বুধবার, ২৩ এপ্রিল ২০২৫, ০৫:৫১

বিশ্বকাপ ট্রফি বাংলাদেশে: যা দেখে ধন্য হয় চোখ

বিশ্বকাপ ট্রফি বাংলাদেশে: যা দেখে ধন্য হয় চোখ

গ্যালারী থেকে: উচ্চতা ৩৬.৮ সেন্টিমিটার। ওজন ৬.১৭৫ কেজি। ১৮ ক্যারেট স্বর্ণের তৈরি এই বিশ্বকাপ ট্রফির জন্যই এত আয়োজন। এত লড়াই। যে ট্রফিতে চুমু এঁকে দেওয়া বিশ্বের সব ফুটবলারের আজন্ম আরাধ্য স্বপ্ন। এই ট্রফির জন্য লড়াই করে বিশ্বের প্রায় প্রতিটি দেশ। এবারও যেমন বিশ্বকাপ বাছাই পর্বে অংশ নিয়েছে ২০৭টি দেশ। মজার ব্যাপার হলো, জাতিসংঘের সদস্য কিন্তু ১৯৩টি। অর্থাত্ বিশ্বকাপে অংশ নেয় জাতিসংঘের সদস্যের চেয়েও বেশি দেশ। আক্ষরিক অর্থেই তাই এটি বিশ্বকাপ!

এত এত দেশ বিশ্বকাপের লড়াইয়ে অংশ নিলেও এখন পর্যন্ত মাত্র আটটি দেশের সৌভাগ্য হয়েছে এ ট্রফিটি জেতার। বলা বাহুল্য, সেই বিশ্বকাপ ট্রফিটি জয় করে দেশে আনা আমাদের দেশের জন্য এখনো আলোকবর্ষ দূরের একটি স্বপ্ন। তবে অতিথি হয়ে হলেও স্বপ্নের সেই ট্রফিটি কিন্তু এখন বাংলাদেশে। ২০০২ সালেও একবার এই ট্রফি এসেছিল বাংলাদেশে। কিন্তু সেবার আসলে ছিল ট্রফিটির রেপ্লিকা। কিন্তু এবার আয়োজকদের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, রেপ্লিকা নয়, আসল ট্রফিই এসেছে বাংলাদেশে।

আজ দুপুরে সেই ট্রফিটি উড়িয়ে নিয়ে আসা বিশেষ বিমান রানওয়ে স্পর্শ করেছে ঢাকার শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের। সেখান থেকে ট্রফিটি যাবে রাষ্ট্রপতি আর প্রধানমন্ত্রীর কাছে। সাধারণ মানুষের জন্য ট্রফিটির প্রদর্শনীর ব্যবস্থা থাকছে আগামীকাল ও পরশু। বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামে রাখা হবে ট্রফিটি। ১৫ হাজার দর্শক দেখতে পারবেন ট্রফিটি। এঁদের মধ্যে নয় হাজার ভাগ্যবান দর্শক নির্বাচিত করেছে বিশ্বকাপের অন্যতম স্পনসর কোমল পানীয় প্রতিষ্ঠান কোকা-কোলা। ৮৯টি দেশে ২৬৭ দিনের পরিভ্রমণে বেরিয়েছে বিশ্বকাপ ট্রফিটি। তারই অংশ হিসেবে এসেছে বাংলাদেশে। যে ট্রফি দেখার সৌভাগ্য পৃথিবীর সব মানুষের হয় না। তাই ট্রফিটি দেখে, চক্ষুকর্ণের বিবাদ ভঞ্জন করেও ধন্য হওয়া সম্ভব।

এই ট্রফির গায়ে দুজন মানুষের প্রতিকৃতি রয়েছে, যাঁরা পৃথিবীকে ধরে আছেন। বিশ্বকাপ ট্রফি জয় বিশ্ব জয়েরই প্রতিচ্ছবি—ইতালিয়ান শিল্পী সিলভিও গাজ্জানিগা তাঁর সৃষ্টি সম্পর্কে এমনটিই বলেছিলেন। সাতটি দেশের ৫৩টি ডিজাইন থেকে ফিফা বেছে নিয়েছিল গাজ্জানিগার ডিজাইনটি।

