নিউজ ডেস্ক: মা চেয়েছিলেন মেয়ে আর যাই হোক, কিছুতেই রাজনীতিবিদ হতে পারবে না। কিন্তু বঙ্গবন্ধু যাঁর নানা, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যাঁর খালা, তিনি কি রাজনীতি থেকে দূরে থাকতে পারেন! পারেননি। আজ তিনি ব্রিটিশ এমপি। টিউলিপ রেজওয়ানা সিদ্দীকের এই সফলতার পেছনের গল্প লিখেছেন তৈমুর ফারুক তুষার
১৩-১৪ বছর বয়সে বসে টিউলিপ রেজওয়ানা সিদ্দীকের মনে হলো, কোনো পার্টিতে জয়েন করা দরকার। কনজারভেটিভ পার্টির ম্যানিফেস্টো দেখলেন, লেবার পার্টির ম্যানিফেস্টোও দেখলেন। লেবার পার্টির ম্যানিফেস্টো পছন্দ হওয়ায় তাদের পার্টিতে যোগ দিলেন। তখন টিউলিপের বয়স ১৬। ব্রুনাই, সিঙ্গাপুর, বাংলাদেশ ঘুরে ততদিনে তিনি লন্ডনে থিতু হয়েছেন।
তিনি বলেন, ‘এমপি হওয়ার জন্য কঠোর পরিশ্রম করতে হয়েছে। আমি যে আসনে সদস্য হয়েছি, সেখানে ১৯৯২ থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত সংসদ সদস্য ছিলেন লেবার পার্টির স্লেন্ডা জ্যাকসন। তিনি দুবার একাডেমি অ্যাওয়ার্ডস, একবার এমি অ্যাওয়ার্ডসজয়ী জনপ্রিয় অভিনেত্রী। তিনি টনি ব্লেয়ারের মন্ত্রিসভায় পরিবহন মন্ত্রণালয়ের জুনিয়র মন্ত্রীও ছিলেন। ফলে লেবার পার্টির দলীয় মনোনয়ন দৌড়ে প্রথমবার পরাজিত হই। তবে পরাজিত হলেও দমে যাইনি।’
এ প্রসঙ্গে টিউলিপের বক্তব্য—‘হারলেও পুরো প্রসেসটা খুব এনজয় করলাম। আমার মনে হলো, ক্যাম্পেইন খুব মজার, ইটস এক্সাইটিং। আই এনজয়েড নকিং অন ডোর। তারপর ২০০৮ সালে আমেরিকায় গেলাম ওবামার ক্যাম্পেইনে। ওই ক্যাম্পেইনটাও খুব এনজয় করলাম। তখন ভাবলাম ঠিক আছে, আরেকবার চেষ্টা করি। এরপর ২০১০ সালে আবার দাঁড়ালাম কাউন্সিলরের জন্য। কিন্তু আমাদের নমিনেশন প্রসেসটা খুবই কঠিন, এমনকি মূল নির্বাচনের চেয়েও নমিনেশনে আরো বেশি কাজ। যতজন লেবার পার্টির সদস্য থাকেন, তাঁদের দরজায় গিয়ে নক করে বলতে হয়—আমি ক্যান্ডিডেট হতে চাই, আমাকে ভোট দাও। মানুষরা আমাকে বলেছে—তুমি টিউলিপ সিদ্দীক? স্লেন্ডা জ্যাকসনের দুটি অস্কার আছে, তোমার কী আছে?’
তিনি আরো যোগ করেন, ‘তবে আমি অনেক লোকাল ক্যাম্পেইন করেছি। আমাদের লোকাল পোস্ট অফিস বন্ধ করে দিচ্ছে, তখন আমি ওখানে গিয়ে ক্যাম্পেইন করলাম, বললাম, এটা খোলা রাখতে হবে। আমাদের ফায়ার স্টেশন বন্ধ করে দিচ্ছে, তখন আমি ক্যাম্পেইন শুরু করলাম। পিটিশন দিলাম, লোকাল পেপারে লিখলাম, জনগণকে বললাম, চলো আমরা প্রটেস্ট করি, র্যালি করি। এসব আমি করেছি, মানুষজন জানে। আমাদের লোকাল খবরের কাগজে আর্টিকেল লিখি। মানুষ আমাকে এভাবে চিনল।
ব্রিটেনের নির্বাচনেও ধর্মীয় পরিচয়টাকে কিছু মানুষ ভোটের রাজনীতিতে ব্যবহার করে। ভোটের আগে আমাকে অনেকে বলেছে, ব্যালটে তুমি তোমার নাম টিউলিপ সিদ্দীক দিয়ো না। তোমার হাজব্যান্ডের নাম দাও। টিউলিপ পার্সি। কারণ মুসলমান নাম দেখলে ভোট দেবে না। আমি বলেছি—আমি ওই সব মানুষের এমপি হতে চাই না। মুসলমান নাম দেখে যদি ভোট না দেয়, তবে আমি পার্লামেন্টে তোমাদের প্রতিনিধিত্ব করতে চাই না। আমি খুব আত্মপ্রত্যয়ী। যদি আমি কিছু করতে চাই—যতই কষ্ট হোক, চেষ্টা করব, অনেক কাজ করব, আর দেখাব যে করতে পারি কি না। আমি যে আসন থেকে দাঁড়িয়েছি, ওটা ছিল দেশের সবচেয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ আসন। ৪২ ভোটে আমার আগের এমপি জিতেছেন। আমি যখন দাঁড়িয়েছি, সবাই বলেছে, তুমি এটা জিততে পারবে না। কিন্তু আমি আত্মপ্রত্যয়ী হয়ে জিতলাম।’
‘আমাদের একটা ভোট ছিল—ওয়েলফেয়ার রিফর্ম বিল। চিফ হুইপ আমাদের বলেছেন, তোমরা এই বিলের বিপক্ষে ভোট দেবে না। চিফ হুইপের কথা না শুনলে প্রমোশন পাওয়া কিন্তু কঠিন। কিন্তু আমি যে ওই বিলটার পক্ষে ভোট দিতে পারব না। আমি সিদ্ধান্ত নিলাম—তার বিরুদ্ধে ভোট দিলাম। জানি, এ জন্য আমি প্রমোশন না-ও পেতে পারি, এ জন্য আমি প্রধানমন্ত্রী না-ও হতে পারি। কিন্তু আমি বিরুদ্ধে ভোট দিয়েছি। কারণ আমি বিশ্বাস করি, বিশ্বাসটাই আসল। বিশ্বাসটা আমার জন্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ।’
নিজের রাজনৈতিক সফলতার কথা বলতে গিয়ে টিউলিপ বলেন, ‘রাজনীতিতে নিজের সাফল্যের পেছনে পরিবারের সদস্যদের সহযোগিতাও গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করি। ছোটবেলা থেকেই মা আর খালা বলতেন—তুমি যা করতে চাও, তুমি তা-ই করতে পারবে। তুমি প্রধানমন্ত্রী, আইনজীবী হতে চাও আর যা-ই হতে চাও, হতে পারবে। এ আত্মবিশ্বাসটা যদি না থাকে, তবে মহিলারা কিছুই করতে পারবে না। এ আত্মবিশ্বাস আমার পরিবার থেকে দেওয়া হয়েছে। আমার মা-বাবা, ভাই-বোন—সবার সহযোগিতায় আজ আমি টিউলিপ সিদ্দীক এমপি। পরিবারের সাপোর্ট না থাকলে এটি সম্ভব হতো না।’