শীর্ষবিন্দু আন্তর্জাতিক নিউজ ডেস্ক: বৃটিশ বহুজাতিক কোম্পানি মার্কস অ্যান্ড স্পেন্সারের (এমঅ্যান্ডএস) জন্য পোশাক তৈরিতে নিয়োজিত বাংলাদেশ, ভারত ও শ্রীলঙ্কার পোশাক শ্রমিকদের ন্যায্য মজুরি দেয়া হচ্ছে না। শ্রমিক অধিকারবিষয়ক সংগঠন লেবার বিহাইন্ড দ্য লেবেলের এক প্রতিবেদনে এই চিত্র উঠে এসেছে। এ খবর জানিয়েছে বৃটিশ দৈনিক গার্ডিয়ান।
ব্রিটিশ জার্নালের একই প্রতিবেদনে বলা হয়, ছয় বছর আগে প্রতিষ্ঠানটি এসব শ্রমিককে বেঁচে থাকার জন্য ন্যূনতম মজুরি প্রদানের প্রতিশ্রুতি দিলেও তা বাস্তবায়ন হয়নি এখনও। বৃটিশ চেইন কোম্পানিটির ‘প্ল্যানে পরিবেশ ও সামাজিক নীতি’র অধীনে কোম্পানি প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল, এশিয়ার তিন দেশে (বাংলাদেশ, ভারত ও শ্রীলঙ্কা) তাদের পোশাক তৈরিতে নিয়োজিত শ্রমিকদের যেন সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানগুলো ন্যায্য মজুরি দেয়, তা নিশ্চিত করতে একটি প্রক্রিয়া বাস্তবায়ন করবে।
এমঅ্যান্ডএস জানিয়েছিল, ২০১৫ সালেই তাদের এই লক্ষ্য অর্জিত হয়েছে। তবে লেবার বিহাইন্ড দ্য লেবেলের প্রতিবেদনে উঠে এসেছে ভিন্ন চিত্র। এতে বলা হয়েছে, শ্রীলঙ্কার তিনটি, ভারতের তিনটি ও বাংলাদেশের দুইটি কারখানায় শ্রমিকদের যে মজুরি প্রদান করা হচ্ছে, তা মানসম্মতভাবে বেঁচে থাকার জন্য প্রয়োজনীয় মজুরির তুলনায় অনেক কম। শ্রীলঙ্কায় এসব শ্রমিকের মাসে গড় মূল বেতনের পরিমাণ ১৩,৫০০ শ্রীলঙ্কান রুপি। কিন্তু তাদের জন্য প্রয়োজন মাসে ৩৩,০০০ শ্রীলঙ্কান রুপি।
লেবার বিহাইন্ড দ্য লেবেলের প্রতিবেদন তৈরির সময় যেসব শ্রমিকের সঙ্গে কথা বলা হয়েছে, তাদের বেশিরভাগই একটি ঘরে একাধিক জন করে থাকেন। অনেকেই টিনের চাল দেয়া বাড়িতে থাকেন, যেখানে পানির সুব্যবস্থা নেই। অন্যদিকে ভারতের এসব শ্রমিকের মাসে গড় বেতন ৬,২৮৪ রুপি।
কিন্তু এই শ্রমিকদের স্বচ্ছন্দ্যে বেঁচে থাকার জন্য প্রয়োজন এর প্রায় দ্বিগুণ বেতন। শ্রমিকদের বেশিরভাগই জানিয়েছে, তারা যে বেতন পায় তা দিয়ে খাদ্য ও শিক্ষার খরচ মেটানো খুব কষ্টকর হয়ে যায়। এসব শ্রমিকের বেশিরভাগ পরিবারকেই অন্য পরিবারের সঙ্গে টয়লেট ও ট্যাপের পানি ভাগাভাগি করতে হয়। বাংলাদেশে গবেষকরা অল্পসংখ্যক শ্রমিকের সঙ্গে কথা বলেছেন এবং তাদের প্রত্যেকেই থাকে বস্তিতে। ঘণ্টার পর ঘণ্টা ওভারটাইম করা সত্ত্বেও মাসে তাদের সর্বোচ্চ আয় ৮,০০০ টাকা। অথচ স্বচ্ছন্দ্যে জীবিকা নির্বাহের জন্য তাদের প্রয়োজন ১৫,০০০ টাকা।