মজার ব্যাপার হলো এটি কিন্তু বিশ্বকাপের প্রথম ট্রফি নয়। বিশ্বকাপ ফুটবলের প্রথম ট্রফিটি পরিচিত ছিল ‘ভিক্টোরি’ নামে। পরে সাবেক ফিফা সভাপতি জুলে রিমের সম্মানে এর নামকরণ করা হয় ‘জুলে রিমে ট্রফি’। এ ট্রফিটি মূর্ত হয়েছিল গ্রিকদের জয়ের দেবতা নাইকির প্রতিকৃতিতে। সে সময়ের নিয়ম অনুযায়ী তিনবার বিশ্বকাপ জিতলে ট্রফি চিরতরে সেই দেশ নিয়ে যেতে পারত।

ব্রাজিল ১৯৭০ সালে তৃতীয়বারের মতো ট্রফি জিতে জুলে রিমে ট্রফি নিজেদের করে নেয়। কিন্তু দুর্ভাগ্যের বিষয় ব্রাজিলও ট্রফিটি চিরতরে ধরে রাখতে পারেনি। ১৯৮৩ সালের ২০ ডিসেম্বর ব্রাজিল ফুটবল সংস্থার এক প্রদর্শনী বক্স থেকে ট্রফিটি চুরি হয়ে যায়। ধারণা করা হয় চোরেরা দ্বিতীয়বারের মতো চুরি হওয়া ট্রফিটিকে গলিয়ে ফেলেছে। হ্যাঁ, এর আগেও একবার ট্রফিটি চুরি হয়েছিল।

১৯৬৬ সালের বিশ্বকাপ ফাইনালের ঠিক আগে লন্ডনে প্রদর্শনরত ট্রফিটি প্রথম চুরি হয়। তখন পিকলস নামক একটি কুকুর ট্রফিটিকে দক্ষিণ লন্ডনের নরউডের সাবারবেন বাগান থেকে, মাটির নিচে লুকিয়ে রাখা ট্রফিটি উদ্ধার করে। কুকুরটির মালিক ডেভিড করবার্টকে অবশ্য এর জন্য ছয় হাজার পাউন্ড পুরস্কৃত করা হয়। আর ট্রফিটির বিনিময়ে ১৫ হাজার পাউন্ড দাবি করা চোরকে দেওয়া হয় দুই বছরের জেল।

অবশ্য বর্তমানে ব্রাজিলে সেই ট্রফির একটি কপি রয়েছে, যা জার্মান এক স্বর্ণকারকে দিয়ে তৈরি করে দিয়েছে কোডাক কোম্পানি। বর্তমানে বিশ্বকাপ জিতলে আর ট্রফিটি চিরতরে দেওয়ার নিয়ম নেই। প্রতিবারের চ্যাম্পিয়নদের মূল ট্রফির আদলে একটি রেপ্লিকা দেওয়া হয়।

অবশ্য এ ট্রফিটিও ফিফাকে বদলাতে হবে ২০৪২ বিশ্বকাপে। কেননা ট্রফির গায়ে বিশ্বকাপজয়ী দল ও অর্জনের সন লিখে রাখা হয়। যেখানে লেখা সম্ভব ১৭টি জয়ীর নাম। সে হিসেবে ২০৪২ থেকে ফিফাকে ব্যবহার করতে হবে নতুন ট্রফি। অদূর ভবিষ্যতে হলেও কি সেই ট্রফির গায়ে লেখা থাকবে বাংলাদেশের নাম?




Comments are closed.



পুরানো সংবাদ সংগ্রহ

সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি রবি
 
১০১১১২১৩
১৪১৫১৬১৭১৮১৯২০
২১২২২৩২৪২৫২৬২৭
২৮২৯৩০  
All rights reserved © shirshobindu.com 2012-2025