শীর্ষবিন্দু নিউজ ডেস্ক: বাঙ্গালীর অকৃত্রিম বন্ধু ও বাংলাদেশে চলমান মানবতা বিরুধী অপরাধের বিচারের অন্যতম সমর্থক লর্ড এ্যারিক এ্যাবুভেরী। গতকাল ১৪ ফেব্রয়ারী লন্ডন সময় সকালে দক্ষিন লন্ডনের বাসভবনে তিনি শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন।
মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৮৭ বছর। তিনি গত কয়েক বছর যাবত মরণব্যধী ক্যানসার ও অন্যান্য রোগে ভুগছিলেন। মৃত্যুসময় তার পাশে ছিলেন স্ত্রী লিন্ডসে ও পরিবারের অন্যান্য সদস্যরা। তার পুরোনাম লর্ড এ্যারিক এ্যাভুবেরী। পারিবারিক নাম এ্যারিক রেজিনাল্ড লোববক।
তিনি বাংলাদেশে যুদ্ধাপরাধের বিচারের পক্ষে বলিষ্ট ভুমিকা রাখেন। লর্ড এ্যাবুভেরী চিটাগাং হিলটেক্ট কমিশনের কো-চেয়ারম্যান হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন। বাংলাদেশে ধর্মীয় সংখ্যালঘু নির্যাতনের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে সংখ্যালঘুদের অধিকার রক্ষায় কাজ করে গেছেন আমৃতু্ পর্যন্ত।
শুধু তাই নয়, বিগত কেয়ার টেকার সরকারের সময় বাংলাদেশের বর্তমান প্রধান মন্ত্রী শেখ হাসিনাকে বন্ধি করলে তিনি সোচ্চার হয়ে উঠেন। বার বার কেয়ার টেকার সরকারের অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করেন। বাংলাদেশে ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের জান মালের নিরাপত্তা ও অধিকার প্রতিষ্টায় আমৃত্যু কাজ করে গেছেন এই পার্লামেন্টেরিয়ান।
তিনি ১৯২৮ সালের ২৯ সেপ্টেম্বর সাউথ লন্ডনের সম্ভ্রান্ত লর্ড পরিবারে জন্মগ্রহন করেন। তিনি ১৯৬২ থেকে ১৯৭০সাল পর্যন্ত লিবারেল ডেমক্রেট পার্টির এমপি হিসেবে হাউজ অব কমন্সে দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৭১সাল থেকে মৃত্যু পর্যন্ত ব্রিটিশ লর্ড সভার সদস্য ছিলেন। তিনিই একমাত্র ব্যাক্তি দীর্ঘ সময় লর্ড সভার সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
লর্ড এ্যাবুরেবীর বাবা এবং দাদও ছিলেন ব্রিটিশ লর্ড সভার সদস্য, তাই ১৯৭১ সালে সকল দলের সংসদ সদস্যদের মতামতের ভিত্তিতে তাঁকেও লর্ড সভার সদস্য করা হয়। লর্ড এ্যাবুভেরীই ছিলেন ব্রিটিশ লর্ড সভার প্রবীণ সদস্য।
তিনি ওয়েষ্ট লন্ডনের হ্যারো স্কুল এবং কানাডার টরেন্টোতে লেখাপড়া করেন পরবর্তিতে অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইঞ্জিনিয়ারিং সায়েন্সে সর্বোচ্চ ডিগ্রি লাভ করেন। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে একজন সৈনিক হিসেবে অংশ নেন ১৯৪৯ থেকে ১৯৫১ সাল পর্যন্ত ব্রিটিশ সেনাবাহিনীতে কর্মরত ছিলেন।
১৯৬০ সালে লিবারেল ডেমক্রেট পার্টিতে যোগদেন, ১৯৬২ সালে কেন্টের অপিংটন থেকে প্রথম হাউজ অবকমন্সের সদস্য নির্বাচিত হন। এই বৃদ্ধ বয়সেও তিনি লর্ডসভার প্রতিটি সেশনে নিয়মিত উপস্থিত থাকতেন, একজন বিজ্ঞ পার্লামেন্টারিয়ান হিসেবে তিনি ছিলেন সকলের কাছে গ্রহন যোগ্য। তিনি শুধু একজন পার্লামেন্টারিয়ানই ছিলেনা ছিলেন একজন হিউম্যান রাইট এক্টিভিষ্টও।
১৯৭৬ সালে পার্লামেন্টারী হিউম্যান রাইট গ্রপ প্রতিষ্টা করে দীর্ঘ একুশ বছর অলপার্টি পার্লামেন্টারী হিউম্যান রাইট গ্রপের চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। মৃত্যুর আগপর্যন্ত তিনি অলপার্টি পার্লামেন্টারী গ্রপের ভাইস চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ২০০৫ সালে তিনি প্রতিষ্টা করেন ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ ফাউন্ডেশন। এই সংগঠনের মাধ্যমে তিনি বাংলাদেশে মানবাধিকার, সংখ্যালঘুদের অধিকার রক্ষা ও ধর্মনিরপেক্ষতার পক্ষে কাজ করেন।