বুধবার, ১৮ জুন ২০২৫, ০৬:৪৩

যে কারণে মহাজোট ছাড়তে এরশাদের ভয়

যে কারণে মহাজোট ছাড়তে এরশাদের ভয়

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

দেশের সার্বিক পরিস্থিতি গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করছেন জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ। মহাজোটে থাকা না থাকা নিয়ে তিনি যে কোন সময় যে কোন সিদ্ধান্ত নিতে পারেন। তবে হাইকোর্টের একটি রায় নিয়ে ভীষণ টেনশনে দিন কাটছে তার। সপ্তম সংশোধনীতে সাবেক প্রেসিডেন্ট হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের ক্ষমতায় আসাকে বৈধতা দেয়া হয়েছিল। হাইকোর্টের রায়ের ফলে সংবিধানের ওই সংশোধনী এবং জনাব এরশাদের ক্ষমতা দখল দু’টোই অবৈধ হয়ে গিয়েছে। এ কারণে তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া প্রয়োজন বলে রায়ে উল্লেখ করা হয়েছে। একই সঙ্গে রায়ে বলা হয়েছে, এ ব্যবস্থা নেয়ার জন্য সরকার এবং জাতীয় সংসদের মূল ভূমিকা পালন করা উচিত। এ অবস্থায় মহাজোট ছাড়লে জাতীয় সংসদে সংখ্যাগরিষ্ঠ দল আওয়ামী লীগ তার বিরুদ্ধে কোন কঠোর ব্যবস্থা নিতে পারে। এ ভয়ে কাবু এরশাদ। প্রেসিডিয়ামের কয়েকজন সদস্য জানান, এখন সরকারের সঙ্গে না থাকলে পার্টির চেয়ারম্যানসহ জাতীয় পার্টি ক্ষতিগ্রস্ত হবে। আবার সরকারবিরোধী কথাবার্তা না বললেও দলের নেতা-কর্মীদের চাঙ্গা রাখা যাবে না। পাশাপাশি অন্যান্য মামলার ভীতি তো রয়েছেই। এসব বিষয় মাথায় রেখেই কৌশলে হাঁটছেন জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান ও সাবেক প্রেসিডেন্ট হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ। এরশাদের ঘনিষ্ঠ প্রেসিডিয়ামের এক সদস্য মনে করেন, নিকট অতীতে আওয়ামী লীগ- বিএনপির সঙ্গে থেকে জাতীয় পার্টি তেমন একটা লাভবান হয়নি। ১৯৯৬ ও ২০০৮ সালে আওয়ামী লীগকে সমর্থন দিলেও আখেরে এরশাদের ঝুলিতে কিছুই জোটেনি। উল্টো জাপায় দু’ দফা ভাঙন ধরেছে। নির্বাচিত সরকারের প্রেসিডেন্ট হওয়ার স্বপ্ন ভেঙে গেছে। পার্টির চেয়ারম্যান এরশাদের অভিযোগ, সাড়ে চার বছরে এ সরকারে থাকা অবস্থায় জাতীয় পার্টিকে মূল্যায়ন করা হয়নি। আসন হিসেবে জাতীয় পার্টিকে মন্ত্রণালয় দেয়া হয়নি। বিভিন্ন উপনির্বাচনে ছাড় দেয়া হয়নি জাতীয় পার্টিকে। মহাজোটের সরকার হলেও সরকারের গুরুত্বপূর্ণ সব সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে তাদের বাদ দিয়েই। জাতীয় পার্টির অন্য নেতাদের মতে, হেফাজতে ইসলামের নেতাকর্মীদের ওপর নির্যাতন, গ্রামীণ ব্যাংক, হলমার্কসহ বিভিন্ন বড় বড় ঘটনায় মহাজোট সরকার কি সিদ্ধান্ত নেবে সে সব বিষয়ে শরিকদের সঙ্গে কোন আলোচনা করার প্রয়োজন বোধ করেনি। এছাড়া, তৃণমূল পর্যায়েও জাতীয় পার্টির নেতাকর্মীদের মূল্যায়ন করা হয়নি। আওয়ামী লীগ-ছাত্রলীগের হাতে পার্টির চেয়ারম্যান রংপুরে লাঞ্ছিত হয়েছেন। মহাসচিবের গাড়ি ভাঙচুর করা হয় বরিশালে। সংসদে এরশাদকে পাগল ও ছাগল বলেও আক্রমণ করেন আওয়ামী লীগের এমপিরা। এসব কারণে জাতীয় পার্টির ৪৭ প্রেসিডিয়াম সদস্যের মধ্যে ৩৫ জন সদস্যই মহাজোট থেকে বের হয়ে আসার পক্ষে। মহাজোট থেকে বের হওয়ার জন্য তৃণমূল পর্যায় থেকেও বারবার এরশাদের ওপর চাপ সৃষ্টি করা হচ্ছে দীর্ঘদিন