রবিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৫, ০৭:৫৯

আদিত্য-সুরজ ‘লাইক ফাদার, লাইক সান!’

আদিত্য-সুরজ ‘লাইক ফাদার, লাইক সান!’

 

 

 

 

 

 

 

 

 

তানভীর খালেক : জিয়া খানের আত্মহত্যায় প্ররোচনার দায়ে গ্রেপ্তার হয়েছেন বলিউডের অভিনেতা আদিত্য পাঞ্চোলির ছেলে সুরজ পাঞ্চোলি। এ ঘটনার পরপরই প্রখ্যাত ভারতীয় কলামিস্ট ও ঔপন্যাসিক শোভা দে তাঁর ব্লগে সুরজ ও আদিত্যকে উদ্দেশ করে মন্তব্য করেছেন, ‘লাইক ফাদার, লাইক সান।’ এতে আদিত্য ভীষণ ক্ষুব্ধ হলেও তাঁর অতীতের কীর্তি ঘাঁটলে শোভা দের উক্তিকে খুব বেশি ভুল বলা যায় না। কারণ, আদিত্যের বিরুদ্ধে নারী নির্যাতন, পরকীয়া জড়ানোর পাশাপাশি কিশোরী ধর্ষণের মতো গুরুতর সব অভিযোগ রয়েছে। সম্প্রতি এক প্রতিবেদনে জিনিউজ এ তথ্য জানিয়েছে।

জীবনের শেষ চিঠিতে প্রেমিক সুরজের বিষয়ে নানা গুরুতর অভিযোগ করে গেছেন সদ্য প্রয়াত বলিউডের অভিনেত্রী জিয়া খান। সেগুলোর মধ্যে ধর্ষণ ও গর্ভপাতের মতো বিষয়ও আছে। জিয়ার সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক থাকলেও বয়সে ২০ বছরের বড় এক নারীর সঙ্গে প্রণয়ে জড়িয়ে পড়েন সুরজ। পাঞ্চোলি পরিবারে গয়না সরবরাহ করতেন ওই নারী। সুরজের অনেক অত্যাচার মুখ বুজে সইলেও প্রেমিকের কাছ থেকে প্রতারণার বিষয়টিকে কোনোভাবেই মেনে নিতে পারেননি জিয়া। ৩ জুন রাতে পশ্চিম মুম্বাইয়ের জুহু বিচসংলগ্ন নিজ বাসায় ওড়না গলায় পেঁচিয়ে আত্মহত্যার মতো কঠিন পথ বেছে নেন তিনি। এভাবেই মাত্র ২৫ বছর বয়সে নিভে যায় উঠতি এই তারকা অভিনেত্রীর জীবনপ্রদীপ।

আশির দশকে বলিউডে যাত্রা শুরু করেছিলেন সুরজের বাবা আদিত্য পাঞ্চোলি। সর্বশেষ গত জানুয়ারিতে মুক্তি পাওয়া ‘রেস টু’ ছবিতে দেখা গেছে তাঁকে। এখন পর্যন্ত বিতর্কিত নানা কাণ্ড ঘটিয়ে বেশ কয়েকবার মুখরোচক সব খবরের জোগান দিয়েছেন ৪৮ বছর বয়সী এ তারকা অভিনেতা। বলাই বাহুল্য, এসব কীর্তির কারণে তিনি সমালোচিত হয়েছেন বিভিন্ন মহলে।

জিনিউজে প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আদিত্য নব্বইয়ের দশকের জনপ্রিয় বলিউডি অভিনেত্রী পূজা বেদির সঙ্গে প্রেমের সম্পর্কে জড়ান। অবিশ্বাস্য শোনালেও প্রেমিকা পূজা বেদির ১৫ বছর বয়সী কিশোরী কাজের মেয়েকে ধর্ষণের অভিযোগ উঠেছিল আদিত্যের বিরুদ্ধে। এ প্রসঙ্গে পূজা বেদি জানিয়েছিলেন, ‘আমার কাজের মেয়ের মুখে প্রথম যখন ঘটনাটা শুনলাম, নিজের কানকেই বিশ্বাস করতে পারছিলাম না। আমি আদিত্যকে সরাসরি জিজ্ঞেস করলাম। শুরুতে অস্বীকার করলেও, পরে সে দোষ স্বীকার করে নেয়। অভিনেত্রী হওয়ার স্বপ্নপূরণের জন্য আমার কাজের মেয়েটি তার বাড়ি থেকে পালিয়েছিল। বলিউডে কাজের সুযোগ করে দেওয়ার প্রলোভন দেখিয়ে আদিত্য তার সঙ্গে যৌন সম্পর্ক স্থাপন করে। আপাতদৃষ্টিতে এটা হয়তো ধর্ষণের ঘটনা নয়। কিন্তু অপ্রাপ্তবয়স্ক একটি মেয়ের সঙ্গে আদিত্যর এ ধরনের আচরণকে ধর্ষণ না বলে উপায় নেই। আমার কাজের মেয়ে ঘটনাটি ফাঁস করে দিলেও, অনেক মেয়ের পক্ষেই হয়তো তা সম্ভব হতো না। বিষয়টিকে নিজের দোষ ভেবে আপস কিংবা ভুলে যাওয়ার চেষ্টা করত তারা। এমন ভয়ংকর ঘটনার পর আদিত্যকে আমার জীবন থেকে ছুড়ে ফেলে দিয়েছিলাম। সে বীভত্স ঘটনা এখন আর মনে করতে চাই না আমি।’

