বানিজ্য ডেস্ক: লাইসেন্সিং চুক্তি করে বাংলাদেশের কারখানায় উৎপাদন করে ওষুধ নিতে চান জাপানি উদ্যোক্তারা।
সম্প্রতি বাংলাদেশ ওষুধ প্রশাসনের শীর্ষ কর্মকর্তারা ও ওষুধ শিল্প সমিতির নেতারা ওষুধ শিল্প পরিদর্শনে জাপান সফরে যান। তাদের কাছে জাপানি ব্যবসায়ীরা এ প্রস্তাব দিয়েছেন। ইতিমধ্যে জাপানি ব্যবসায়ীদের এ পরিকল্পনার অগ্রগতিও বেশ সন্তোষজনক হয়েছে বলে ওষুধ উৎপাদনকারীরা জানিয়েছেন।
ওষুধ শিল্প সমিতির মহাসচিব এস এম শফিউজ্জামান বলেন, বিশ্বের অন্যতম সমৃদ্ধশালী দেশ জাপানে আমরা গিয়েছিলাম সেখানকার ওষুধ শিল্প পরিদর্শনের জন্য। ১২ দিনের সফরে অনেক অভিজ্ঞতা অর্জন করেছি। জাপান বাংলাদেশের ওষুধ শিল্পে বিনিয়োগের দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করেছে। একই সঙ্গে তারা লাইসেন্সিং চুক্তি করে বাংলাদেশ থেকে ওষুধ উৎপাদন করে নিজ দেশে নিয়ে যাবে বলেও পরিকল্পনা করছে।
তিনি বলেন, যে কারখানায় তারা কাজ করবে সেই কারখানায় তাদের নিজস্ব কাঁচামাল থাকবে। মেশিনারিজও তাদের থাকবে। বাদবাকি আমাদের দেশ থেকে পূরণ করা হবে। এর পর তারা এখানে উৎপাদিত ওষুধ নিজ দেশে নিয়ে যাবে। পাশাপাশি তারা বিভিন্ন দেশে রপ্তানিও করতে পারে।
তিনি বলেন, মুন্সীগঞ্জে ওষুধ পার্ক পূর্ণাঙ্গ চালু হলে ওষুধ শিল্পের কাঁচামালের জন্য আর কারো কাছে মুখাপেক্ষী হয়ে থাকতে হবে না। বরং আমরাই উল্টো কাঁচামাল রপ্তানি করতে পারবো। ফলে তখন জাপানি উদ্যোক্তারা আরো সুবিধা পাবে।
উদ্যোক্তারা বলেন, ওষুধের গুণগত মান বজায় রাখায় বিদেশি বাজারে দেশীয় ওষুধের চাহিদা বাড়ছে। এর অন্যতম কারণ হচ্ছে, অন্য দেশের তুলনায় বাংলাদেশে উৎপাদনে ওষুধের দাম অনেক কম। আবার শ্রমিক মজুরিও কম।
ফলে অনেক সীমাবদ্ধতার মধ্যেও এই শিল্পের মানসম্মত উৎপাদনশীলতার জন্য যথেষ্ট সুনাম অর্জন করেছে, আন্তর্জাতিক মান অর্জনে সক্ষম হয়েছে। দেশের অনেক কোম্পানিই এখন আন্তর্জাতিক মানের ওষুধ তৈরি করছে। উন্নত বিশ্বের দেশগুলোর সার্টিফিকেশন সনদও পেয়েছে বেশকিছু কোম্পানি। বিশ্বের ১২৭টি দেশে দেশের ওষুধ রপ্তানি হচ্ছে।
ফলে বিদেশি উদ্যোক্তাদের চোখ এখন বাংলাদেশের ওপর পড়েছে। এ কারণেই জাপানিরা বাংলাদেশের কারখানায় ওষুধ উৎপাদনে আগ্রহ প্রকাশ করেছে।
তাদের মতে, আরেকটি কারণ হলো- বাংলাদেশসহ স্বল্পোন্নত দেশগুলোর (এলডিসি) জন্য ২০৩৩ সাল পর্যন্ত ওষুধের মেধাস্বত্বে বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার (ডব্লিউটিও) ছাড়ের সুযোগ রয়েছে। এ ছাড়া মুন্সীগঞ্জের গজারিয়ায় অবস্থিত ওষুধ শিল্পনগরী প্রকল্পের (এপিআই) শিল্পপার্ক হচ্ছে। এই পার্কে কাঁচামাল উৎপাদনের সব ধরনের সুবিধা প্রণয়ন করে দেবে সরকার।
এরপরই সেখানে ওষুধের কাঁচামাল উৎপাদনের কারখানা স্থাপন শুরু হবে। ফলে আমদানি খরচ শতকরা ৭০ ভাগ কমে আসবে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। এসব কারণে এদেশে ওষুধ উৎপাদন খরচ অনেক কমে আসবে।
ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তরের তথ্য মতে, এখন দেশের বেশির ভাগ ওষুধের কাঁচামাল বিদেশ থেকে আমদানি করতে হয়। দেশে ওষুধের কাঁচামালের বাজার ১২০০ কোটি টাকার মতো। দেশের বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠান বর্তমানে কাঁচামাল উৎপাদন করছে। উন্নতমানের ৫৪টির বেশি কোম্পানি ৩০৩টি গ্রুপের ওষুধ রপ্তানি করে। গত অর্থবছরে প্রায় ৬০৪ কোটি টাকার ওষুধ রপ্তানি হয়েছিল।
বাংলাদেশ ওষুধ শিল্প সমিতির তথ্য অনুযায়ী, দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে ২৬৯টি ছোট-বড় ওষুধ কারখানা রয়েছে। এর মধ্যে ১৬৪টি ওষুধ কারখানা সচল। এসব কোম্পানি সম্মিলিতভাবে প্রায় ৫ হাজার ব্র্যান্ডের ৮ হাজারের বেশি ওষুধ উৎপাদন করছে।
যার মধ্যে বড় ১০টি কোম্পানি দেশের চাহিদার ৮০ শতাংশ মিটিয়ে থাকে। বড় ২০টি কোম্পানি বিবেচনায় নিলে তারা মোট চাহিদার ৯০ শতাংশ সরবরাহ করছে। আর ৪০টি কোম্পানি ১৮২টি ব্র্যান্ডের সহস্রাধিক রকমের ওষুধ রপ্তানি করে।