ইকবাল সরকার: আওয়ামী লীগের মনোনয়নবঞ্চিত মেয়রপ্রার্থী পদত্যাগী উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর আলমকে নিয়ে সৃষ্টি হয়েছে ধূম্রজালের। দু’দিন ধরে তার কোন পাত্তা না পেয়ে কথাবার্তার ডালপালা বাড়ছেই। কেউ বলছেন অপহরণ , কেউ বলছেন নিখোঁজ। কেউ বলছেন তাকে আটক করে রাখা হয়েছে।
নির্বাচনের প্রতীক বরাদ্দের পর খোলা জিপ গাড়িতে দাঁড়িয়ে জনতার উদ্দেশে আনারস হাতে তুলে তা দেখাতে দেখাতে গাজীপুর ছেড়ে গণসংযোগের জন্য যান টঙ্গীতে। এরপর থেকেই গাজীপুরবাসী তাকে আর দেখেননি। তিনি কোথায় আছেন, কিভাবে আছেন তা জানার প্রচণ্ড আগ্রহ এলাকাবাসীর। তার নির্বাচন সমন্বয়কারী ওয়ার্ড আওয়ামী লীগ সভাপতি নুরুল ইসলাম তো দূরের কথা তার পরিবারের লোকজনও বলতে পারছেন না তিনি কোথায় আছেন, কিভাবে আছেন। সেলফোনে তার সঙ্গে বুধবার কথা হয়েছে এই প্রতিবেদকের।
তিনি মানবজমিনকে জানান, ‘এ মুহূর্তে অনেক কিছুই বলা যাচ্ছে না। আমার জন্য আর মায়ের জন্য দোয়া করবেন। আমার মা অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।’ নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানো কিংবা ১৪ দলের প্রার্থীকে সমর্থনের ব্যাপারে তিনি কিছুই বলতে রাজি হননি। তবে তিনি বলেন, তার প্রতীক আনারস রয়েছে নির্বাচনী মেয়র প্রার্থীদের তালিকায়। জাহাঙ্গীরের নির্বাচনের ঘনিষ্ঠ লোকজন বলছেন, নির্বাচন থেকে সরে যাননি তিনি। বরং তাকেই সরিয়ে ফেলা হয়েছে। তাদের বিশ্বাস নির্বাচনের প্রতিদ্বন্দ্বিতায় তিনি ঠিকই ফিরে আসবেন। জাহাঙ্গীরের ভাই আল আমিনের সঙ্গে কথা হয়েছে মোবাইল ফোনে।
আল আমীন জানালেন, ওই রাতে তাকে ঢাকায় নেয়ার পর রাতেই ভাইয়ের সঙ্গে কথা হয়েছে। এর পর দু’দিন ধরে আর যোগাযোগ করা সম্ভব হচ্ছে না। তাছাড়া, আমি আছি আমার অসুস্থ মাকে নিয়ে। জাহাঙ্গীরের নির্বাচন নিয়ে সরকারি দলের অবস্থানের বিষয় জেনে ওই রাতেই তার স্ট্রোক হয়। তাকে রাতেই ঢাকার একটি উন্নত হাসপাতালে নেয়া হয়। মা এখনও অসুস্থ। তবে অবস্থার উন্নতি হলে নেয়া হয় ঢাকায় এক আত্মীয়ের বাসায়। বৃহস্পতিবার সেখানেই আছেন। অসুস্থ মাকে দেখতে জাহাঙ্গীর যেতে পারেননি। তাহলে কোথায় আছেন জাহাঙ্গীর- এমন প্রশ্নের কোন উত্তর তার পরিবারের লোকজনের কাছে না থাকলেও আছে আওয়ামী লীগ নেতাদের কাছে। তারা বলছেন, তিনি আছেন ঢাকার মিরপুরের শ্বশুরের বাসায়। তার ভাই আর নির্বাচন সমন্বয়কারী দু’জনেই বলছেন, মনে হয় সেখানে নেই। নির্বাচনী এলাকায় তাকে নিয়ে সৃষ্টি হয়েছে ধূম্রজালের।