নির্মাতা রাজন পাঞ্চোলির ছেলে আদিত্য ১৯৮৬ সালে বয়সে পাঁচ বছরের বড় অভিনেত্রী জেরিনা ওয়াহাবকে বিয়ে করেন। তাঁদের ছেলে সুরজ ও মেয়ে সানা। ২০০৬ সালে ‘গ্যাংস্টার’ ছবির মাধ্যমে বলিউডে অভিষেক হয়েছিল কঙ্গনা রানাউতের। তিনি বলিউডে শক্ত আসন গাড়তে যখন সংগ্রাম করছিলেন, তখন তাঁর পাশে দাঁড়ান আদিত্য। একপর্যায়ে বয়সে ২২ বছরের ছোট কঙ্গনাকে প্রেমের জালে জড়িয়ে ফেলেন বিবাহিত ও দুই সন্তানের জনক আদিত্য। এমনকি জনসমক্ষে কঙ্গনার সঙ্গে থিতু হওয়ারও ঘোষণা দিয়েছিলেন তিনি। পরে অবশ্য তাঁদের সে সম্পর্ক স্থায়ী হয়নি। এ প্রসঙ্গে আদিত্যর ভাষ্য ছিল, ‘এখন আর আমরা একে অপরের মুখ দেখি না। অথচ একটা সময়ে আমরা স্বামী-স্ত্রীর মতোই সময় কাটিয়েছি। আমরা তিন বছর একসঙ্গে বসবাস করেছি। মুম্বাইয়ের ইয়ারি রোডে আমাদের দুজনের জন্য একটি বাড়ি তৈরির কাজও শুরু করেছিলাম আমি।’ আদিত্য আরও বলেন, ‘একবার বাড়ি কেনার জন্য কঙ্গনা আমার কাছে এক কোটি রুপি চেয়েছিল। নিজের পকেট থেকে আমি তাকে ৫৫ লাখ রুপি দিয়েছিলাম। তার বোনের ওপর যখন এসিড ছুড়ে মারা হয়, তখন কঙ্গনাকে ১০ লাখ রুপি দিয়েছিলাম। সেটা দিয়েই বোনের প্লাস্টিক সার্জারি করিয়েছিল সে। এ ছাড়া তার বোনের চিকিত্সার অন্যান্য খরচও আমি বহন করি। আমি সেই ১০ লাখ রুপি ফেরত চাই না। কিন্তু বাড়ি কেনার জন্য কঙ্গনাকে আমি যে টাকা ধার দিয়েছিলাম, সেটা ফেরত চাই। সে আমাকে ২৫ লাখ রুপি ফেরত দিয়েছে। এখনো আমি তার কাছে ৩০ লাখ রুপি পাব।’

একাধিকবার পরকীয়ায় জড়িয়েছেন আদিত্য। অকপটে তা স্বীকারও করেছেন। এ প্রসঙ্গে তাঁর ভাষ্য, ‘অসংখ্য নারীর সঙ্গে প্রণয়ে জড়িয়েছি আমি। কিন্তু পারতপক্ষে তাদের নাম কাউকে জানতে দিইনি। আমি আমার স্ত্রীর কাছে চিরকৃতজ্ঞ। আমি তাকে প্রচুর যন্ত্রণা দিলেও, সে আমাকে ছেড়ে যায়নি। পরিবারের সদস্যদের মুখের দিকে তাকিয়েই সে এমনটা করেছে।’ জিয়া খানের মা রাবেয়া আমিন তাঁর মেয়ের আত্মহত্যার জন্য সুরজের পাশাপাশি তাঁর বাবা আদিত্য পাঞ্চোলিকেও দায়ী করেছেন। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘কিছু কিছু সংবাদমাধ্যমে বলা হচ্ছে, আমার মেয়ে ক্যারিয়ার নিয়ে হতাশ ছিল বলে আত্মহত্যা করেছে। কিন্তু সত্যিটা হলো, সুরজ ও তার বাবা আদিত্য পাঞ্চোলির কাছ থেকে অসহনীয় যন্ত্রণা পাওয়ার কারণেই আত্মহত্যার মতো কঠিন পথ বেছে নিতে বাধ্য হয়েছে জিয়া।’ জিয়ার আত্মহত্যার এক দিন পর গত ৪ জুন সুরজের পাশাপাশি তাঁর বাবা আদিত্যকেও জিজ্ঞাসাবাদ করেছিল মুম্বাই পুলিশ। তিনি আরও বলেন, বাবার উচ্ছৃঙ্খল আচরণ দেখতে দেখতেই বেড়ে উঠেছে সুরজ পাঞ্চোলি। বেশির ভাগ সন্তানই তার বাবাকে আদর্শ হিসেবে মেনে নিতে চায়। সুরজও হয়তো তেমনটাই করেছে। সুরজের নৈতিক স্খলনের জন্য বাবা হিসেবে কোনোভাবেই দায় এড়াতে পারেন না আদিত্য।

 




Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *



পুরানো সংবাদ সংগ্রহ

সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি রবি
 
১০১১১২১৩
১৪১৫১৬১৭১৮১৯২০
২১২২২৩২৪২৫২৬২৭
২৮২৯৩০  
All rights reserved © shirshobindu.com 2012-2025