয় আর কেবল আবুবকর (রা.) এর ঈমান আর এক পাল্লায় রাখা হয় তাহলে আবু বকরের ঈমানের পাল্লা ভারি হয়ে যাবে। রসূল (স.) বলেছিলেন- আবুবকর আমার দুনিয়ার সাথী বেহেশতেরও সাথী। রসূল (স.) মিরাজের ঘটনার বিবরণ দেয়ার পর বলেছিলেন, আস সলাতু মিরাজুল মু’মিনীন অর্থাত্ নামাজ হলো মমিনদের জন্য মেরাজ। কারণ একজন মু’মিন ব্যক্তি নামাজের মধ্যে আল্লাহর যত নিকটবর্তী হয় এতো নিকটবর্তী আর কখনো হয় না। ‘রামাদান’ শব্দটি আরবি ‘রাম্দ’ ধাতু থেকে উদ্ভূত। এর আভিধানিক অর্থ হচ্ছে দহন, প্রজ্বলন, জ্বালানো বা পুড়িয়ে ভস্ম করে ফেলা। রমজান মাসে সিয়াম সাধনা তথা রোজাব্রত পালনের মাধ্যমে মানুষ নিজের সমুদয় জাগতিক কামনা-বাসনা পরিহার করে আত্মসংযম ও কৃচ্ছ্রপূর্ণ জীবন যাপন করে এবং ষড়িরপুকে দমন করে আল্লাহর একনিষ্ঠ অনুগত বান্দা হওয়ার সামর্থ্য অর্জন করে। মাহে রমজান মানুষের অভ্যন্তরীণ যাবতীয় অহংকার, কুপ্রবৃত্তি, নফসের দাসত্ব জ্বালিয়ে-পুড়িয়ে ছারখার করে দেয় বলে এ মহিমান্বিত মাসের নাম ‘রমজান’। ইসলামের অনুসারীদের জন্য আল্লাহ তাআলার বিরাট নিয়ামত রমজান মাস। এর প্রস্তুতি গ্রহণ করা না হলে মাহে রমজানের কোনো মূল্য বা মর্যাদা দ্বারা উপকৃত হওয়া যায় না। শাবান মাসের সমাপনান্তে মাহে রমজানের এক ফালি রুপালি চাঁদ পশ্চিম আকাশে উদিত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে যখন একজন মুমিন মুসলমান মনে ইস্পাত-কঠিন ঈমান, ব্যাপক উৎসাহ ও আগ্রহভরে মাসব্যাপী সিয়াম সাধনার উদ্দেশ্যে নিয়ত করেন এবং রোজা আদায়ে মশগুল হয়ে যান, তখনই তিনি মহান আল্লাহর বিশেষ রহমতের চাদর দ্বারা আবৃত হয়ে পড়েন। ফলে ইহজগতের শান্তি, পারলৌকিক কল্যাণ ও মুক্তির সনদ তাঁর জন্য ঘোষণা করা হয়। হাদিস শরিফে বর্ণিত আছে: ‘আদম সন্তানের প্রত্যেক ভালো কাজের সওয়াব ১০ গুণ থেকে ৭০০ গুণ পর্যন্ত বর্ধিত করে দেওয়া হবে। আল্লাহ তাআলা বলেছেন, ‘কিন্তু রোজার ব্যাপারে এর ব্যতিক্রম হবে। কেননা, বান্দা আমার সন্তুষ্টির জন্য রোজা রেখেছে এবং আমি নিজেই এর প্রতিফল দান করব। সে তো আমার জন্যই কামনা- বাসনা ও খাওয়া- দাওয়া ছেড়ে দিয়েছে।’ (মুসলিম) মাহে রমজান এমনই এক বরকতময় মাস, যার আগমনে পুলকিত হয়ে স্বয়ং রাসুলুল্লাহ (সা.) সাহাবায়ে কিরামদের মোবারকবাদ পেশ করতেন। নবী করিম (সা.) সাহাবিদের এই মর্মে সুসংবাদ প্রদান করেছেন, ‘তোমাদের সামনে রমজানের পবিত্র মাস এসেছে, যে মাসে আল্লাহ তোমাদের ওপর রোজা ফরজ করেছেন।’ (মুসলিম) এক হাদিসে নবী করিম (সা.) বলেছেন, ‘রজব আল্লাহর মাস, শাবান আমার মাস এবং রমজান আমার উম্মতের মাস।’ তাই বলা হয়, ‘রজব মাসে শস্য বপন করা হয়, শাবান মাসে খেতে পানি সিঞ্চন করা হয় এবং রমজান মাসে ফসল কর্তন করা হয়।’ সুতরাং এ শ্রেষ্ঠতম মাসে নামাজ- রোজা পালন তথা আল্লাহর ইবাদত- বন্দেগি করে কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যপানে ধাবিত হওয়ার প্রস্তুতি গ্রহণ করা প্রত্যেক মুসলমানের জন্য অবশ্যকর্তব্য। রাসুলুল্লাহ (সা.) একদা শাবান মাসের শেষ দিনে সাহাবায়ে কিরামকে লক্ষ্য করে মাহে রমজানের রোজার ফজিলত সম্পর্কে বলেছিলেন, ‘হে মানবগণ! তোমাদের প্রতি একটি মহান মোবারক মাস ছায়া ফেলেছে। এই মাসে সহস্র মাস অপেক্ষা উত্তম একটি রজনী আছে। যে ব্যক্তি এই মাসে কোনো নেক আমল দ্বারা আল্লাহ পাকের সান্নিধ্য কামনা করে, সে যেন অন্য সময়ে কোনো ফরজ আদায় করার মতো কাজ করল। আর এই মাসে যে ব্যক্তি কোনো ফরজ আদায় করে, সে যেন অন্য সময়ের ৭০টি ফরজ আদায়ের নেকি লাভ করার সমতুল্য কাজ করল। এটি সংযমের মাস আর সংযমের ফল হচ্ছে জান্নাত।’ (মিশকাত) নৈতিক পরিশুদ্ধি ও আত্মগঠনের মাস হিসেবে মাহে রমজানের আগমনে সারা বিশ্বের ধর্মপ্রাণ মুসলমান নামাজ-রোজার প্রস্তুতি সম্পন্ন করতে নতুন পাঞ্জাবি, পাজামা ও টুপি কেনেন অথবা ধুয়ে-মুছে পাক-পবিত্র করে রাখেন। দৈনন্দিন জীবনযাত্রার স্বাভাবিক কাজকর্ম সম্পাদন করে দৈনিক পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায়সহ রমজান মাসের বিশেষ খতমে তারাবিহ নামাজ জামাতে পড়ার জন্য মসজিদে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন। পবিত্র কোরআন তিলাওয়াত, নফল ইবাদত, জিকর- আজকার, তাসবিহ-তাহলিল, দোয়া-ইস্তেগফার, দান-সাদ্কা করে তাঁরা বিপদগ্রস্ত অসহায় মানুষকে স্বতঃস্ফূর্তভাবে সাহায্য- সহযোগিতা করতে সচেষ্ট হন। তাঁদের সম্পর্কে পবিত্র কোরআনে বলা হয়েছে: ‘আর যারা নামাজ প্রতিষ্ঠা করে, জাকাত প্রদান করে এবং যারা কৃতপ্রতিজ্ঞা সম্পাদনকারী এবং অর্থ- সংকটে, দুঃখ-ক্লেশে ও সংগ্রাম-সংকটের সময় ধৈর্য ধারণকারী, তারাই হলো সত্যপরায়ণ এবং তারাই মুত্তাকি।’ (সূরা আল-বাকারা, আয়াত ১৭৭) প্রকৃতপক্ষে পবিত্র মাহে রমজান মুসলমানদের জন্য একটি বার্ষিক প্রশিক্ষণ কোর্স, যার মাধ্যমে রোজাদারদের জীবন প্রভাবিত হয়। নবী করিম (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি পবিত্র রমজান মাস ভালোভাবে যাপন করবে, তার সমগ্র বৎসর ভালোভাবে যাপিত হবে।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমার উম্মত যদি মাহে রমজানের গুরুত্ব বুঝত, তাহলে সারা বছর রমজান কামনা করত।’ তাই মাহে রমজানে রোজার প্রস্তুতির জন্য সহিহ-শুদ্ধভাবে আবশ্যকীয় বিধি-বিধান শরিয়তের মাসআলা অনুযায়ী রোজাদারদের প্রয়োজনীয় জ্ঞান থাকা খুবই দরকার। এ ছাড়া আসন্ন মাহে রমজানের পবিত্রতা রক্ষার্থে ইবাদত- বন্দেগি তথা সেহির, ইফতার, তারাবিহ, পবিত্র কোরআন তিলাওয়াত, ইতিকাফ, তাহাজ্জুদ, জিকর-আজকার, তাসবিহ-তাহলিল, দোয়া-ইস্তেগফার, জাকাত-ফিতরা, দান- সাদ্কা প্রভৃতি সৃষ্টিকর্তার হক আদায়ের সামগ্রিক পূর্বপ্রস্তুতি নেওয়া উচিত। কুরআনে বলা হয়েছে, অসজুদু ওয়াক তারিব অর্থাত্ তোমরা সেজদা দাও এবং আমার সবচেয়ে নিকটবর্তী হয়ে যাও। সুতরাং পবিত্র রমজানুল মোবারকের প্রস্তুতির মাস হিসেবে এই রজব মাস হতেই প্রিয় নবীজীর মত আমরাও আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতায়ালার কাছে দোয়া করি যেন তিনি আমাদের রহমত, মাগফেরাত ও নাজাতের মাস পবিত্র রমজানুল মোবারকে সমার্পণ করান। রসূল (স.) সকল সময় মৃত্যুর জন্য প্রস্তুত থাকতেন। এমনকি তার মৃত্যুর সময় যখন জিব্রাইল (আ.) এসে বলেছিলেন আল্লাহ আপনাকে এই পৃথিবীতে থাকার এবং চলে যাওয়ার এখতিয়ার দিয়েছেন। তখন তিনি জীবনের শেষ জুমআর খুত্বায় বলেছিলেন, আল্লাহুম্মার রফিকুল আলা অর্থাত্ আমি আমার পরম বন্ধু আল্লাহর সান্নিধ্যই বেছে নিয়েছি। সেই রসূল (স.) কেবলমাত্র রমজান মাস পাওয়ার জন্য দুই মাস পূর্ব হতে আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের কাছে দোয়া করতেন। তাহলে কী আছে সেই পবিত্র মাহে রমজানে? সে বিষয়ে রসূল (স.) বলেছেন, যে রমজান পেলো এবং তার জীবনের গোনাহ মাফ করিয়ে নিতে পারলোনা তার চেয়ে হতভাগ্য ব্যক্তি এই পৃথিবীতে আর কেউ নেই। কারণ রমজান হলো জাহান্নাম থেকে নিষ্কৃতির মাস ও জান্নাত লাভের মাস।

 




Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *



পুরানো সংবাদ সংগ্রহ

সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি রবি
 
১০১১১২১৩১৪১৫১৬
১৭১৮১৯২০২১২২২৩
২৪২৫২৬২৭২৮২৯৩০
৩১  
All rights reserved © shirshobindu.com 2012-2024