শীর্ষবিন্দু নিউজ: রাষ্টীয় পতাকা বহনকারী বিমান সংস্থা বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের দুর্নীতির পরিমাণ পাহাড় সমান। আর দেরীতে হলেও বিভিন্ন ক্ষেত্রে দুর্নীতির ঘটনা তদন্তে নতুন করে অনুসন্ধান শুরু করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। দুর্নীতিসংক্রান্ত সব ফাইল ও নথিপত্র তলব করে বাংলাদেশ বিমানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক(এমডি) কেভিন স্টিলকে এরই মধ্যে চিঠি দিয়েছে দুদকের অনুসন্ধান টিম। চলতি মাসের যে কোনো দিন তাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য নোটিশ পাঠানো হবে।
দুদকের দায়িত্বশীল সূত্র মতে, সাবেক এমডি ক্যাপ্টেন মোসাদ্দেক আহম্মেদকেও শিগগিরই নোটিশ পাঠাবে দুদকের অনুসন্ধান টিম। দুর্নীতিতে জড়িত বলে সন্দেহভাজন প্রায় একডজন ঊর্ধ্বতন বিমান কর্মকর্তাকেও মুখোমুখি হতে হবে দুদকের। দুদকের প্রধান কার্যালয়ে বা তারই কার্যালয়ে বিমানের বিভিন্ন অনিয়ম ও দুর্নীতির বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করবে অনুসন্ধান দল।
দুদক সূত্রে জানা গেছে, বিমানের মালামাল ও এয়ার ক্রাফটের স্পেয়ার পার্টস কেনাকাটা নিয়ে শত শত কোটি টাকা দুর্নীতি হয়েছে। তাছাড়া অতিরিক্ত মালামাল ক্রয় করে সেগুলো গোডাউনে নষ্ট করেও বিমানের কোটি কোটি টাকা আর্থিক ক্ষতি করা হয়েছে। সম্প্রতি অ্যালুমিনিয়াম ক্যাসারল ক্রয় নিয়েও এক কোটি টাকার অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। জেদ্দা স্টেশনের জিএসএ নিয়োগ নিয়েও বিমানের এক পরিচালক, একজন জিএম, একজন ম্যানেজার ও একজন বোর্ড মেম্বারের বিরুদ্ধে কয়েক কোটি টাকার বেশি কমিশন বাণিজ্যের অভিযোগ আছে। বিমানের দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা-কর্মচারীদের একটি তালিকা তৈরি করেছে দুদক। এই তালিকায় ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ও কমপক্ষে ১০ জন সিবিএ নেতাসহ প্রায় ৩০ জনের নাম রয়েছে। এসব তালিকা থেকে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের জিজ্ঞাসাবাদের জন্য চলতি মাসে নোটিশ পাঠাবে দুদক।
সংশ্লিষ্ট সূত্রমতে, গত ১ জুলাই কেভিন স্টিলকে পাঠানো চিঠিতে দুর্নীতি সংক্রান্ত ফাইল অনুসন্ধান টিমকে দ্রুত দিতে বলেছে দুদক। দুদকের নথি তলবের চিঠির খবর বিমানে পৌঁছানের পর দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে আতঙ্ক দেখা দিয়েছে। দুদকের অনুসন্ধান ও তদন্ত-৩-এর উপ-পরিচালক মোনায়েম হোসেনকে বিমানে দুর্নীতি তদন্তের দায়িত্ব দিয়েছে কমিশন। তার নেতৃত্বে একটি টিম দুর্নীতির আখড়া হিসেবে পরিচিত বিমান সেক্টরের দুর্নীতির অনুসন্ধান শুরু করেছে। চলতি মাসে এ ঘটনায় কয়েকজনকে জিজ্ঞাসাবাদের প্রস্তুতিও নিয়েছে টিম।
জানা গেছে, শিগগিরই এ সেক্টরে দুর্নীতির ঘটনা অনুসন্ধানে মাঠ পর্যায়ে অভিযান চালাবে দুদক দল। এ প্রসঙ্গে গঠিত অনুসন্ধান কমিটির প্রধান মোনায়েম হোসেন বলেন, রেকর্ডপত্র দিতে বিমানের বর্তমান এমডিকে এরই মধ্যে চিঠি দেওয়া হয়েছে। রেকর্ডপত্রে যাদের বিরুদ্ধে অনিয়ম দুর্নীতির অভিযোগ থাকবে তাদের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তিনি জানান, প্রথম দফায় বিমানের সাবেক এমডি ক্যাপ্টেন মোসাদ্দেক আহম্মেদের বিরুদ্ধে জেনারেল ম্যানেজার জেলা বিক্রয় থাকাকালে (২০০৬ সালে) গ্রিনল্যান্ড ট্রাভেলস নামের এক ট্রাভেল এজেন্টকে টিকিট বিক্রির আড়াই কোটি টাকা আত্মসাতে সহায়তা করার ঘটনাটি তদন্ত করবে দুদক।
গ্রিনল্যান্ড ট্রাভেল এজেন্টের কাছে বেআইনিভাবে ব্যাংক গ্যারান্টির বিপরীতে যে আড়াই কোটি টাকার টিকিট বিক্রি করা হয়েছে সে সংক্রান্ত সব ধরনের ডকুমেন্ট তলব করা হয়েছে দুদকের চিঠিতে। এই বিক্রিতে কারা জড়িত তাদের নামও চাওয়া হয়েছে। টিকিট বিক্রির টাকা বিমানকে পরিশোধ না করা সংক্রান্ত অডিট বা তদন্ত প্রতিবেদন এবং উল্লিখিত বিষয় নিয়ে বিমানের পক্ষ থেকে কী ধরনের পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে সে সংক্রান্ত সব তথ্য-উপাত্ত দুদকে জমা দেওয়ার জন্য বলা হয়েছে। বিমানে দুর্নীতির ঘটনা অনুসন্ধান করতে গিয়ে কয়েকটি দুর্নীতির জায়গা চিহ্নিত করেছে দুদক। এগুলোর মধ্যে রয়েছে- বৈদেশিক স্টেশনে নিয়োগ, বিমানের স্পেয়ার পার্টস ও মালামাল কেনাকাটা, উড়োজাহাজ মেরামত, উড়োজাহাজ ওভারহোলিং, ওভারহোলিং এজেন্ট নিয়োগ, জিএসএ নিয়োগ, পাইলট ও কেভিন ক্রু নিয়োগ, জ্বালানি তেল ক্রয়, ট্রেনিং, অনলাইন টিকিট বিক্রি, যানবাহন ভাড়া, কার্গো হ্যান্ডেলিং, গ্রাউন্ড হান্ডেলিংয়ের ইকুইপমেন্ট ক্রয়, ওভারটাইম।
Leave a Reply