লেবার বিহাইন্ড দ্য লেবেলের একজন প্রচারণাকারী অ্যানা ম্যাকমুলেন বলেন, প্রতিশ্রুতি সত্ত্বেও এমঅ্যান্ডএস শ্রমিকদের জীবনধারায় কোনো পরিবর্তন আনতে সক্ষম হয়নি। এতে তিনি অত্যন্ত হতাশ ও ক্ষুব্ধ। তিনি আরও বলেন, মার্কস অ্যান্ড স্পেন্সার অসাধারণ কিছু অর্জন করেছে বলেই সবাই প্রতিষ্ঠানটির প্রশংসা করছিল। কিন্তু আমরা যাচাই করতে গিয়ে দেখেছি, আদতে কোনো প্রভাব পড়েনি।’ সাপ্লাই চেইন নিয়ে আরও স্বচ্ছ হতে এমঅ্যান্ডএসের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন ম্যাকমুলেন যেন শ্রমিক অধিকার গ্রুপগুলো তা পর্যবেক্ষণ করতে পারে এবং পরিস্থিতি উন্নয়নে প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে কাজ করতে পারে।
মার্কস অ্যান্ড স্পেন্সার বলছে, তাদের জানা মতে সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানগুলোকে যে মূল্য তারা দিচ্ছে তা বাংলাদেশ, ভারত ও শ্রীলঙ্কায় জীবনধারণের উপযুক্ত ব্যয় নির্বাহ নিশ্চিত করার জন্য পর্যাপ্ত। এটা কারখানাগুলোকে আরও দক্ষ হতেও সহায়তা করেছে।
ফলে তারা কর্মীদের আরও বেশি অর্থ দিতে পারে। সাড়ে সাত লাখেরও বেশি শ্রমিককে অর্থবিষয়ক সাক্ষরতা, শ্রমিক অধিকার ও স্বাস্থ্যসেবায় প্রশিক্ষিত করা হয়েছে। এটা নিজেদের পাওনা দাবি করার ক্ষেত্রে তাদের আরও আত্মবিশ্বাস জুগিয়েছে।
মার্কস অ্যান্ড স্পেন্সারের এক মুখপাত্র বলেন, আমাদের পোশাক সাপ্লাই চেইনে কর্মপরিবেশ আরও উন্নত করতে আমরা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। আর ২০১০ সাল থেকে আমাদের কাজ উল্লেখযোগ্য পার্থক্য গড়ে দিয়েছে। উদাহরণস্বরূপ, বাংলাদেশে আমাদের সরবরাহকারী কারখানাগুলোর গড় মজুরি বর্তমান ন্যূনতম মজুরি থেকে ৬০ শতাংশ বেশি।
তিনি আরও বলেন, পোশাক সাপ্লাই চেইনের জটিল প্রকৃতির কারণে সবসময়ই আরও বেশি কিছু করার থাকে। আর আমরা সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানের কর্মীদের মজুরি নির্ধারণ করতে পারি না। তবে, ন্যায্য মজুরি দেয়ার জন্য আমাদের উৎপাদন খরচ যথেষ্ট বেশি রাখার বিষয়টি নিশ্চিত করতে, শ্রমিকদের অর্র্থ সংক্রান্ত শিক্ষা ও অধিকার নিয়ে প্রশিক্ষণ দিতে এবং এ খাতের উন্নতির জন্য অন্যান্য ব্র্যান্ড এবং সরকারের সঙ্গে সমন্বয়মূলক কাজে আমাদের ভূমিকা পালন করতে আমরা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।’