গ্রামীণ ব্যাংকের পরিস্থিতি এবং নোবেল বিজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে সরকারের চলমান তিক্ত সম্পর্ক নিয়ে খোলামেলা কথা বললেন বহুল আলোচিত রাজনীতিক, তাত্ত্বিক নেতা সিরাজুল আলম খান। নিউ ইয়র্ক সিটির জ্যামাইকার এক রেস্টুরেন্টে ২২শে জুন সন্ধ্যায় জাসদের সাবেক নেতা-সমর্থকদের সঙ্গে একেবারেই ঘরোয়া পরিবেশে মতবিনিময়কালে তিনি বলেন, ড. মুহাম্মদ ইউনূসের আন্তর্জাতিক ইমেজ বাংলাদেশের স্বার্থে কাজে লাগানোর পরিবর্তে তাকে নানাভাবে দূরে সরিয়ে রাখা হচ্ছে।
রাজনীতিকরাও ড. ইউনূসকে যথাযথ সম্মান জানাতে দ্বিধাগ্রস্ত। নেত্রী অসন্তুষ্ট হবেন তাই অন্যরা ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে সালাম পর্যন্ত দিতে চান না। এভাবে বাংলাদেশকে পিছিয়ে দেয়া হচ্ছে। কারণ হিসেবে তিনি মনে করেন, বিদেশী সহায়তা ছাড়া বাংলাদেশের কোন উন্নয়ন সম্ভব নয়। আর এজন্যই ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কানেকশন ভীষণ প্রয়োজন। এ সভায় সাংবাদিকের উপস্থিতি জেনে ক্ষুব্ধ হয়েছিলেন সিরাজুল আলম খান।
মুক্তিযুদ্ধের নিউক্লিয়াসের সদস্য, নিভৃতচারী এ রাজনীতিক চিকিৎসাসহ ব্যক্তিগত প্রয়োজনে সমপ্রতি নিউ ইয়র্কে এসেছেন। ২৯শে জুন তার দেশে ফেরার কথা। ‘ড. ইউনূসকে যারা সম্মান দিতে জানে না তারা নিজের দেশকেও সম্মান করতে জানে না এবং দেশের সার্বিক কল্যাণ চায় না। কারণ, বিদেশী সহযোগিতা ছাড়া আমাদের দেশের অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি লাভ করা অনেকটাই দুরূহ এবং বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ে উন্নতি করতে হলে বিদেশীদেরই প্রয়োজন। আর এই বিদেশীরাই ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে সম্মানে ভূষিত করেছেন।’ এসব মন্তব্য করেন সিরাজুল আলম খান।
তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ নিয়ে যিনি গভীরভাবে চিন্তা করেন তিনি আর কেউ নন, তার নাম ড. মুহাম্মদ ইউনূস। তার নোবেল প্রাপ্তিতে বিশ্ব দরবারে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি মহিমান্বিত হয়েছে। স্বাধীনতার পর এ বিরল অর্জন বাংলাদেশের জন্য একটি মাইলফলক ও মর্যাদাপূর্ণ।’ তিনি বলেন, ‘ড. ইউনূসকে মর্যাদার আসনে বসাতে আমার দেশের রাজনৈতিক নেতারা দ্বিধাবিভক্ত। নিঃসন্দেহে বিষয়টি জাতির জন্য মঙ্গলজনক নয়।’ তিনি বলেন, ‘আজ দেশের রাজনীতি হিংসাত্মক পর্যায়ে পৌঁছেছে। এ থেকে উত্তরণের জন্য সব ব্যবস্থাকে আবার ঢেলে সাজাতে হবে। পাকিস্তান আমলের আইন দিয়ে অফিস-আদালতের কার্যক্রম এখনও চলছে। আর এজন্য দায়ী আমরা এবং রাজনৈতিক নেতারা। সর্বস্তরের জনগণের উচিত আমাদের সায়েস্তা করা। তাহলে হয়তো আমাদের হুঁশ হবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের দেশের লোকজন অনেক কিছু বোঝে না। তারা না বুঝেও বোঝার ভাব নেয়। এ কারণেও আমাদের দেশ পিছিয়ে যাচ্ছে। এর জন্য উপযুক্ত শিক্ষা প্রয়োজন। দেশী ও বিদেশী রাজনৈতিক ও সামাজিক বিষয়ে জ্ঞান রাখা দরকার। বেশির ভাগ মানুষ বিলাসিতায় মগ্ন। তারা দেশের গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে উদাসীন। এ জন্য পরিবারের কর্তা ব্যক্তিকেই উদ্যোগী হতে হবে। পরিবারের কর্তারা যদি সন্তানকে উপযুক্ত শিক্ষা না দেন তাহলে মৌলবাদী গোষ্ঠী আমাদের দেশ দখল করে নেবে এবং তাদের নির্দেশ অনুসারে আমাদের চলতে হবে।’ এ মতবিনিময় সভার অন্যতম সংগঠক ছিলেন মুজিবর রহমান, মতিউর রহমান ও আলহাজ লিটন।
Leave a Reply