গ্যালারী থেকে ডেস্ক: জয়ের জন্য তখন ইংল্যান্ডের প্রয়োজন ১২ বলে ১৬ রান। আর বাংলাদেশের ২ উইকেট। অস্ট্রেলিয়ার অ্যাডিলেড ওভালসহ গোটা বাংলাদেশ তখন উত্তেজনায় কাঁপছে। তবে কি ইংল্যান্ডকে হারিয়ে বিশ্বকাপের কোয়ার্টার ফাইনালে উঠতে পারবে বাংলাদেশ? নাকি অপেক্ষা বাড়বে? শত প্রশ্ন আর শঙ্কায় বাংলাদেশের ১৬ কোটি মানুষের গায়ের প্রতিটা লোম তখন দাঁড়িয়ে গেছে! বোলিংয়ে এলেন রুবেল হোসেন।
আর এসেই একি দেখালেন রুবেল! প্রথম ৩ বলেই দুই ইংলিশ ব্যাটসম্যানের স্ট্যাম্প ভেঙে দিলেন গতিময় এই পেসার। সঙ্গে সঙ্গে ইতিহাসে নাম লেখাল বাংলাদেশ। ইংল্যান্ডকে হারিয়ে নিজেদের ১৬ বছরের বিশ্বকাপ ইতিহাসে প্রথমবারের মতো কোয়ার্টার ফাইনালে (নকআউট পর্ব) ওঠার কীর্তি গড়লেন টাইগাররা। আর টুর্নামেন্ট থেকে বিদায় নিয়ে বাড়ি ফেরার প্রহর গুনতে শুরু করলেন ইংলিশরা। সোমবার বিশ্বকাপের ৩৩তম ম্যাচে ইংল্যান্ডকে ১৫ রানে হারিয়েছে বাংলাদেশ। টাইগারদের ৭ উইকেটে করা ২৭৫ রানের জবাবে ২৬০ রানে ইনিংস গুটিয়ে যায় ইংলিশদের। বাংলাদেশের পক্ষে সর্বোচ্চ ৪ উইকেট নেন রুবেল। ইংলিশদের ২৭৬ রানের লক্ষ্য ছুড়ে দিয়ে অবশ্য বোলিংয়ের শুরুটা ভালো ছিল না বাংলাদেশের। ১৯.৫ ওভারে মাত্র ২ উইকেট হারিয়ে ৯৭ রান সংগ্রহ করে ইংল্যান্ড। তবে এরপর মুহূর্তেই ইংলিশদের ইনিংসের গতিপথ পরিবর্তন করে দেন রুবেল হোসেন।
এক ওভারেই দুই ইয়ান, মানে ইয়ান বেল ও ইয়ান মরগানের উইকেট তুলে নিয়ে ইংলিশদের ভীষণ চাপে ফেলেন দেন রুবেল। বেলকে (৬৩) মুশফিকুর রহিমের ক্যাচ বানিয়ে ফেরানোর পর মরগানকে সাকিবের দুর্দান্ত এক ক্যাচে পরিণত করেন তিনি। এরপর দ্রুতই জেমস টেলরকে সাজঘরে ফেরান তাসকিন আহমেদ। ১৩২ রানেই ৫ উইকেট হারিয়ে ইংলিশরা তখন ধুঁকছিল। জস বাটলারকে নিয়ে জো রুট প্রতিরোধ গড়ার চেষ্টা করলেও তাদের ৩১ রানের জুটি ভাঙেন মাশরাফি। রুটকে (২৯) মুশফিকের ক্যাচ বানিয়ে বিদায় করেন তিনি।
তখন ইংল্যান্ডের জয়ের জন্য প্রয়োজন ছিল ৮৬ বলে ১১৩ রান। সপ্তম উইকেটে ক্রিস ওয়াকসকে নিয়ে ঘুরে দাঁড়ান বাটলার। একসময় মনে হচ্ছিল, শেষ পর্যন্ত কি তীরে এসে আবারও তরি ডুববে বাংলাদেশের! কারণ তখন ইংল্যান্ডের জয়ের জন্য প্রয়োজন ছিল ২৬ বলে ৩৮ রান। তবে ইনিংসের ৪৫তম ওভারের পঞ্চম বলে বাটলারকে ফিরিয়ে বাংলাদেশকে ম্যাচে ফেরান তাসকিন। আর পরের বলেই ক্রিস জর্ডানকে রানআউটের ফাঁদে ফেলে বাংলাদেশের জয়ের উজ্জ্বল সম্ভাবনা তৈরি করেন সাকিব। এক পর্যায়ে জয়ের জন্য ইংল্যান্ডের প্রয়োজন পড়ে ১৫ বলে ২০ রান।
আর তখনই তাসকিনের বলে ক্রিস ওয়াকসের তুলে মারা সহজ একটি ক্যাচ ছেড়ে দিলেন লং অফে দাঁড়িয়ে থাকা তামিম। মুহূর্তেই ১৬ কোটি বাঙালির হৃদয় যেন ভেঙে টুকরো টুকরো হয়ে গেল! কিন্তু কে জানত, সে ভাঙা হৃদয় জোড়া দিতে অপেক্ষা করছেন রুবেল!১১ রানের জন্য সেঞ্চুরি মিস করেন মুশফিক। ইনিংসের ৪৮তম ওভারে ব্রডের বলে কভারে জর্ডানের হাতে ধরা পড়েন তিনি ( ৮৯)। ৭৭ বলে ৮টি চার ও এক ছক্কায় ইনিংসটি সাজান মুশফিক।
শেষ পর্যন্ত ৭ উইকেটে ২৭৫ রানের লড়াকু পুঁজি পায় বাংলাদেশ। আর এই পুঁজিই শেষ পর্যন্ত বাংলাদেশকে বিশ্বকাপের কোয়ার্টার ফাইনালের টিকিট এনে দিল। ম্যাচসেরার পুরস্কার জিতেছেন সেঞ্চুরিয়ান মাহমুদউল্লাহ।