ওয়েছ খছরু: বিশেষজ্ঞ টিম অনেক আগেই ঝুঁকিপূর্ণ করেছিল তিন তলা সিটি সুপার মার্কেটটি। মাত্রাতিরিক্ত ভূমিকম্প হলেই ব্যাপক প্রাণহানির আশঙ্কা রয়েছে। সিলেট সিটি করপোরেশনের সীমানাপ্রাচীর ঘেঁষা এ মার্কেটটি নিয়ে সাম্প্রতিক ভূমিকম্পের সময় উদ্বেগ-উৎকণ্ঠার কমতি ছিল না। কেবল ব্যবসায়ীরাই নন, সিটি করপোরেশনও ছিল চিন্তিত। অবশেষে ঝুঁকিপূর্ণ এই ভবনটি ভাঙার উদ্যোগ গ্রহণ করে সিটি করপোরেশন।
আর এই উদ্যোগের অংশ হিসেবে ইতিমধ্যে বেশ কয়েকবার সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে নোটিশ প্রদান করা হয়। প্রথম দফা নোটিশ প্রদানের পর ব্যবসায়ীদের মধ্যে ক্ষোভের সঞ্চার হয়। তারা ভবন ভাঙার বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছিলেন। বলেছিলেন, ভবন ভাঙা হলে শতাধিক ব্যবসায়ী পথে নামবেন। বিকল্প ব্যবস্থা না হওয়া পর্যন্ত তারা ব্যবসায় চালিয়ে যাওয়ার আহ্বান জানিয়েছিলেন। এতে সিটি করপোরেশনও কিছুটা পিছু হটেছিল।
কিন্তু পরপর দুটি বড় ধরনের ভূমিকম্প আঘাত হানার পর অনেকটা নির্দয় হয়ে উঠে সিটি কর্তৃপক্ষ। ভবন ছেড়ে দিতে তারা ইতিমধ্যে বেশ কয়েক দফা নোটিশ জারি করে। এমনকি সিটি সুপার মার্কেটের ব্যবসায়ী নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করা হয়। সিলেট সিটি করপোরেশন সূত্র জানিয়েছে, বেশ কয়েক দফা নোটিশ প্রদানের পর মার্কেটের ব্যবসায়ীরা কর্ণপাত করেননি। শেষ পর্যন্ত গতকাল ১০ই মে পর্যন্ত ভবনের তিন তলার ব্যবসায়ীদের সরে যাওয়ার সময়সীমা বেঁধে দেয়া হয়েছিল। আর এই মেয়াদ শেষ হওয়ার দিন গতকাল সিটি করপোরেশন কর্তৃপক্ষ আনুষ্ঠানিকভাবে ভবনটি ভাঙার কাজ শুরু করে।
গতকাল বেলা ১১টার দিকে সিলেট সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা এনামুল হাবিবের নেতৃত্বে প্রশাসনের কর্মকর্তারা জানান। তারা প্রথম পর্যায়ে চিহ্নিত ৩ তলার ১৪টি দোকান ভাঙার কাজ শুরু করেন। এ সময় অনেক ব্যবসায়ী কান্নায় ভেঙে পড়েন। কেউ কেউ অনেকটা তারাহুড়া করে মালপত্র সরিয়ে নেয়ার চেষ্টা চালান। আর এই মালপত্র সরিয়ে নেয়ার প্রক্রিয়ায় সহায়তা করেছে সিলেট সিটি করপোরেশনও। সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে অর্ধশতাধিক শ্রমিক এক এক করে ভবনের কক্ষ ভাঙা শুরু করে। এ সময় সেখানে উপস্থিত ছিলেন সিলেট সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা এনামুল হাবিব। তিনি সাংবাদিকদের জানান, প্রকৌশলী জামাল আশরাফসহ একাধিক প্রকৌশলীর রিপোর্টের ভিত্তিতে তিন তলাবিশিষ্ট সিটি সুপার মার্কেটটি ঝুঁকিপূর্ণ বলে আখ্যায়িত করেন।
এরপর থেকে সিটি করপোরেশন বার বার নোটিশ প্রদান করে আসছিল। তিনি বলেন, এখন তিন তলা ভবনের তৃতীয় তলা ভাঙা হবে। তিনি বলেন, ভবিষ্যতে ঝুঁকিপূর্ণ সহনশীল ভবন নির্মাণের মাধ্যমে এখানে ব্যবসায়ীদের ফিরিয়ে আনা হবে। প্রধান প্রকৌশলী নুর আজিজ বলেন, ইতিমধ্যে সিলেট নগরীর ঝুঁকিপূর্ণ ভবন ভাঙার কাজ শুরু হয়েছে। তাঁতিপাড়া ও শাহী ঈদগাহে দুটি ভবন ভাঙা হয়েছে। পর্যায়ক্রমে সব ঝুঁকিপূর্ণ ভবন ভেঙে ফেলা হবে জানান তিনি।
সিলেট সিটি সুপার মার্কেটের সভাপতি জয়নুল হোসেন জানিয়েছেন, এখন তৃতীয় তলা ভাঙার কাজ শুরু হয়েছে। রমজান পর্যন্ত দ্বিতীয় তলা ও প্রথম তলার সময় দেয়া হয়েছে। তিনি বলেন, এই সময়ের মধ্যে ব্যবসায়ীদের বিকল্প ব্যবস্থা গ্রহণ করা প্রয়োজন। মার্কেটের সাধারণ সম্পাদক নুর আহমদ জানিয়েছেন, সোমবার সিলেট সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে এসে রেড মার্কিং করা হয়। ওই সময় এক ব্যবসায়ীর দোকান ভাঙার তালিকায় পড়েন। পরবর্তীতে রাতে তিনি হার্ট অ্যাটাকে মারা যান।
তিনি বলেন, এই মার্কেটের ব্যবসা করে অনেক ব্যবসায়ী জীবিকা নির্বাহ করেন। মার্কেটে দোকান না থাকলে অনেকেই পথে বসবেন বলে জানান তিনি। তবে প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা জানিয়েছেন, কেউ ক্ষতিগ্রস্ত যাতে না হয় সে বিষয়টি সিটি করপোরেশন গুরুত্ব দিয়ে দেখছে।
অপসারণ কাজ চলাকালে উপস্থিত ছিলেন সিলেট সিটি করপোরেশনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. শরীফুজ্জামান, জেলা প্রশাসনের ম্যাজিস্ট্রেট মামুনুর রহমান, সিটি করপোরেশনের কাউন্সিলর কহিনূর ইয়াসমীন ঝর্ণা, সিটি করপোরেশনের নির্বাহী প্রকৌশলী শামসুল হকসহ সিটি করপোরেশনের বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তাবৃন্দ। অপসারণ কাজ চলাকালে সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশ ফোর্স এবং সিলেট ফায়ার স্টেশনের সিনিয়র স্টেশন ম্যানেজার জাবেদ হোসেন মোহাম্মদ তারেকের নেতৃত্বে ফায়ার সার্ভিসের একটি স্পেশাল টিম উপস্থিত ছিল।