জাহাঙ্গীর প্রসঙ্গে ১৪ দলের প্রার্থী এডভোকেট আজমত উল্লাহ খান বলেন, নানা অপপ্রচার চলছে। ধূম্রজাল, অপহরণ বা নিখোঁজ এসব কিছুই নয়। তিনি দলের স্বার্থে আমাকে সমর্থন দিয়েছেন। এ জন্য তাকে ধন্যবাদ। তিনি হয়তো এ মুহূর্তে মানসিক ভাবে অস্বস্তিতে আছেন। দু’ একদিনের মধ্যেই বিষয়টি পরিষ্কার হয়ে যাবে। তিনি নির্বাচনে এসে দলের স্বার্থে, জোটের স্বার্থে ১৪ দলীয় জোটের পক্ষে কাজ করবেন। তবে জাহাঙ্গীরের মা অসুস্থ হওয়ার বিষয়টি তিনি শুনেছেন বলে স্বীকার করে বলেন, যে কোন মানুষ যে কোন সময় অসুস্থ হতে পারে। আমি নিজেও অসুস্থ হতে পারি। তিনি আরও বলেন, জাহাঙ্গীর নেতিবাচক কোন কথা বলছেন না। নির্বাচনে আমাদের শক্তিশালী ও ঐক্যবদ্ধ অবস্থান দেখেই এখন অপপ্রচারে লিপ্ত হয়েছেন।
মঙ্গলবার রাত সাড়ে ১০টার পর জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি আ ক ম মোজাম্মেল হক এমপি জানান, দলের নেতাদের সঙ্গে আলোচনার পর ১৪ দলের প্রার্থী আজমত উল্লাহ খানের সমর্থনে জাহাঙ্গীর নির্বাচনের প্রতিদ্বন্দ্বিতা থেকে সরে দাঁড়াচ্ছেন। মঙ্গলবার বিকালে টঙ্গীর নতুন বাজার এলাকার একটি অফিসে জাহাঙ্গীরের সঙ্গে বৈঠকে বসেন ছাত্রলীগের কয়েকজন সাবেক নেতা। বৈঠকে ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি লিয়াকত শিকদার, সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও নারায়ণগঞ্জ-২ আসনের এমপি নজরুল ইসলাম, সাবেক সহ-সভাপতি শাহজাদা মহিউদ্দিন ও সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক রফিক কোতোয়াল উপস্থিত ছিলেন। আধা ঘণ্টাব্যাপী বৈঠক শেষে ছাত্রলীগের নেতারা তাদের গাড়িতে তাকে তুলে নিয়ে ঢাকার উদ্দেশে রওনা হন। পরে রাতে ঢাকায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দলীয় নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেন।
বৈঠকে যোগাযোগমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, পরিবেশ ও বনমন্ত্রী হাছান মাহমুদ, স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় প্রতিমন্ত্রী জাহাঙ্গীর কবির নানক, আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আবু সাঈদ আল মাহমুদ, গাজীপুর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আ ক ম মোজাম্মেল হক ও সাধারণ সম্পাদক ১৪ দলের প্রার্থী আজমত উল্লাহসহ জেলার সিনিয়র নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন। বৈঠকে ঐক্যবদ্ধভাবে গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচন করার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত হয়। সূত্র জানায়, প্রধানমন্ত্রী এ সময় গাজীপুরের নেতাকর্মীদের দল সমর্থিত প্রার্থীর বিষয়ে ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করার নির্দেশ দেন। চার সিটি করপোরেশন নির্বাচনের ফলাফলের বিষয়টি স্মরণ করিয়ে দিয়ে স্থানীয় পর্যায়ে বিভেদ ভুলে সবাইকে একসঙ্গে কাজ করার তাগিদ দেন তিনি।
সূ্ত্র: মানবজমিন
Leave a Reply