গ্যালারী থেকে ডেস্ক: তাসকিনের বোলিং অ্যাকশন কেন প্রশ্নবিদ্ধ হলো, সেই উত্তর খুঁজছে বাংলাদেশ। ফাইল ছবিতিনটি শব্দ কাঁপিয়ে দিয়েছে বাংলাদেশের ক্রিকেট অঙ্গন—‘সন্দেহজনক বোলিং অ্যাকশন’। হল্যান্ড ম্যাচের জয় দিয়ে বিশ্বকাপের শুভসূচনা হয়েছে বাংলাদেশের। কিন্তু ম্যাচের পরেই দলের সঙ্গী হলো অস্বস্তি, তাসকিন আহমেদ ও আরাফাত সানির বোলিংকে সন্দেহের চোখে দেখছেন আম্পায়াররা! এই দুজনের বোলিং অ্যাকশনে সমস্যা দেখছেন তাঁরা। এর আগেও বাংলাদেশের কজন বোলারের অ্যাকশন প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে। তবে এই প্রথম এ দেশের ক্রিকেট সমর্থকেরা এমন ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানালেন। শুরু হয়েছে বিতর্ক।
বোলিং অ্যাকশন বিতর্ক কিন্তু ক্রিকেটের সবচেয়ে পুরোনো বিতর্কগুলোর একটি। বলা যায়, ক্রিকেট ও সন্দেহজনক বোলিংয়ের বয়স প্রায় সমান। টেস্ট ক্রিকেটের বয়স ১৩৮ বছর, বোলিং অ্যাকশনের বিতর্কটার বয়স ১৪৪! প্রায় দেড় শ বছর পুরোনো এক বিতর্ক!
১৮৭৭ সালে মেলবোর্ন টেস্ট দিয়ে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের সূচনা, অথচ সন্দেহজনক বোলিং অ্যাকশনের গল্পটা আরও পুরোনো। অস্ট্রেলিয়ার আদি ক্রিকেট ইতিহাসে সবচেয়ে বিখ্যাতদের একজন ছিলেন টম উইলিস, সবচেয়ে বিতর্কিতও। তাঁর বোলিং নিয়ে ফিসফাস ছিল আগে থেকেই। কিন্তু বুদ্ধিমান উইলিস আম্পায়ারদের ঠিকই ফাঁকি দিতেন তাঁর পায়ের দিকে নজর দিতে বলে। আম্পায়ারের চোখ যখন তাঁর পায়ের দিকে, সেই সুযোগে থ্রোয়িং করতেন উইলিস।
কিন্তু বেশি দিন এই জারিজুরি কাজে লাগাতে পারেননি। ১৮৭২ সালে ধরা পড়ে যান। ক্যারিয়ারও শেষ!
ক্রিকেটের প্রথম দিকে কোনো বোলারের অ্যাকশন সন্দেহজনক মনে হলে মাঠেই ‘নো’ ডাকতেন আম্পায়াররা। টেস্ট ক্রিকেটে প্রথম তিনজন সন্দেহভাজন বোলিং অ্যাকশনের বোলারকে ‘নো’ ডেকেছিলেন অস্ট্রেলিয়ান আম্পায়ার জিম ফিলিপস। সেটার প্রথম শিকার অস্ট্রেলিয়ারই আরনি জোন্স। ১৮৯৮ সালে মেলবোর্ন টেস্টে তাঁর বলে ‘নো’ ডাকেন ফিলিপস। ইংল্যান্ডের ওই সময়ের দুই দুর্ধর্ষ বোলার সিবি ফ্রাই ও আর্থার মোল্ডকেও ‘নো’ ডেকেছিলেন ফিলপস। তিনজনের বোলিং ক্যারিয়ার শেষ করে দিয়েছিল ‘নো’ বলের ডাক।
সেই শুরু। এরপর ক্রিকেটে অনেক বোলারকেই ‘নো’ ডাকা হয়েছে। সেসব নিয়ে বিতর্কও কম হয়নি। কিন্তু একটি ‘নো’ বল যে ক্রিকেট রাজনীতিই পরিবর্তন করে দিতে পারে তা দেখার জন্য ১৯৯৫ সাল পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হয়েছিল। মুত্তিয়া মুরালিধরনের বলে ‘নো বল’ ডেকে বিতর্ক সৃষ্টি করেছিলেন অস্ট্রেলিয়ান আম্পায়ার ড্যারেল হেয়ার। মুরালিধরনকে পরীক্ষা দিয়েই প্রমাণ দিতে হয়েছিল নিজের অ্যাকশনের শুদ্ধতা।
মুরালিধরনের বায়োমেকানিকাল পরীক্ষার সময়ই দেখা যায়, সে সময়ের বেশির ভাগ বোলারই হাত বাঁকানোর সীমা ৫ ডিগ্রির মধ্যে রাখতে পারছেন না। তখন নিয়মেরও পরিবর্তন আনা হয়। নতুন নিয়মে বোলারার ১৫ ডিগ্রি পর্যন্ত হাত বাঁকাতে পারে। কিন্তু আগের চেয়ে হাত বাঁকানোর সীমা বেড়ে যাওয়ার পর যেন সন্দেহজনক বোলিং অ্যাকশনের ঘটনাও বেড়ে যায়।
শোয়েব আখতার, ব্রেট লির মতো বোলাররাও পড়েছিলেন সন্দেহের আতশ কাচের নিচে। পাকিস্তানের সাব্বির আহমেদ তো সন্দেহভাজন থেকে নিষিদ্ধই হয়ে গেলেন। পাকিস্তানের সাঈদ আজমলের নিষেধাজ্ঞা নিয়েও কম বিতর্ক হয়নি, তাঁর শুধরে নেওয়া অ্যাকশন ক্যারিয়ারটাও এক রকম শেষ করে দিয়েছে।
বাংলাদেশের আবদুর রাজ্জাক, সোহাগ গাজীকেও সন্দেহজনক বোলিং অ্যাকশনের জন্য সতর্ক করা হয়েছিল। সাময়িকভাবে নিষিদ্ধও হয়েছিলেন তাঁরা দুজন। পরে অ্যাকশন শুধরে ফিরলেও গাজীর আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারও শঙ্কার মুখে।
ওয়েস্ট ইন্ডিজের সুনীল নারাইন ও মারলন স্যামুয়েলসও আছেন এই দলে। ভারতের হরভজন সিংয়ের বিরুদ্ধে ফিসফাস উঠলেও নিষেধাজ্ঞার শাস্তি কখনো পেতে হয়নি।
ইদানীং বোলিং অ্যাকশন নিয়ে প্রায়ই হয়তো খবর চোখে পড়ে আপনার। কারণ আইসিসি সাম্প্রতিক সময়ে ক্রিকেটে অবৈধ বোলিং অ্যাকশনের বিরুদ্ধে শক্ত অবস্থান নিয়েছে বলেই জানানো হয়েছে। যদিও ক্রিকেট থেকে অবৈধ বোলিং অ্যাকশন দূর করতে গিয়ে আইসিসি প্রায়ই ডেকে আনছে অহেতুক বিতর্কও।