শীর্ষবিন্দু নিউজ: গত শনিবার থেকে নগরীর সোবহানীঘাটস্থ কলেজ ক্যাম্পাসে জাতীয় শিল্পীদের প্রায় অর্ধশত দৃষ্টিনন্দন ক্যালিগ্রাফি নিয়ে ২দিন ব্যাপী ক্যালিগ্রাফি প্রদর্শনী শুরু হয়েছে।
পবিত্র মাহে রমজান উপলক্ষে জালালাবাদ কলেজের উদ্যোগে আয়োজিত এ প্রদর্শণীর উদ্বোধন করতে গিয়ে দেশের শীর্ষ কবি আসাদ চৌধুরী বলেছেন সারা বাংলাদেশের মানুষ যে শহরের দিকে তাজিমের সাথে তাকিয়ে থাকে সেই শহর হচ্ছে সিলেট। সেই সিলেটের স্বনামধন্য বিদ্যাপীঠ জালালাবাদ কলেজের উদ্যোগে আয়োজিত ক্যালিগ্রাফি প্রদির্শনী এই শহরের সাংস্কৃতিক জীবনে একটি উল্লেখ্যযোগ্য সংযোজন।
উদ্বোধকের বক্তব্য আসাদ চৌধুরী আরো বলেন, আমরা সুন্দর আমরা সুন্দরকে ভালোবাসি। একসময় সাধারণ মানুষ নয়। কিছু মুসলমান ধর্মীয় ব্যক্তিত্ব, হিন্দু পুরোহিত বাংলা ভাষা চর্চায় নানা ধরনের প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করেছিলেন । অনেক লেখক তখন মনে করতো বাংলাতে লেখালেখি গোনাহর কাজ। মহাভারত, গীতার বাংলানুবাদ অনেক আগে হয়েছে। এসব গ্রন্থের অনুবাদে পৃষ্টপোষকতা করেছিলেন মুসলমান শাসকরা। আজ আমরা যে বাংলা চর্চা করছি এজন্যে সিলেটের অবদান ভুলার মতো নয়। বাংলাকে রাষ্ট্র ভাষা করার আন্দোলনে সিলেটের কেন্দ্রীয় মুসলিম সাহিত্য সংসদ, নওবেলাল, সৈনিক পত্রিকা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। সেই সিলেটে জালালাবাদ কলেজ দেশের শীর্ষ খ্যতিমান কয়েকজন শিল্পীর শিল্পকর্ম নিয়ে পবিত্র মাহে রমজানে এই ক্যালিগ্রাফি প্রদর্শনী নিয়ে আয়োজন করেছে । প্রদর্শণীতে অংশগ্রহণকারী শিল্পীদের সকলেই স্ব স্ব ক্ষেত্রে আপন মহিমায় উজ্জ্বল ও ভাস্বর।
তিনি আরো বলেন, ক্যালিগ্রাফি নিয়ে আমাদের দেশীয় শিল্পীদের আগ্রহ ও নিরিক্ষার শেষ নেই। সেই আগ্রহ ও নিরীক্ষারই নতুন একটি প্রচেষ্ঠা দেখতে পাচ্ছি প্রদর্শনীতে। যে সকল শিল্পী অংশগ্রহণ করেছেন, তাদের অনেকেই শিল্পী হিসেবে অগ্রজ। শিল্পী হিসেবে তারা অনুসৃত। তাদের শিল্পবোধ ও শিল্পচর্চা অনুকরণীয় ও সমাদৃত।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে চারুকলা ইন্সসিটিটিউট এর সাবেক পরিচালক ড. আবদুস সাত্তার বলেন, ক্যলিগ্রাফী শিল্পের গুরুত্ব অপরিসীম। এই শিল্পের মাঝে আমরা কোন না কোনভাবে সম্পৃক্ত। সাধারণ অক্ষরকে সুন্দরভাবে গুছিয়ে তুলে ধরার নাম হচ্ছে ক্যলিগ্রাফী। সাধারণ অক্ষরগুলোকে শিল্পের মান দিয়ে সকলের সামনে তুলে ধরার জন্য ক্যালিগ্রাফী শিল্পীরা কাজ করে যাচ্ছে। আমাদের নিজস্ব একটা পরিচিতি আছে। আমাদের কর্মকান্ডে আমাদের পরিচিতিকে তুলে ধরতে হবে। নবীজি (সা:) ভালোবাসতেন ক্যলিগ্রাফি। তার জামাতা হযরত আলী রা. একজন ভালো ক্যালিগ্রাফার ছিলেন। অনেকেই মনে করে ক্যালিগ্রাফী মানেই মৌলবাদী শিল্প। অথচ হিন্দু শিল্পীরা ক্যালিগ্রাফী করে যাচ্ছে, পৃথিবীর বিভিন্ন ভাষায় ক্যালিগ্রাফী চর্চা হচ্ছে।