ধরে। এসব কারণে সমপ্রতি অনুষ্ঠিত দেশের পাঁচ সিটি করপোরেশনের নির্বাচনে সমর্থন দেয়নি জাতীয় পার্টির তৃণমূল নেতারা। সর্বশেষ গাজীপুরেও জাতীয় পার্টির তৃণমূল নেতাকর্মীরা মহাজোট প্রার্থীর বিপক্ষে ভোট দিয়েছে এরশাদের নির্দেশ উপেক্ষা করে। জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে এমনি সব ভাবনা তাড়িত করছে তৃণমূল থেকে সাবেক প্রেসিডেন্ট হুসেইন মুহম্মদ এরশাদকে। জাতীয় পার্টির কয়েকজন প্রেসিডিয়াম সদস্য মনে করেন, হাইকোর্টের রায় এবং ভারত প্রীতিই এরশাদকে অস্থির করে রেখেছে। জেল ভীতি এখনও তিনি কাটিয়ে উঠতে পারেননি। পাশাপাশি ৪৩টি মামলায় কাতর তিনি। সরকারদলীয় নেতাকর্মীদের সকল মামলা প্রত্যাহার করে নেয়া হয়েছে। এরশাদের একটি মামলাও প্রত্যাহার করা হয়নি। সবগুলো মামলাই তাকে মোকাবিলা করতে হচ্ছে। জেনারেল মঞ্জুর হত্যা মামলা ও রাডার ক্রয় দুর্নীতি মামলা এখনও এরশাদের মাথার ওপর ঝুলছে। বাকি মামলাগুলোর নিষ্পত্তি অথবা ফাইনাল রিপোর্ট দেয়া হয়েছে। আর এসব কারণেই সম্প্রতি একটি অনুষ্ঠানে এরশাদ বলেন, বুকে আমার আগুন জ্বলছে। এ আগুন ক্ষমতায় না যাওয়া পর্যন্ত নিভবে না। জাতীয় পার্টি বর্তমানে দুই ধারায় বিভক্ত। রওশন এরশাদ, কাজী জাফর আহমদ ও মহাসচিব এবিএম রুহুল আমিন হাওলাদার সহ একটি গ্রুপ চাইছেন ১৮ দলের সঙ্গে জোট বেঁধে আগামী জাতীয় নির্বাচন করতে। আর জিএম কাদের, জিয়াউদ্দিন বাবলুসহ অপর গ্রুপটি চাইছেন মহজোটেই থেকে যেতে। সপ্তম সংশোধনী বাতিলের রায়: সপ্তম সংশোধনীতে সাবেক প্রেসিডেন্ট জেনারেল হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের ক্ষমতায় আসাকে বৈধতা দেয়া হয়েছিল। হাইকোর্টের রায়ের ফলে সংবিধানের ওই সংশোধনী এবং জনাব এরশাদের ক্ষমতা দখল দু’টোই অবৈধ হয়ে গিয়েছে। রায়ে বলা হয়েছে আগামীতে সামরিক শাসন জারি করে এমন ধরনের ক্ষমতা দখলকে নিরুৎসাহিত করতেই এর বিরুদ্ধে আইন তৈরি করা উচিত এবং অতীতে এমন ক্ষমতা দখলের বিচারও করা উচিত। অবৈধ ক্ষমতা দখলের অভিযোগে জেনারেল এরশাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া প্রয়োজন বলে রায়ে উল্লেখ করা হয়েছে। একই সঙ্গে রায়ে বলা হয়, এ ব্যবস্থা নেয়ার জন্য সরকার ও জাতীয় সংসদের মূল ভূমিকা পালন করা উচিত। চট্টগ্রামে একটি হত্যা মামলায় জেনারেল এরশাদের শাসনামলে সাজা পেয়েছিলেন, এমন একজন ব্যক্তি সপ্তম সংশোধনীর বিরুদ্ধে মামলাটি করেছিলেন। আদালত ওই সংশোধনীটিকে বাতিল করার এ রায় দেন ২০১০ সালের ২৯শে ডিসেম্বর। ওদিকে, জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ একক নির্বাচনের প্রস্তুতির কথাও বলছেন। বলছেন ২০০ আসনে প্রার্থী চূড়ান্ত করার কথা। জরিপও করেছেন। রাজনীতিতে শেষ বলে কোন কথা নেই। এরশাদ কি শেষ পর্যন্ত মহাজোটেই থেকে যাবেন, নাকি বিএনপির সঙ্গে নতুন করে জোট বাঁধবেন? এ দৃশ্য দেখার জন্য আমাদের আরও কয়েক মাস অপেক্ষা করতে হবে। মহাজোট সরকারের ক্ষমতা হস্তান্তরের আগ মুহূর্ত পর্যন্ত।

 




Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *



পুরানো সংবাদ সংগ্রহ

সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি রবি
 
১০১১১২১৩১৪১৫
১৬১৭১৮১৯২০২১২২
২৩২৪২৫২৬২৭২৮২৯
৩০  
All rights reserved © shirshobindu.com 2012-2025