বিশেষ অতিথি শিল্পী হামিদুল ইসলাম বলেন, ক্যালিগ্রাফী হচ্ছে বর্ণময় বর্ণের ছটা। যা লিখছি তা শিল্পসম্মতভাবে প্রকাশ করা। আরিফুর রহমান বলেন,ছন্দবদ্ধ বিন্যাসকৃত অক্ষরই হচ্ছে ক্যালিগ্রাফী। শিল্পী ইব্রাহীম মন্ডল বলেন,শিল্পের বৈশিষ্টগত কারনে ক্যালিগ্রাফী অসাধারণ শিল্প। গল্পকার সেলিম আউয়াল বলেন, ক্যালিগ্রাফী সুদীর্ঘ কাল থেকে চলে আসছে। ক্যালিগ্রাফী নিয়ে আরবী ফর্সিতে অনেক গবেষনা হয়েছে। বাংলা ভাষায় বর্ণকে কিভাবে আরো বাঙময় করা যায় সে প্রচেষ্টা চলছে।তারই প্রয়াস সিলেটে দ্বিতীয়বারের মতো ক্যালিগ্রাফি প্রদর্শণীর আয়োজন।
সভাপতির বক্তব্যে চেয়ারম্যান অধ্যক্ষ মাওলানা ফরিদ উদ্দিন চৌধুরী বলেন, ক্যালিগ্রাফি প্রদর্শনীতে আমন্ত্রিত শিল্পীগণ সকলেই প্রথিতযশা, তাদের শিল্পবোধ ও শিল্পাচর্চা অনুকরণীয় ও সমাদৃত। আমরা তাদেরকে তাই সিলেটের শিল্পরসিকদের নিকট উপস্থাপন ও পরিচয় বন্ধন তৈরীর কাযক্রম হাতে নিয়েছি। আমাদের পরিকল্পিত দীর্ঘ যাত্রার এটি একটি ক্ষুদ্র প্রয়াস। ভাবিষ্যতে বড় পরসরে এই কার্যক্রমকে আরো এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার ইচ্ছা পোষন করে সভায় আমন্ত্রিত অতিথি, শিল্পী, কলাকুশলী এবং প্রদর্শনীতে আগত শিল্পপিয়াসীদের সকলকে অশেষ ধন্যবাদ জানান।
জালালাবাদ কলেজ ক্যাম্পাসে গতকাল শনিবার কলেজ পরিচালনা পরিষদের চেয়ারম্যান ও সাবেক সংসদ সদস্য অধ্যক্ষ ফরিদ উদ্দিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে ও কো-অডিনেটর আব্দুস শাকুরের পরিচালনায় আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। এতে প্রধান অতিথি হিসেবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা ইন্সসিটিটিউট এর সাবেক পরিচালক ড. আবদুস সাত্তার, বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন সুতন্বী ফন্টের স্রষ্টা শিল্পী হামিদুল ইসলাম, ক্যালিগ্রাফি একাডেমির সভাপতি আরিফুর রহমান, ক্যালিগ্রাফি শিল্পী ইব্রাহীম মন্ডল, কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর বাকী চৌধুরী এবং সুধীদের পক্ষে কেন্দ্রীয় মুসলিম সাহিত্য সংসদের এসিসট্যান্ট সেক্রেটারী সেলিম আউয়াল।
অনুষ্ঠানের শুরুতে কোরআন তেলাওয়াত করেন সৈয়দ আহমদ হোসেন ইমন ও সংগীত পরিবেশন করেন কাওসার আহমদ।এ সময় অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন ট্রাস্ট সেক্রেটারী এনামুল হক চৌধুরী, গভর্নিং বডির সদস্য মুক্তিযোদ্ধা মতিউর রহমান।
Leave a Reply